টানা ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর গত মঙ্গলবার প্রাণ গিয়েছে হাথরসের গণধর্ষিতা দলিত তরুণীর। যা নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় গোটা দেশ। তবে ক্ষোভের আগুন যাতে আরও বেশি ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্যে ইতিমধ্যেই ‘খবর’ রুখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যোগী প্রশাসন। ‘ফেক নিউজ’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০৫টি এফআইআর করা হয়েছে। বিভিন্ন শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬ জনকে। হাথরসের দলিত তরুণীর ধর্ষণ নিয়ে কোনও সাংবাদিক টুইট করলেই যোগী সরকারের তথ্য-জনসম্পর্ক দফতরের অধিকর্তা শিশির সিংহ ‘ফেক নিউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’-র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন এ ভাবেই। তার পর সে পথে হাঁটতে শুরু করে হাথরস থানা। বলরামপুরেও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় বলরামপুর থানা থেকে একই ভাবে ‘সাবধান’ করা শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, আগেই যোগী সরকারের পুলিশ হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার ও গ্রামের লোকেদের মোবাইল কেড়ে নেয়, যাতে তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না-পারেন। শুধু যোগী সরকার নয়, কেন্দ্রের মোদী সরকারের শীর্ষ স্তর থেকেও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে ‘সতর্ক’ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বার্তা স্পষ্ট। হাথরসের ঘটনা নিয়ে যেন বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ না করা হয়! শুধু তাই নয়। গ্রামে ঢোকার রাস্তা সাংবাদিকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের অনেক আগেই বসেছিল পুলিশের ব্যারিকেড। পুলিশ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, বিশেষ তদন্তকারী দলের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে সংবাদমাধ্যমের ঢোকা বারণ। হাথরসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রকাশ কুমার বলেন, ‘সিট-এর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের উপরে এই বিধিনিষেধ থাকবে। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাচাই করে বাইরের কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, গতকাল এবিপি নিউজের মহিলা সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিক হাথরসের নির্যাতিতার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাঁদের আটকায় বিশাল পুলিশবাহিনী। মহিলা পুলিশকর্মীরা ওই সাংবাদিকের সঙ্গে কার্যত ধস্তাধস্তি করেন। ক্যামেরার তার খোলার চেষ্টা হয়। যদিও কেন যেতে দেওয়া হবে না, সদুত্তর দেননি কেউই। কখনও বলা হয়, ‘উপরওয়ালাদের বারণ আছে।’ কখনও বলা হয়, ‘করোনা আছে।’ অন্য একটি চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক টুইটারে ছবি দিয়ে দেখান, কী ভাবে তাঁকে ঘিরে ধরে আটকাচ্ছেন চার পুলিশ। নির্যাতিতার পরিবারের এক জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। তবে এত ‘সতর্কতা’ সত্ত্বেও নির্যাতিতার কিশোর ভাই গতকাল ঘুরপথে ধানখেতের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে চলে আসে। সে জানায়, তার মা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। বাড়ির চার দিক পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সকলের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের লোককে মারধর করা হয়েছে। ওই কিশোরের দাবি, পুলিশ তার জ্যাঠার বুকে লাথি মারার পরে তিনি সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন।