চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট জিতে ত্রিপুরায় সরকার গঠন করেছিল বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। এবার ত্রিপুরার সেই বিজেপি সরকারকে প্রতিশ্রুতি পালনের দাবি জানাতে গিয়েই আগরতলায় পুলিশের বেধড়ক মার খেলেন আদালতের রায়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা। লাঠি এবং জলকামানের ঘায়ে আহত, অসুস্থ বহু শিক্ষক। গত। বুধবার আগরতলায় মহাকরণের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এমনকি সেখানে সিআরপিএফের লাঠিতে এক শিক্ষিকার সঙ্গে আসা তাঁর অবুঝ শিশুকন্যার মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়। সামাজিক মাধ্যমে সে ছবি দেখে ছি-ছিক্কার পড়ে গেছে।
ত্রিপুরার ইতিহাসে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠি চালানোর এটাই প্রথম ঘটনা। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধে অবধি লাঠি খাওয়া, জলে ভেজা শিক্ষক-,শিক্ষিকারা মহাকরণের গেট অবরোধ করে রাখলেও দীর্ঘ সময় তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কেউ ছিলেন না। একাধিক মন্ত্রী মহাকরণের পেছন দরজা দিয়ে সরে পড়েন। পরে সন্ধে নাগাদ শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ শিক্ষকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে প্রথমে হাইকোর্ট, এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিচ্যুত হন এই ১০,৩২৩ স্কুল শিক্ষক। ভোটের আগে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিজেপি নেতারা। প্রয়োজনে সংসদে এ জন্য আইন সংশোধন করা হবে বলেও বলা হয়। অবশ্য, বাম আমলেই এঁদের কথা ভেবে ১৩ হাজার অ-শিক্ষক পদ তৈরি করে ইন্টারভিউ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে নতুন মামলা করিয়ে সব নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়। সরকারের অনুরোধেই অ্যাডহক ভিত্তিতে দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৩১ মার্চ চাকরিচ্যুত হন শিক্ষকরা।
কয়েক মাস হল ওই ১৩ হাজার পদে নিয়োগের বাধা উঠে গেছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। শিক্ষকরা চাইছেন আগের আটকে যাওয়া নিয়োগ সম্পূর্ণ করুক সরকার। এমনকি অর্ধাহার আর উৎকণ্ঠায় রোগে–শোকে মার্চের পর থেকে প্রায় ৭০ জন চাকরিচ্যুত শিক্ষক মারা গেছেন। কিন্তু বিপ্লব দেব সরকার তাতে কোনওমতেই রাজি নয়। ত্রিপুরার বিজেপি সরকার আশ্বাস দিচ্ছিল একটা কিছু করা হবে। কিন্তু, সাধারণ শিক্ষিত বেকারদের নিয়েই গুরুতর সঙ্কটে তারা।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেছিলেন, সরকার ধাপে ধাপে প্রায় ১১ হাজার চাকরি দেবে। তবে বছরে সর্বোচ্চ ২ হাজার পদে। এইসব চাকরির জন্য অন্য বেকারদের সঙ্গে বসে ইন্টারভিউ দিতে ১০,৩২৩ জন শিক্ষক ২৩-এর মার্চ অবধি শুধুমাত্র বয়সের ছাড়ই পাবেন। এরপরই ‘জাস্টিস ফর ১০,৩২৩’ নামে একটি সংগঠনের ডাকে বুধবার কয়েক হাজার চাকরিচ্যুত শিক্ষক–শিক্ষিকা মহাকরণ অভিযান করেন। তাঁরা সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা কিছুতেই আবার ইন্টারভিউ বা লিখিত পরীক্ষায় বসবেন না বলে জানান। তা ছাড়া, তাঁদেরই ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের এখন লিখিত পরীক্ষায় বসতে বলা অত্যন্ত অপমানকর।
বুধবার গোড়া থেকেই পুলিশ যেমন মারমুখী ছিল, তেমনি শিক্ষকরাও ছিলেন মরিয়া। পর পর পুলিশের কর্ডন ভেঙে শিক্ষকরা এগোতেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। জলকামান চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সব ভেদ করে শিক্ষকরা মহাকরণের প্রথম গেটে পৌঁছে সড়ক জুড়ে বসে পড়েন। আহত শিক্ষক–শিক্ষিকারাও সেখানে ছিলেন। এরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশি বর্বরতার নিন্দা করেন প্রাক্তন তিন মন্ত্রী বাদল চৌধুরি, মানিক দে, নরেশ জমাতিয়া এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাস প্রমুখ।