জাতীয় দল থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবসর নেওয়ার পরে রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচ ফিনিশের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। তবে সমস্ত উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে রবিবার সিডনিতে ভারত পেয়ে গেল পরিণত এক যোদ্ধাকে। তার নাম হার্দিক পাণ্ড্য। তাঁর ২২ বলে ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে টি-২০ সিরিজ জিতে নিল ভারত। মঙ্গলবার তৃতীয় ম্যাচে স্টিভ স্মিথদের হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও তুলে দিল বিরাট কোহলির হাতে।
অস্ট্রেলিয়ার করা ১৯৪ রানের জবাবে ভারতীয় ওপেনারেরা প্রথম ১৬টি বলে অস্বস্তিতে ছিল। গতি পরিবর্তন হয় অ্যান্ড্রু টাইয়ের ‘নো-বল’ থেকে। ম্যাচের প্রথম ফ্রি-হিট মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয় কে এল রাহুল। পরের ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে আক্রমণ করে ১৯ রান তোলে ভারত। পঞ্চম ওভারে শন অ্যাবট ভারতের রানের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। ষষ্ঠ ওভারে রাহুল ফিরে গেলেও শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত তৈরি করে দেয় ও। ‘চেজমাস্টার’ বিরাট কোহলির কাছে যা ছিল আদর্শ মঞ্চ।
এই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচের হাল ধরার চেষ্টা করে ধাওয়ান ও বিরাট। কিন্তু দুই লেগস্পিনার- মিচেল সোয়েপসন ও অ্যাডাম জাম্পার নিয়ন্ত্রিত বোলিং অধৈর্য করে তোলে ধওয়নকে। প্রথম ছয় ওভারে ভারত করে ৬৪ রান। পরের পাঁচ ওভারে হয় ৩১। জাম্পার বলে স্লগ সুইপে ব্যর্থ হয়ে ধাওয়ান ফিরতেই পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে ভারতের পক্ষে। তখন সঞ্জু স্যামসনকে নামিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিল ভারত। সঞ্জু কিন্তু ব্যর্থ নয়। ওর ১০ বলে ১৫ রানের ইনিংস গিয়ার পাল্টাতে সাহায্য করে বিরাটকে।
১৪তম ওভারে ১২০ রানে তিন উইকেট হারানোর পর থেকেই শুরু হয় আসল পরীক্ষা। এই সময়েই ভারতীয় সমর্থকদের মনে হচ্ছিল, যদি ধোনির মতো কেউ থাকত, এই ম্যাচ অনায়াসে জিতত ভারত। কিন্তু আমরা সেখানে দেখলাম নতুন ফিনিশারের উত্থান। বিরাটও নিজের কপিবুক ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে এসে স্কুপের সাহায্যে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেয় টাইয়ের বল। কিন্তু ড্যানিয়েল স্যামসের স্লোয়ার বাউন্সার বিরাটের ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের কাছে যেতেই ফের থমথমে হয়ে যায় ভারতীয় ড্রেসিংরুম।
হার্দিকের উপরে তখন পাহাড়-সমান চাপ। প্রথমত, সিরিজ জেতার লড়াই। দ্বিতীয়ত, নিজেকে ফিনিশার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরীক্ষা। শেষ তিন ওভারে ৩৭ রান তো সহজ নয়। জাম্পার ওভারে মিডউইকেটের উপর দিয়ে মারা শ্রেয়সের ছয় ভারতকে ম্যাচে ফেরায়। একই ওভারে পয়েন্টের পাশ দিয়ে শ্রেয়সের স্কোয়ার কাট জেতার বিশ্বাস তৈরি করে হার্দিকের মধ্যেও। ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে কোনও বাউন্ডারি না হওয়ার পরে ব্যাট বদলায় হার্দিক।
নতুন ব্যাট দিয়ে পরের তিন বলে তোলে ৯ রান। শেষ ওভারে ১৪ রান যেন ছিল সময়ের অপেক্ষা। হার্দিকের মধ্যে তখন ধোনির উত্তরসূরি হয়ে ওঠার তাগিদ। একটি ছয় আছড়ে পড়ল লংঅন অঞ্চলে। দ্বিতীয় ছয় মিডউইকেট গ্যালারিতে। এ ভাবেই ছয় মেরে ম্যাচ জেতানো অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন এক কিংবদন্তি। সেই পথে এক ধাপ এগোল হার্দিকও। এখন দেখার মাহির মত হার্দিকও নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে কিনা।