ভর্তি হওয়া রোগীর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এলেই তড়িঘড়ি বিদায় করছে শহরের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল। এমন অভিযোগ বেশ কয়েকমাস ধরেই মিলছে। হাসপাতালগুলির এমন ব্যবহারে প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। এমন ঘটনার সম্মুখীন একাধিক রোগীর পরিবারের অভিযোগ, ভর্তি হওয়ার আগেই কার্যত মুচলেকা লিখিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল- “করোনা হলে আর রাখা হবে না।” তার ফলে শেষ মুহূর্তে মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে বিপদে পড়ছে পরিবার। যখন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, যেইসময় তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন, তখন সেই মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে নতুন হাসপাতাল খুঁজতে হচ্ছে পরিবারগুলিকে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড, নন কোভিড বিভাজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার জানিয়েছেন কেউ কোনও কোভিড রোগী ফিরিয়ে দিতে পারবে না। অতিমারি আবহে কিছু বেসরকারি হাসপাতালের বেড সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে নন কোভিড হাসপাতাল বলে কিছু নেই। সম্প্রতি রোগীর পরিবারের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে স্বাস্থ্য কমিশনের কোপে কলকাতার রাজা অপূর্ব কৃষ্ণ লেনের বিনায়ক হাসপাতাল। সূত্রের খবর, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ের শেষে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী সুভাষচন্দ্র কোনার। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। সুভাষবাবুর কন্যা সম্রাজ্ঞীর অভিযোগ, বাবার শরীর অসুস্থ ছিল। ভর্তি নেওয়ার আগেই বিনায়ক হাসপাতাল জানিয়ে দেয় কোভিড টেস্ট করা হবে। পজিটিভ হলে আর রাখা হবে না। গত ২৯ জুলাই সেই টেস্ট পজিটিভ আসে। তারপর কার্যত রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন বিনায়ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছয় রোগীর পরিবারকে বলা হয়, ওনাকে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এলে তবে বিল দেওয়া হবে। সে মুহূর্তে অন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতালে বেড পাচ্ছিলেন না রোগীর পরিবার। একাধিক হাসপাতালে ফোন করলে রিং বেজে যায়। অভিযোগ, ডিসান হাসপাতাল ওই রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা অগ্রিম দাবি করে। রোগীর পরিবারের পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব ছিল না। শেষমেশ সঞ্জীবনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রোগীকে। সেখানেই মারা যান সুভাষবাবু।
সুভাষবাবুর মেয়ে জানিয়েছেন, বাবা দীর্ঘদিন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আধিকারিক ছিলেন। যা কি না এখন অন্যতম কোভিড চিকিৎসার কেন্দ্র। ভাগ্যের পরিহাসে তার নিজের কোভিড ধরা পরায় শহরের এক হাসপাতাল তাঁকে রাখতে অস্বীকার করল। সুভাষবাবুর মেয়ে বিস্তারিত লিখে অভিযোগ জানান রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই ডেকে পাঠানো হয়, বিনায়ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জিজ্ঞেস করা হয়, কেন করোনা রোগীকে নিয়ে যেতে এরকম জোর জবরদস্তি করা হল?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর সাফাই, এটা নন কোভিড হাসপাতাল। আগেই রোগীর পরিবারকে বলা হয়েছিল সেটা। যা শুনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আমরা হাসপাতালের বক্তব্যে মান্যতা দিইনি। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ রয়েছে কোভিড রোগী ফেরানো যাবে না। ভুল বলার জন্য হাসপাতালের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদিকে, করোনা রোগীর কাছ থেকে অগ্রিম চাওয়ার জন্য ডিসান হাসপাতালকেও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই এইধরণের পরিস্থিতি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনকে। যা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে কমিশন।