পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তির সময় শিখ যুবকের পাগড়ি খুলে যাওয়া নিয়ে যখন বাংলায় বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির, তখন সামনে এল খোদ পাঞ্জাবেই পাঞ্জাব পুলিশের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে সেখানকার পুলিশ লাথি মেরে খুলে দিচ্ছে পাগড়ি। তবে ভাইরাল হলেও সেই ভিডিও নিয়ে নেই কোনও শোরগোল। নেই গেরুয়া শিবিরের তরফে কোনও হই-হট্টগোলও।
এখন প্রশ্ন উঠছে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে ধর্মীয় উস্কানি দিতেই কি রচনা হয়েছিল গত সপ্তাহের বিজেপির পাগড়ির প্রতি শ্রদ্ধা? এ প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরাও। পাঞ্জাব পুলিশের ওই ভিডিও শেয়ার করে তাঁদের খোঁচা, ‘পাঞ্জাব পুলিশ বলে কিছু বললাম না। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ হলে শিখদের তাতিয়ে আন্দোলন করে দাঙ্গা লাগিয়ে দিতাম।’ বিজেপির নাম না করে সকলেরই প্রায় এক অভিযোগ, ‘এই চিন্তা-ধারা নিয়ে এই কাজটা একটি রাজনৈতিক দল করছে এখন বাংলায়…কয়েকদিন আগে কারা পাগড়ি নিয়ে বড় বড় কথা বলছিল তারা সব কোথায়! বাংলার পুলিশ তো ধস্তাধস্তি তে খুলেছিল এরা তো লাথি মেরে খুলে দিচ্ছে পাগড়ি.. তোদের পাগড়ি প্রেম দেখা অন্ধভক্তগুলো।’
প্রসঙ্গত, বিজেপি যুব মোর্চার ডাকে নবান্ন অভিযানের দিন হাওড়া ময়দান থেকে নবান্নের দিকে আসা মিছিলের এক বিজেপি কর্মীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় অস্ত্র। বলবিন্দর সিং নামের ওই যুবক বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যের সঙ্গে ছিলেন দাবি করেছেন হাওড়ার পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল। তদন্তে জানা যায়, ঐ পিস্তলের লাইসেন্স ব্যক্তির নিজের নামে হলেও সেই পিস্তলটি জম্মু ও কাশ্মীরের রজৌরি জেলার বাইরে ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। সেই বলবিন্দর সিংকে মারধরেরই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। যেখানে দেখা গেছে, বলবিন্দরকে পাকড়াও করতে গিয়ে মারধর এবং ধস্তাধস্তির মধ্যে দুর্ভাগ্যবশত তাঁর পাগড়িটি খুলে যায়।
এরপরই বিজেপি ধর্মীয় উস্কানি দিতে শুরু করে রাজ্যে। তারা প্রচার করে শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে তাঁর পাগড়ি খুলে অপমান করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। তবে রাজ্য পুলিশ এক টুইটে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘বিজেপির বিক্ষোভে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ওঁর পাগড়ি ধস্তাধস্তির সময় এমনিই খুলে পড়েছে। আমাদের আধিকারিক কখনওই পাগড়ি খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। কোনও সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করাটা আমাদের অভিপ্রায় নয়। আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি।’ টুইটে গ্রেফতারির ঠিক আগের মুহূর্তে তোলা বলবিন্দরের একটি ছবিও পোস্ট করেছে রাজ্য পুলিশ। যাতে তাঁকে একেবারে সঠিকভাবে পাগড়িটি পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে।