টানা ১৫ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মেনেছেন চার উচ্চবর্ণের ব্যক্তির হাতে গণধর্ষণের শিকার হওয়া উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত মহিলা। মঙ্গলবারই দিল্লীর সফদর জং হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আর তারপর থেকেই তোলপাড় গোটা দেশ। এরই মধ্যে সামনে এসেছে উত্তরপ্রদেশে আরও ২ নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা। এই নিয়েই এবার যোগী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। মুখ্যমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ, তাই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়ে বিএসপি নেত্রীর তোপ, ‘যোগীকে গোরক্ষপুরে পাঠিয়ে দিন।’ যোগীর শাসনে উত্তরপ্রদেশে ‘বোনেরা নিরাপদ নয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন এই দলিত নেত্রী।
মঙ্গলবার দিল্লীর সফদরজং হাসপাতালে হাথরসের দলিত মহিলার মৃত্যুর পরেই দেশ জুড়ে এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে যোগী রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। হাথরসের ওই ঘটনার পরে ফের উত্তপ্রদেশেরই বলরামপুরে প্রায় একই রকম ভাবে এক তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। একের পর এই ধরনের ঘটনায় শুধু রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন নয়, সরাসরি যোগীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুললেন বিএসপি নেত্রী। একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হাথরসের ঘটনার পর ভেবেছিলাম, মহিলাদের উপর অত্যাচার-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু তার পরেও একই রকম ভাবে দলিত ছাত্রীর উপর একই রকম নির্যাতন করা হল। রাজ্যে বিজেপির শাসনে অপরাধী, মাফিয়া, ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে কানপুরের মাফিয়া ডন বিকাশ দুবে। আরও বেশ কিছু এনকাউন্টার হয়েছে যোগীর শাসনে। সেই এনকাউন্টার সত্যি নাকি ভুয়ো, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একই প্রশ্ন তুলেছেন মায়াবতীও। বিএসপি নেত্রী বলেন, ‘অপরাধীদের এনকাউন্টার করা হচ্ছে, বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লোকে বলছে, এগুলোর কোনওটাই সততার সঙ্গে নয়, বরং করা হয়েছে শুধুই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। যদি সেটা হয়, তাহলে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সমাজের সব স্তরের মানুষ এই সরকারের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ। সমস্ত ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মা-বোনেরা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের তরুণী-যুবতীদের একদমই নিরাপত্তা নেই।’
এর জন্য দায়ী কে? মায়াবতীর সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে। তাঁকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘কেন্দ্রকে বলতে চাই, উত্তরপ্রদেশ সরকারের ঘুম ভাঙছে না। যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। হয়তো আরএসএস-এর চাপে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, কিন্তু যোগী সরকার চালাতে অক্ষম। ওঁকে গোরক্ষপুর পাঠিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করুন, নয়তো রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুন।’ হাথরসের মহিলার মৃতদেহ পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেন, তা নিয়েও সরব হয়েছেন মায়াবতী।