তাঁরা সাত বোন। এর মধ্যে কারোর গায়ের রং কালো তো কারোর রং নীল বা সবুজাভ। তাঁরা আসলে একটি ঘরের মধ্যে সাতটি বেদিতে অধিষ্ঠিত সাতটি কালী। তাঁদের কাউকেই বিসর্জন করা যায় না। মন্দিরের বাইরে খোলা আকাশের নিচে দুই বোনকে রেখে দেওয়া হয়। প্রকৃতির খেয়ালে গলে যায় মাটি। আর এই সাত বোনের পুজো করেন কোনও ব্রাহ্মণ নয়, গ্রামের বাউরি সম্প্রদায়ের মহিলা। বীরভূমের লাভপুর থানার দ্বারোন্দা গ্রামে এভাবেই কালী রূপে পুজো হয়ে আসছে সাত বোনের।
কথিত আছে, গত ৩৫০ বছর আগে দ্বারোন্দা গ্রামে এক বিখ্যাত সাধক মা কালীর সাধনা শুরু করেন। দীর্ঘদিন সাধনা করার পর একদিন তিনি চোখ খুলতেই দেখেন তাঁর সামনে অপূর্ব সুন্দরী সাত কিশোরী দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের খোলা চুল। সাধক প্রথমে চমকে গেলেও পরে তিনি বলেন, “কে তোমরা মা ?” সাতজন জানিয়ে দেয়, “তুই যার সাধনা করছিস আমরা তারা। আমরা সাত বোন। এই সাত বোনের পুজো তোকে করতে হবে।” সাধক বলে ওঠেন, “আমি ব্রাহ্মণ নই, আর আমার সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই যে সাত বোনের পুজো করব।” মা কালী জানিয়ে দেন, “তার ব্যবস্থা আমরা করব। চারিদিকে বসন্ত, কলেরা হচ্ছে আমাদের চরণামৃত মেশানো অসুধ যে খাবে তার আর কলেরা , বসন্ত হবে না।” এরপর থেকেই সেখানে কালীরূপী সাত বোনের পুজো শুরু হয়।
একটি ঘরে সাতটা বেদিতে বসে থাকে সাত বোন। কার্তিক মাসের পাশাপাশি প্রতি অমাবস্যাতেও পুজো হয়ে থাকে। এছাড়া নিত্যসেবাও হয় তাঁদের। পুজো কোন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষ করেন না। মূলত গ্রামের পত্রধর বা বাউরি সম্প্রদায়ের মানুষ করে থাকেন। যে পরিবারে পুরুষ নেই, সেই পরিবারের মহিলারাও পুজো করেন। প্রথা অনুসারে কোন কালী বিসর্জন করা হয় না। প্রতি বছর সাত বোনের মধ্যে দুই বোনকে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। ঝড়বৃষ্টিতে মায়ের দেহ থেক মাটি গলতে থাকে। পুজোর আগে আবার দু’টি মূর্তি তৈরী করা হয়।