একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একেই দলের অন্দরে চলা গোষ্ঠীদ্বন্দে দিশেহারা বঙ্গ বিজেপি ব্রিগেড। তার ওপর এবার নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার দাবিতে বিজেপির অন্দরে চাপ তৈরি করছেন দলের মতুয়া নেতারা। সম্ভবত তাঁদের ক্ষোভের বিষয়টি মাথায় রেখেই রবিবার রোড রোডে ভরা জনসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায় দাবি করেন, জানুয়ারি মাসেই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মতুয়া প্রভাবিত বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, এ রকম কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই। এমনকী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, তাঁরও এই বিষয়ে কিছু জানা নেই।
যদিও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দলের রাজ্য সভাপতির অজানা থাকার কথা নয়। নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা নিয়ে দলের মধ্যে সক্রিয়, রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারেরও বক্তব্য, ‘আমার কাছে এমন কোনও তথ্য নেই। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা যখন বলেছেন, তা হলে হয়তো হবে।’ তৃণমূলের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়াদের বিভ্রান্ত করতেই জানুয়ারি মাসে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছেন কৈলাসরা। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার চেষ্টা হলে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে কেন্দ্রকে।’
হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল এই রাজ্যে গত লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু নয়া নাগরিকত্ব আইন তৈরি হওয়ার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছে। অথচ একজন উদ্বাস্তুকেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় দলীয় নেতাদের অনেকেই এই নিয়ে ক্ষুব্ধ। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার দলীয় বৈঠকে একাধিক বার নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে ঢিলেমি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
ওই আইন কবে থেকে কার্যকর হবে, তা জানতে চেয়ে শান্তনু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেও জবাব পাননি। এই পরিস্থিতিতে রবিবার আম্বেদকরের মৃত্যুদিন উপলক্ষে রেড রোডে দলীয় সভায় মুকুল বলেন, ‘ক’দিন আগে শান্তনু আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বললাম, ধৈর্য ধরো।’ তাঁর কথায়, ‘জানুয়ারি মাসেই নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।’ একই দাবি বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। তবে সৌগতর দাবি, ‘উদ্বাস্তু সমাজের কাছে বিজেপির মুখোশ খুলে যাচ্ছে। তাই, এখন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ওদের ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন কৈলাসরা।’ তাঁর মতে, নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। ফলে কৈলাস বা মুকুলের এ সব কথা বলার কোনও এক্তিয়ারই নেই।