‘রাজ্য সরকারের নামে একের পর এক মিথ্যে কথা বললে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো পদে থেকেও ভুল তথ্য দিলে আমরা প্রতিবাদ করব। বাংলার মানুষও প্রতিবাদ করবে।’ শনিবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে বিজেপির সভার পর ঠিক এই ভাষাতেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এবার অমিত শাহর করা অভিযোগের পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। টুইটারে ফ্যাক্ট চেক প্রকাশ করে মোট ১৫টি আলাদা আলাদা পয়েন্টে তিনি দাবি করলেন, শাহর কথা বেশিরভাগই মিথ্যা। তাঁর সাফ কথা, রাজ্যে এসে মোট ৭টি মিথ্যে বলেছেন অমিত শাহ।
অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছিলেন। এখন অন্যদের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আগেই সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলবদল করেননি, কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আলাদা দল তৈরি করেছিলেন। ডেরেকও সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে অন্য কোনও দলে যোগ দেননি। কংগ্রেস ছেড়ে তিনি ১৯৯৮ সালে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন।
শাহর দাবি ছিল, আয়ূষ্মান ভারতের কোনও সুবিধে বাংলার মানুষকে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে ডেরেকের মন্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের দু’বছর আগে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পে রাজ্যের ১.৪ কোটি পরিবার বিমার সুবিধে পেয়েছেন। ওইসব পরিবার বছরে পেয়েছে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা। শাহ দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধির ৬ হাজার টাকা পাওয়া থেকে রাজ্যের মানুষ বঞ্চিত। ডেরেকের জবাব, কিষান বন্ধু প্রকল্পে রাজ্য সরকার প্রতি একর জমিতে রাজ্যের চাষিরা পেয়েছেন ৫ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে প্রতি একর জমিতে চাষিদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ১,২১৪ টাকা।
শাহের দাবি ছিল, গত দেড় বছরে রাজ্যে খুন হয়েছেন ৩০০ বিজেপি সমর্থক। এ প্রসঙ্গে ডেরেক লিখেছেন, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে গত দেড় বছরে বেশিরভাগ বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কেউ আত্মহত্যা করলে তাকে খুন বলে চালানো হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে থেকে এখনও পর্যন্ত ১০২৭ তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। আবার শাহ বলেছিলেন, বাংলার মানুষের জন্য মোদীর পাঠানো খাদ্যশষ্য নয়ছয় করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। ডেরেক জানিয়েছেন, রাজ্যের খাদ্য সাথী প্রকল্পে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১০ কোটি মানুষকে ফ্রিতে রেশন দেওয়া হয়েছে।
শাহর অভিযোগ ছিল, বাংলায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। ডেরেক জানিয়ে দেন, জে পি নাড্ডার জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম ভেঙে তিনি তাঁর কনভয়ে গাড়ি সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। শাহ এমনও দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহু গরিব মানুষকে ঘর দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ডেরেক স্পষ্ট করে দেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ ও রাজ্য সরকার দেয় ৪০ শতাংশ খরচ। ২০১১-২০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র রাজ্য সরকার তৈরি করেছে ৩৩,৮৭,০০০ ঘর। এতে খরচ হয়েছে ৩৯,৯৯৩ কোটি টাকা। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ৩,৯০,০০০ ঘর তৈরি করেছে রাজ্য। খরচ হয়েছে ৩৫৫০ কোটি টাকা।