একুশে বিধানসভা নির্বাচন বাংলায়। আর ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই যেন বাংলা ও বাঙালি প্রীতি বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গেরুয়া শিবিরের। অহরহ বাংলার মনীষীদের উল্লেখ ও উদ্ধৃত করতে দেখা যাচ্ছে মোদী এবং বিজেপি নেতাদের। তবে এবার যে ‘গিমিক’ করতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে, তা দেখে কপালে চোখ উঠেছে সকলের। দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠকের মধ্যে নাকি চলে এল দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ির ছবি! হ্যাঁ, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকের সময় মোদীর তাঁর পিছনে পর্দায় আগাগোড়া দেখা গেল দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের ছবি!
কূটনৈতিক শিবির উজবেকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রামকৃষ্ণের কোনও যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছে না। সাধারণ ভাবে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে (যে ধরনের বৈঠকের রেওয়াজ শুরু হয়েছে অতিমারির পরে) সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রনেতাদের পিছনে থাকে জাতীয় পতাকার ছবি। বিদেশ মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনেও এমনটাই দস্তুর। কিন্তু সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিলেন মোদী।
প্রশ্ন উঠছে, বাংলার ভোট কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে তিনি যে মঞ্চই পাচ্ছেন সেখান থেকেই বাংলাকে তুলে ধরছেন? উল্লেখ্য, আত্মনির্ভর ভারতের ক্ষেত্রে ঋষি অরবিন্দ, স্বদেশি পণ্যের প্রতি নির্ভরতার প্রশ্নে কবি মনমোহন বসু, ভারতমাতার আরাধনায় স্বামী বিবেকানন্দ এবং যত্রতত্র রবীন্দ্রনাথের উল্লেখ মোদীর মুখে শোনা যাচ্ছে। এবারে সেই তালিকায় যুক্ত হল বাঙালির আবেগ এবং ভক্তির দক্ষিণেশ্বরও।
দমদমের সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা সৌগত রায় গোটা ঘটনাটিকে ‘হাস্যকর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘দক্ষিণেশ্বর সবার শ্রদ্ধার জায়গা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেটা করছেন সেটা হাস্যকর। বাংলার নির্বাচনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলটাও ভুলে যাচ্ছেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাষ্ট্রনেতার পিছনে দেশের পতাকা থাকাটাই রেওয়াজ।’ সৌগতর সাফ কথা, ‘এসব করে কিছু হবে না। বাংলার ভোটের লড়াইটা বাঙালি বনাম বাহারিদের মধ্যে। বাহারি অর্থাৎ বহিরাগতদের কোনও জায়গা এখানে নেই। প্রধানমন্ত্রী মরিয়া চেষ্টা করতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারাচ্ছেন।’