রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহু লড়াই লড়তে হয়েছে তাঁকে। সেইসময় রাজনীতিতে তাঁর মেন্টর ছিলেন তিনি। এরই পাশাপাশি ছিলেন রাজ্যের অগ্নিকন্যার ব্যক্তিগত অভিভাবকও। তিনি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আজ সন্ধেতেই দিল্লীর হাসপাতালে জীবনাবসান হয়েছে তাঁর। জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নানা ভূমিকার পরিচয় খুব কাছ থেকেই পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদা-বোনের অটুট সম্পর্কের জগৎটা এবার শূন্য হল। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ফেসবুক পোস্টে সেই আক্ষেপ গোপন রইল না।
সেই সাতের দশকে, যখন রাজনীতিতে সবে হাতেখড়ি মমতার, যখন এই ভাবী রাজনীতিককে প্রায় কেউই চেনেন না, সেই অঙ্কুর দশায় কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো দুঁদে রাজনীতিক ঠিক চিনে ফেলেছিলেন তাঁকে। দেখেই বুঝেছিলেন, এ মেয়ে বহুদূর যাবে। আর তখন থেকেই স্নেহের অবারিত দুয়ার খুলে তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে নবাগতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ‘তুই’ সম্বোধনে আশীর্বাদী হাত রেখেছিলেন তাঁর মাথায়। আর সেদিনের মমতারও বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি, তিনিও নিজের জীবনে এক মহীরূহের ছায়া পেয়েছেন। কংগ্রেস শিবিরে দাদা-বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন দু’জনে। মমতা যতবারই সাফল্য পেয়েছেন, সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন প্রণববাবু। অভিনন্দন, শুভেচ্ছার পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হয়ে দিল্লীর রাজনীতিতে পা দেওয়ার পর সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির দিল্লীর বাড়িতে মমতার ছিল অবাধ যাতায়াত। ছোট বোনের আবদারে ডায়াবেটিস আক্রান্ত দাদাকে যে কতবার মুখ বুজে চকলেট খেয়ে ফেলতে হয়েছে, তার হিসেব নেই। দিল্লীর সেসব দিনের কথাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভেসে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই পোস্টে। তিনি স্পষ্টই লিখেছেন, “রাজনৈতিক জীবনে আমার প্রথম সাফল্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত প্রতি পদক্ষেপে প্রণবদার সান্নিধ্য পেয়েছি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া দিল্লী সফর ভাবাই যেত না।”