মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতেই নিজেদের জীবন বাজি রেখে তাঁরা একনাগাড়ে কাজ করে চলেছেন। আর তা করতে গিয়ে বাস্তবে নিজেদের প্রাণও চলে যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে অনেকের। তাঁরা প্রত্যেকেই কলকাতা পুলিশের কর্মী-অফিসার। কলকাতা পুলিশের অন্দরে করোনার থাবা এখনও থামেনি। এবার মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের। তাঁর নাম গৌতম মাহাতো। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে তিনি কর্মরত ছিলেন।
লালবাজার সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগেই করোনা আক্রান্ত হন গৌতম বাবু। আজ তাঁর মৃত্যু হয়। এখনও অবধি গৌতম বাবুকে নিয়ে কলকাতা পুলিশে মোট ১২ জন আধিকারিকের মৃত্যু হল। জানা গিয়েছে, গৌতম বাবু সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আজ তাঁর মৃত্যুর খবর আসতেই, মৃত পুলিশকর্মীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবারই পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে করোনায় নিহত পুলিশকর্মীদের পরিবারের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র ও ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কর্মীদের মনোবলও বাড়ান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিনে কলকাতা পুলিশের যে সব কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগের কো-মর্বিডিটি ফ্যাক্টর ছিল না বলে খবর। বেশিরভাগেরই বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ মধ্যে। ফলে পুলিশকর্মীদের করোনার সঙ্গে যুঝতে না-পারার পিছনে পেশার জন্য তাঁদের অনিয়মিত জীবনযাপনের কিছুটা ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। একটি সমীক্ষা বলছে, গোটা দেশে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ও সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স মিলিয়ে অন্তত ৩৭ হাজার জন করোনা আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে থেকে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ২২০ জনের।
এই বিষয়ে চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “পুলিশের পক্ষে ঘড়ি ধরে কাজ করা সম্ভব নয়। পুলিশের কাজের চাপ অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা সঠিক ভাবে শারীরিক যত্ন নিতে পারেন না। বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতেও তাঁদের মানুষের মধ্যে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানা সামাজিক পরিষেবা দিতে হচ্ছে। শরীর যতটা চাপ নিতে পারে, তার থেকেও অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। এমনিতেই দীর্ঘদিনের অনিয়মিত জীবনযাপনে আনুষাঙ্গিক কিছু রোগ তৈরি হয় বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। ফলে করোনা সহজেই থাবা বসাতে পারছে।”