কেউ ভ্যানগাড়িতে হেল্পারি করে, কেউ প্রোমোটারের অফিসে ফাই-ফরমাশ খাটে। কেউ আবার অ্যালুমিনিয়ামের দরজা তৈরির কারখানায় কাজ করে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যান। এমনভাবেই চলত পনেরো জনের সেই যৌথ সংসার। করোনা এসে ওই পনেরো জনের জীবনটাকে একেবারে চিঁড়েচ্যাপ্টা করে ছেড়ে দিয়েছে। লকডাউনে পরিবারের পাঁচ রোজগেরে সদস্যের তিনজন কাজ হারিয়ে বেকার। এই অবস্থাতেই বাড়ির ছোট মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়।
কিছুদিন আগে পাত্রপক্ষের মনে ধরেছিল কন্যাটিকে। আচমকা নির্দিষ্ট করে ফেলা হয় বিয়ের দিন। রবিবার সন্ধেয় চার হাত এক হল বিধাননগরের উত্তর নারায়ণপুরের সালমা খাতুন ও খড়িবাড়ির লাঙলপোতার সাইদ আলির। বিয়ের পাকা হওয়ার ঘটনায় একইসঙ্গে আনন্দ ও দুশ্চিন্তা গ্রাস করে ফেলেছিল গোটা পরিবারকে। এই সময়েই তাঁদের কানে আসে ‘দুয়ারে সরকার’-এর খবর। জানতে পারেন ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের কথাও। বৃহস্পতিবার সালমার পাশের পাড়া দক্ষিণ নারায়ণপুরে বসার কথা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প।
সেখানে বিধাননগর পুরনিগমের প্রশাসনিক উপপ্রধান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গিয়ে নিজেদের দুরবস্থার কথা জানান সেই দুঃস্থ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ক্যাম্পে থাকা আধিকারিকরা রূপশ্রীর জন্য বিয়ের ৩০ থেকে ৬০ দিন আগে প্রকল্পের আবেদন জানানোর নিয়মের কষ্ট জানান। সালমার ক্ষেত্রে আবেদনের তিনদিনের মাথায় বিয়ে। ফলে প্রকল্পের সুবিধা পেতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানানো হয় পরিবারটিকে। এরপর তাপসবাবু এই বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখার জন্য অনুরোধ জানান আধিকারিকদের। এই ঘটনার খবর পৌঁছয় বিধাননগর পুরনিগমের প্রশাসনিক প্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে। তিনিও উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেন।
যার ফলশ্রুতিতে চটজলদি নাম নথিভুক্ত করা হয় সালমার। শুরু হয় বাদবাকি কাজকর্ম। এরপর রূপশ্রী মঞ্জুর হওয়ার খবরও চলে আসে সরকারি দফতর থেকে। এখন সালমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা ঢুকে যাওয়া স্রেফ কিছু সময়ের অপেক্ষা। ফলে পনেরোটি শুকনো মুখে শনিবার থেকে হাসি ফুটেছে। বিয়েবাড়িতে চেপেছিল বিরিয়ানির হাঁড়ি। স্থানীয় দোকানে রসগোল্লার অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। পাত্রপক্ষ-সহ বাকি একশো নিমন্ত্রিতকে খালি মুখে ফিরে যেতে হয়নি অনুষ্ঠানবাড়ি থেকেও। বিয়ের আসনে বসা সালমা বলেছে, “পুরো বিষয়টা অনেকটা স্বপ্নের মতো। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা নেই।”