দেশজুড়ে করোনা টিকাপ্রয়োগের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। তবে এবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের টিকাকরণ সংক্রান্ত রূপরেখা নিয়ে শুরু হল বিতর্ক। ভোটগ্রহণের আদলে সরবরাহ করা হবে টিকা। সেই প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টিকা পেতে ভোটার তালিকায় নাম থাকাটা আবশ্যক। টিকা সরবরাহের যে নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশ করেছে, তার মূল বক্তব্য অনেকটা এমনই। যার পরিপ্রেক্ষিতেই তৈরি হয়েছে চাপানউতোর।
কোভিডের টিকাপ্রদান নিয়ে হালেই ১১৩ পাতার একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন্স অপারেশনাল গাইডলাইন্স’ নামে সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চিকিৎসক- নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, হোমগার্ড, পুরকর্মী, অসামরিক প্রতিরক্ষা, বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্য এবং ৫০ বছরের উপরে যাঁদের বয়স, তাঁরাই টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। লোকসভা এবং বিধানসভার সাম্প্রতিক ভোটার তালিকা দেখে পঞ্চাশোর্ধ্বদের নাম চিহ্নিত করা হবে। অর্থাৎ টিকা পেতে ভোটার তালিকায় নাম থাকা কার্যত বাধ্যতামূলক। এখানেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক ও প্রশ্নচিহ্ন।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী পুণ্যব্রত গুণ জানান, “প্রথমত, টিকা পরীক্ষার সবক’টি ধাপ চিকিৎসা বিজ্ঞান মেনে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাজারে ভ্যাকসিন আসা নিয়েই আমার আপত্তি আছে। ভ্যাকসিন তখনই দেওয়া উচিত যখন তার কার্যকারিতা প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত দেশের প্রতিটি নাগরিক ভ্যাকসিন পাওয়ার অধিকারী। ভোটার তালিকাকে মাপকাঠি করতে গিয়ে সেটি ভুললে চলবে না। কাউকে ফেরানো যায় না।” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশও এও বলেছেন যে, টিকা পাওয়ার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ পঞ্চাশোর্ধ্ব এমন অনেক ব্যক্তিই রয়েছেন যাঁদের ভোটার কার্ড বা তালিকায় নাম নেই। তাহলে কি তাঁরা টিকা পাবেন না ? ভ্যাকসিন বণ্টন সংক্রান্ত একাধিক আলোচনা সভায় টিকা সরবরাহে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করার জন্য পুর-পঞ্চায়েত এলাকায় সমীক্ষা করানোর কথা বলে আসছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি এলাকায় করোনার নিরিখে কো-মর্বিডিটি যুক্ত কতজন বয়স্ক মানুষকে টিকা দেওয়া আবশ্যক, এ ধরনের সমীক্ষা তা জানতে সাহায্য করবে। কলকাতা পুর এলাকায় ইতিমধ্যে এ ধরনের একটি সমীক্ষা করা হচ্ছে। এধরনের সমীক্ষা আরও সুষ্ঠুভাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমনটাই দাবি তাঁদের।
চিকিৎসক কুণাল সরকার এপ্রসঙ্গে বলেন, “এখনও কত ভ্যাকসিন ডোজ আমরা পেতে চলেছি সেটাই স্পষ্ট নয়। সে সব স্পষ্ট না করে ভোটার তালিকাকে মাপকাঠি করে এ ধরনের রূপরেখা অমূলক।” প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় টিকাবণ্টন প্রক্রিয়াকে একেবারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেঁধে ফেলা হয়েছে। টিকা বণ্টন প্রক্রিয়া যে একেবারে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার মতো হবে, সে কথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকায় লেখাও রয়েছে। সেই সূত্রেই এর কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনও। “টিকা প্রদানের জন্য ভোটার তালিকা কখনোই মাপকাঠি হতে পারে না। এমনিতে সারা বছর যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলে, তা সকলের জন্য বলেই এতদিন জেনে এসেছি। কোভিড ভ্যাকসিন বণ্টন নিয়ে প্রথম থেকেই ধোঁয়াশা রয়েছে। যা চলছে তাতে করোনার মতো জীবনদায়ী প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতির বাইরে কিছুই ভাবতে পারছে না।” জানিয়েছেন শান্তনু।