মোদী ঘনিষ্ঠ আদানিদের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আনতে এলাকায় দ্বিতীয় রেল লাইন পাতার কাজ। আর তার ফলে নতুন করে উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে প্রায় ৭০০ পরিবারের। স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্র বিরোধিতা করছে রউরকেল্লা স্টিল টাউনশিপ থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলার বিসরা-বীরকেরা তালুকের বারহা বানস গ্রামের বাসিন্দার। তবে আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের নাছোড় লড়াইয়ের সামনে নিরুত্তর রাষ্ট্র।
৩ সেপ্টেম্বর প্রথম জানা যায়, ঝাড়খণ্ডে আদানির গোড্ডা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উড়িষ্যার ধামরা বন্দর থেকে কয়লা আনা হবে। সিঙ্গল লাইনে কাজ চলবে না, তাই চাই ডাবল লাইন। সেই জন্য পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামে লাইন পাতার কাজ করতে এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। কিন্তু এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি, যা ইতিমধ্যেই অধিগ্রহণ করে ফেলেছে সরকার, তার নথি কোথায়? কারা পেয়েছেন ক্ষতিপূরণ? কোন নিয়মে তা দেওয়া হয়েছে? কিছুই জানেন না আদিবাসীরা। শুধু বছরের পর বছর ধরে তাঁদের ঠাঁইচ্যুত হতে হয়েছে।
কিন্তু এবার কাজ শুরুর আগেই স্থানীয় ডেমে ওরামের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা কর্মীদের ঘেরাও করে ফেলেন। দাবি করেন, অধিগ্রহণ কী নিয়মে হয়েছিল, তার ক্ষতিপূরণ কারা পেয়েছেন, তা নিয়ে সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ না করলে এবং স্থানীয়দের দাবি দাওয়া পূরণ না করা পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। আশেপাশের ১২ টি গ্রামের ২০ হাজার বাসিন্দা লাইন পাতার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয়দের নিয়ে তৈরি করা আঞ্চলিক সুরক্ষা সমিতি।
জানা গিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনি থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজ এসে ভিড়বে উড়িষ্যার ধামরা পোর্টে। তারপর তা মালগাড়ি করে আনা হবে গোড্ডার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার কয়লা খনি কিংবা গোড্ডার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুটোই গৌতম আদানির সংস্থার। গোড্ডায় তৈরি বিদ্যুৎ সরাসরি বিক্রি হবে বাংলাদেশে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উন্নয়নের দোহাই দিয়ে তাঁদের বারবার বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য ক্ষতিপূরণ তো দূর অস্ত, কিছুই পাননি।
আন্দোলনের নেতা ডেমে ওরাম বলছেন, সমস্ত নিয়ম কানুন ভেঙে আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এমনকী উড়িষ্যা সরকার এবং ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ট্রাইবসের রায়ও অমান্য করা হয়েছে। ওরামের অভিযোগ, এই দুই রায়ে সাফ বলা আছে, জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ একর জমি এবং রেলের কারণে উচ্ছেদ হতে হলে অতিরিক্ত হিসেবে রেলে একজনের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু একজনও ক্ষতিপূরণ বা চাকরি পাইনি।
তাঁর আরও অভিযোগ, আদানির শিল্প সংস্থার প্রয়োজনে তড়িঘড়ি লাইন পাতার কাজ করতে যাচ্ছে রেল। পুলিশ ও রেলের তরফে প্রতিদিনই বাহিনী পাঠিয়ে গরিব গ্রামবাসীর উপর চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ পাহারায় কর্মীরা আর্থ মুভার, যন্ত্রপাতি নিয়ে এলাকায় ঘুরছেন। তিনি জানান, এই ৪ হাজার একর এলাকার ১২ টি গ্রামের ২০ হাজার বাসিন্দা। তাঁদের প্রত্যেকের একই অভিজ্ঞতা। রাষ্ট্রের উন্নয়নের ঠেলায় প্রত্যেককে বারবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। কিন্তু মেলেনি কোনও প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ।