মাস খানেক আগে ঘটা হাথরস কাণ্ড শোরগোল ফেলে দিলেও বরাবরই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ‘অপরাধীদের রামরাজ্য’ উত্তরপ্রদেশ। প্রায় প্রতিদিনই খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে থাকে এই রাজ্যে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল এক নয়া অপরাধ। বাংলার এক শ্রমিককে দীর্ঘ ১০ বছর বিনা পারিশ্রমিকে বাঁধা শ্রমিক বা বেগার শ্রমিক হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ উঠল যোগীরাজ্যে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর কার্যত বন্দী থাকার পর কোনওমতে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়েছেন বাংলার ওই পরিযায়ী শ্রমিক।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পেটের তাগিদে ১০ বছর আগে বাংলা ছেড়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের গোপাল বাড়ির বাসিন্দা গুল্লু মার্ডি। ৬০ বছর বয়সী ওই শ্রমিক উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে তার সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়। সেখানেই এক ব্যক্তি তাকে বিনা পারিশ্রমিকে বাঁধা মজুর হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করতে বাধ্য করে। পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তার কোনও খোঁজ পায়নি। এরপর করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন গত আগস্ট মাসে এক অপরিচিত ব্যক্তির ফোনে গুল্লুর খোঁজ পায় তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত বাবাকে ফেরাতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় গুল্লুর সন্তানরা। দীর্ঘ ১০ বছর চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটানোর পর অবশেষে ১৭ অক্টোবর বাড়ি ফিরেছেন ৭০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ।
জানা গিয়েছে ভূপেন্দ্র সিং নামে উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর জেলার এক ব্যক্তি দীর্ঘ দশ বছর আটকে রেখেছিল গুল্লুকে। এত বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ি মেরামতি ও নানা ধরনের কাজ করিয়ে নিয়েছে সে। ওই বৃদ্ধ যাতে বাড়ি ফিরতে না পারেন তার জন্য সমস্ত রকম বন্দোবস্ত করে অভিযুক্ত ভূপেন্দ্র। এই ঘটনার পর গত ২৪ মার্চ লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন ঘরে ফিরছিল তখন কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন গুল্লু। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারেননি। কানপুরের ঘাটমপুর থানার মুরালিপুরে একটি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই হয় তাঁর। পরে ওই স্কুলেরই এক শিক্ষকের ফোনে গুল্লুর সঙ্গে কথা হয় তাঁর পরিবারের। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় গুল্লুর পরিবার। এরপর প্রশাসন ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় সম্প্রতি বাড়ি ফেরে সে।