মথুরায় কংসের কারাগারের ভেতর যেখানে কৃষ্ণ জন্মেছিলেন, সেখানে নিজের শাসনকালে মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। সেই শাহি ইদগাহ মসজিদ সরানোর জন্যই সম্প্রতি আবেদন জমা পড়েছিল মথুরা কোর্টে। কিন্তু গতকাল সেই আবেদন খারিজ করে দিলো মথুরা সিভিল কোর্ট। অতিরিক্ত জেলা বিচারক ছায়া শর্মা এই রায় দেন। তিনি জানান, ১৯৯১ সালে পাশ হওয়া প্রার্থনা স্থান আইনে এই আবেদনকে মান্যতা দেওয়া যায় না।
শ্রীকৃষ্ণের ওই জন্মভূমি কাটরা কেশব দেব নাম পরিচিত। ১৩.৩৭ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে মন্দির। ওই জমির মধ্যেই রয়েছে মসজিদটিও। পিটিশনে বলা হয়েছিল, ওই চত্বরের প্রত্যেক ইঞ্চি জমি ‘হিন্দু এবং কৃষ্ণভক্তদের কাছে পবিত্র’। তাই সেখানে ‘বেআইনিভাবে’ তৈরি হওয়া ইমারত সরানো হোক। অভিযুক্ত ‘ট্রাস্ট শাহি মসজিদ ইদগাহ্র ম্যানেজমেন্ট কমিটি সুন্নি সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ওয়াকফের সম্মতিতে’ ওই মসজিদ তৈরি করেছিল।
কৃষ্ণের মূর্তি এবং জন্মস্থানের প্রতিনিধি হিসেবে পিটিশন দায়ের করেছিলেন লখনউয়ের আইনজীবী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রি। অন্য পিটিশনাররা হলেন ভক্ত প্রবেশ কুমার, রাজেশ মণি ত্রিপাঠি, করুণেশ কুমার শুক্লা, শিবাজি সিং, ত্রিপুরারি তিওয়ারি। পিটিশনে এও বলা হয়েছিল, ১৯৬৮ সালে মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সঙ্ঘ এবং মন্দির ট্রাস্টের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল, তা ‘বেআইনি’। ওই জমি আসলে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি ট্রাস্টের। তাদের হয়ে সমঝোতা করার অধিকার শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান সঙ্ঘের নেই। ওই ‘সমঝোতা’র ভিত্তিতেই মন্দির এবং মসজিদ ট্রাস্ট তাদের সীমানা নতুন করে স্থির করে নেয়।
পিটিশনে দাবি করা হয়েছিল, মসজিদ ট্রাস্ট যে ইমারত নির্মাণ করেছে, তার নীচেই রয়েছে আসল কারাগার, সেখানে জন্মেছিলেন কৃষ্ণ। ‘মসজিদ খনন করলেই কোর্টের সামনে সেই সত্য উদঘাটিত হবে।’ আবেদনকারীরা অভিযোগ করেছে, মসজিদ ট্রাস্ট এবং সেবা সঙ্ঘের সমঝোতার জেরেই ‘কৃত্রিম কারাগার’ তৈরি হয়েছে। ‘রাজনৈতিক কারণে মানুষের থেকে আসল সত্য গোপন’ রাখতেই এই উদ্যোগ।
পিটিশনে এই অভিযোগও করা হয়েছে, যে মসজিদ ট্রাস্ট এবং সেবা সঙ্ঘ ‘সম্পত্তি দখল করতেই আদালত, বাদী পক্ষ এবং ভক্তদের ঠকিয়েছে।’ ‘সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা মেনে কাটরা কেশব দেব চত্বরে কৃষ্ণের মালিকানাধীন সম্পত্তি দখল, অধিকার এবং পরিচালনা’ করার অধিকার রয়েছে বাদী পক্ষের। ১৯৯১ সালে নরসীমা রাওয়ের সরকার আইন পাশ করায়। তাতে বলা হয়, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, দেশে প্রার্থনা স্থানগুলোর যেখানে যে ধর্মাচরণ করা হত, পরেও তা করা হবে। যদিও এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ভিন্ন পিটিশন জমা পড়েছে।