মঙ্গলবার বিহার বিধানসভা ভোটের ফল গণনার সময় থেকেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ শীর্ষ বিজেপি নেতারা একটা কথাই বলতে শুরু করেছেন যে এর পর বাংলা! অর্থাৎ, একুশের বিধানসভা ভোটে জিতে বাংলায় ক্ষমতায় আসবেন তাঁরাই। কিন্তু বিহার জয় মানে কি বাংলাতেও বিজেপি ক্ষমতায় আসবে! বিশেষজ্ঞদের মতে, একেবারেই নয়। তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় সাফ বলে দিচ্ছেন, বিহারের ফল যা-ই হোক, বাংলায় বিজেপি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের পর্যবেক্ষণ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের তুলনায় কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মোট প্রাপ্ত ভোট কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে বিহারে এবার নীতিশ-বিরোধী একটা হাওয়া ছিল। অথচ সেই হাওয়ার ফায়দা যতটা লালু-তেজস্বীর দল আরজেডি তুলেছে, তার চেয়ে কম কিছু তোলেনি নীতিশেরই জোটসঙ্গী বিজেপি। এবং এটা হয়েছে, বিজেপি সেখানে ধীরে দলীয় সংগঠন মজবুত করেছে বলেই। নীতিশের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের ক্ষোভ থেকে কিছুকাল ধরেই নিজেদের অতি সুকৌশলে সরিয়ে রেখেছিল গেরুয়া শিবির। জোটসঙ্গী হলেও মোদী-শাহের কাছে এই নির্বাচনে নীতিশ কুমারও ছিলেন এক রকম প্রতিপক্ষ।
মজবুত সংগঠনের হাত ধরে একেবারে নিচুতলার অনুগামী-সমর্থকদের মনোজগতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল এবারের ভোটে দলের নতুন ও অভিনব কৌশল। তা হল, আরজেডি-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি বিহারে এবার নীতিশের প্রভাব ও সংগঠনকেও ঘায়েল করতে হবে। এ কাজে রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগকেও তলে তলে ব্যবহার করেছে বিজেপি। তার ফলও মিলেছে ইভিএমে। কিন্তু এই রণকৌশলের কিছুই রূপায়িত হতো না, যদি না বিজেপির শক্তপোক্ত সংগঠন থাকত। কিছুটা নীতিশের কাঁধে ভর করে এবং কিছুটা লালুপ্রসাদ যাদবের জেলে থাকার সুযোগ নিয়ে গত দেড় দশক ধরে বিহারে সাংগঠনিক শক্তি ধীরে ধীরে মজবুত করেছে বিজেপি।
কিন্তু বাংলায় বিজেপিকে লড়তে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। দু’-দু’বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও যাঁর লড়াকু নেত্রী ও মাটি কামড়ে পড়ে থাকা আন্দোলনকারীর ভাবমূর্তি অটুট। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দে জর্জরিত দুর্বল সংগঠন নিয়ে মমতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া একেবারেই সহজ কাজ হবে না। উল্লেখ্য, বিজেপি ২০০-র বেশি আসন পেয়ে বাংলায় ক্ষমতা দখল করবে, রাজ্য সফরে এসে বাঁকুড়ায় সম্প্রতি এমনটা দাবি করেছিলেন অমিত শাহ। আর তার পর দিনই সল্টলেকে বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে নিজের সেই দাবির যথার্থতা নিয়ে নিজেই প্রকারান্তরে সংশয় প্রকাশ করেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁর বক্তব্য ছিল, দলের রাজ্য নেতৃত্বের একমাত্র কাজ হবে প্রতিটি বুথের লড়াইয়ে গা ঘামানো। শাহর কথাতেই স্পষ্ট, মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে যে সাংগঠনিক শক্তি থাকা দরকার, বঙ্গ বিজেপির এখনও সেটা নেই।