তাঁকে বাড়িতে রেখে নিশ্চিন্ত মনে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা। পরিকল্পনা ছিল, অন্যান্য দিনের মতোই মাকে কাজের জায়গায় পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন বাবা। ততক্ষণে অনলাইন ক্লাস করে নেবেন ছেলে। কিন্তু তারমধ্যেই যে সে গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মঘাতী হবে তা কে জানত! বাবা যখন বাড়ি ফেরেন ততক্ষণে সব শেষ। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তাররা। কলকাতার এক সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় ফের সামনে এল অবসাদের তত্ত্ব।
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকার কালিতলা পার্ক এলাকায়। ১৩ বছরের ওই কিশোর বান্দিপুর রোডের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা রেলের ঠিকাদারের কাজ করেন। তাই বেশিরভাগ সময়েই তাঁকে বাড়ির বাইরেই থাকতে হয়। মা একটি ক্লিনিকে কাজ করেন। জানা গিয়েছে, লকডাউনের পর থেকে গত কয়েক মাস বাড়িতেই রয়েছেন ছেলেটির বাবা। তাঁর রোজগার না থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছিল সংসারে। মায়ের ক্লিনিকের কাজের ওপরেই সবটা নির্ভর করতে হচ্ছিল। এদিকে লকডাউনের ফলে বহুদিন বাড়ির বাইরে বেরতে পারেনি ছেলেটিও। তাই এইসব মিলিয়ে তার মধ্যে অবসাদ এসেছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় অনলাইন ক্লাস শুরু হয় ছেলেটির। তার ক্লাস শুরু হওয়ার পরে মাকে সাইকেলে করে ক্লিনিকে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। গত কয়েক দিন ধরে এই একই রুটিন চলছে। ছেলের আচরণে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি তাঁদের। মাকে ক্লিনিকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরে ছেলেটির বাবা দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরেও কোনও সাড়া না মেলায় অবশেষে দরজা ভেঙে তিনি দেখেন পাখার সঙ্গে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলছে তাঁর ছেলের দেহ। ছেলেটির বাবার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন সেখানে। এরপর সবাই মিলে ওই কিশোরের দেহ বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এই ঘটনার পরেই খবর দেওয়া হয় রিজেন্ট পার্ক থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অবসাদের তত্ত্ব উঠে এলেও অন্য কারণও খতিয়ে দেখছে তারা। সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পাড়ার বন্ধুবান্ধবদেরও জিজ্ঞাসা করছে পুলিশ। কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল কিনা, বা কাউকে নিজের অবসাদের কথা সে বলেছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বাচ্চাটির স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও।