মহালয়া একমাস আগে হয়ে যাওয়ায় এবার পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে আগেভাগেই। আর তারপর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে এই করোনা কালেও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ঘিরে সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে রাজু জুড়ে। হাতে আর মাত্র ২-৩দিন। সোমবার থেকেই পথে নেমে যাবে মানুষ। শুরু হয়ে যাবে রাত জেরে কলকাতার বুকে ঠাকুর দেখার ধূম। তবে এরই মধ্যে নানা মহল থেকে যেমন রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে পুজো বন্ধ করার জন্য তেমনি দায়ের হয়েছে মামলাও। আবার দুই-তিনটি পুজো কমিটি দর্শনার্থীবর্জিত পুজো করতে চাইছে। তা নিয়েও এবার শুরু হয়েছে পাল্টা চাপের খেলা। সব মিলিয়ে এবারে পুজো নিয়ে কার্যত কুরুক্ষেত্র লেগে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে।
করোনাকালে জমায়েত করতে দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। নিষেধ রয়েছে মিছিল ও সভা করার ক্ষেত্রেও। কিন্তু এর কোনটাই বিজেপি মেনে চলছে না কোথাও। বাংলা হোক কী উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র হোক কী মধ্যপ্রদেশ, আসাম হোক কী কর্ণাটক সর্বত্রই চলছে বিজেপির নিয়মভাঙার খেলা। এ রাজ্যেও রামনবমী থেকে শুরু করে যত্রতত্র বিজেপি নানা মিছিল, জমায়েত, সভা করে চলেছে। এমনকি হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে নবান্ন অভিযান চালানোর নামে রাজপথে প্রকাশ্যে গুণ্ডামি করেছে। সেই সব সময় তাদের একবারও কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার কথা মনে হয়নি। অথচ যখন দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার মুখে তখন বিজেপির মনে হল এই পুজো আটকাতে বা পারলে রাজ্য মহামারীতে শেষ হয়ে যাবে।
এমনকী রাতারাতি পুজো বন্ধ করতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হল দুই বিজেপি সমর্থককে। ঠিক যেভাবে আসাম, উত্তরপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশে দুর্গাপুজো করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সেখান বিজেপি সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, এখানে বিজেপির সরকার না থাকায় আদালতে গিয়েছে তাঁরা। মূল লক্ষ্য কিন্তু একটাই যেনতেন প্রকারণে বাঙালির দুর্গাপুজো বন্ধ করে রামঠাকুরের পুজো শুরু করতে চাওয়া। একই সঙ্গে এটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে শেষ মুহূর্তে ভিড়ের জেরে কোভিড সংক্রমণের দোহাই দিয়ে কলকাতার দু-তিনটি পুজো দর্শকহীণ পুজো করার কথা জানিয়েছে। কার্যত এই সিদ্ধান্ত মানুষের মধ্যে বিভেদের প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ উঠেছে এরসব পুজোকমিটির কর্মকর্তারা গেরুয়া শিবির থেকে টাকা নিয়ে এই পথে হাঁটা দিয়েছে।
একই সঙ্গে মাঠে নেমেছে চিকিৎসকদের ফোরামও। তাঁরা এবার যে আবেদন প্রকাশ্যে এনেছে তা নিয়ে রীতিমত বড়সড় বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে চিঠিতে ভাষার প্রয়োগ নিয়ে। সেই চিঠির ভাষায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে নবান্নেও। রাজ্য সরকারকে যে ভাবে আক্রমণ শানানো হয়েছে সেই চিঠিতে তা পড়লে মনে হতেই পারে যে কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল আক্রমণ শানিয়েছে রাজ্য সরকারকে। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বার বার আশ্বাস দিচ্ছেন সচেতন ভাবে পুজো করার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তখন চিকিৎসকদের ফোরাম কেন তাতে কর্ণপাত করছে না! এদিকে এই ফোরাম কিন্তু মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত হয়রানি হলে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না। কোভিডের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যখন সাধারণ মানুষকে বেসরকারি হাসপাতালে ভিখারি হয়ে যেতে হচ্ছিল তখন কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল এই সংস্থা।