‘উচ্চবর্ণের চার ব্যক্তি, যাঁদের ফাঁসানো হয়েছে’ তাঁদের বাঁচাতে হবে। আর তাই উপায় খুঁজতে রবিবার সকালে নির্যাতিতার বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্থানীয় এক বিজেপি নেতার বাড়ির লাগোয়া মাঠে বসে মহাপঞ্চায়েত। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর সমাজ এখন ভিতরে ভিতরে একজোট হয়ে অভিযুক্তদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তার দুই প্রমাণ হল শুক্রবারের নিভৃত বৈঠক ও রবিবারের মহাপঞ্চায়েত।
শুক্রবার রাতে স্থানীয় বিজেপি নেতা রাজবীর সিং পেহলওয়ানের বাড়িতে গোপনে এক বৈঠক হয়। সেখানে বেশ কিছু উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি হাজির ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন এক অভিযুক্তের পরিবারের প্রতিনিধিরাও। কী ভাবে উঁচু জাতের অভিযুক্তদের বাঁচানো যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। সেখানে এ কথাও আলোচনা হয়, পুরো ঘটনাই সাজানো, তা যদি প্রমাণ করা যায়! সে ক্ষেত্রে দেখাতে হবে নির্যাতিতার পরিবার প্রথম থেকেই মিথ্যে বলছে। ‘নিচু জাত’ মিথ্যে কথা বলছে – এ আর প্রমাণ করা এমন কী! এমন অভিমতও শোনা গিয়েছে সেখানে।
যদিও এই গুপ্ত বৈঠকের কথা স্বীকার করেননি রাজবীর। তাঁর বক্তব্য, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন ঠিকই, তবে এ জন্য কোনও বৈঠক করেননি। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে উপস্থিত একজন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বৈঠকের কথা জানিয়েছি। নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত। অভিযুক্তদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’ পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য এমন কোনও বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে।
হাথরসের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট প্রেমপ্রকাশ মীনা জানিয়েছেন, এমন কোনও বৈঠকের কথা তাঁদের জানা নেই। নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্তদের পরিবার-পরিজন ও উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ উড়িয়ে প্রেমপ্রকাশ বলেন, ‘মৃতার পরিবারের ওপর কোনও চাপ নেই। রাজনৈতিক নেতারাও সর্বোচ্চ ৫ জন করে বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারেন।’ যদিও শনিবার বিকেলের আগে পর্যন্ত না সংবাদমাধ্যম, না রাজনৈতিক নেতা – কেউই ঢুকতে পারেননি গ্রামে বা নির্যাতিতার বাড়িতে।
তবে শুক্রবারের যে বৈঠকের কথা অস্বীকার করছেন রাজবীর, তারই বৃহত্তর জমায়েত দেখা গিয়েছে রবিবার। ওই মহাপঞ্চায়েতে উচ্চবর্ণের অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলোচনা হয় হাথরসের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। তার পরে রাজবীর বলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটা একটা অভিযোগের ভিত্তিতে। তার মানেই প্রমাণ হয়ে যায় না যে, ওরা অপরাধী।’ তিনি সিবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই তদন্তই একমাত্র সত্য উদঘাটন করতে পারে।’ ওখানে উপস্থিত একাধিক সদস্য দাবি করেন, দলিত পরিবারটি মিথ্যে কথা বলছে। সে জন্যই তারা নার্কো টেস্টে রাজি হয়নি।