করোনা পরিস্থিতিতে দেশে জিএসটি সংগ্রহ ভাল রকম ধাক্কা খেয়েছে। অবস্থা এমনই যে রাজ্যগুলির জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাতে বেগ পেতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তাই জিএসটির ক্ষতিপূরণ না মিটিয়ে কেন্দ্র ধার করতে বলছে রাজ্যগুলিকে। হয় জিএসটি চালুর জন্য ক্ষতি কিংবা তার সঙ্গে কোভিড-পরিস্থিতির কারণে ক্ষতি মিলিয়ে পুরোটাই ধার করতে পারে রাজ্য। তবে এই দুই প্রস্তাবই খারিজ করে দিতে পারে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি। কেরালার মতো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিরও আপত্তি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীতসিংহ বাদল জানিয়েই দিয়েছেন, কেন্দ্রের দু’টি প্রস্তাবের একটিও তাঁরা মানছেন না। ছত্রিশগঢ়, রাজস্থান, পুদুচেরির মতো বাকি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও একই পথে হাঁটতে পারে। কেরালার অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক টমাসও জানিয়েছেন, একটি প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, দিল্লীর উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াও কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেসের পি চিদম্বরমের মতে, কেন্দ্রের প্রস্তাব দু’টি খারিজ করে সব রাজ্যেরই এক সুরে বলা উচিত, কেন্দ্রকেই জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হবে। অধিকাংশ রাজ্য প্রস্তাব দু’টি খারিজ করে দিলে জিএসটি পরিষদে ফের ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, জিএসটি পরিষদে বৃহস্পতিবার সীতারমণ জানিয়ে দেন, চলতি অর্থ বছরে রাজ্যগুলির আয় ৩ লক্ষ কোটি টাকা কম হবে বলে কেন্দ্রের অনুমান। তার মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সেস থেকে আয় হবে। বাকি ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান পূরণ করা কেন্দ্রের পক্ষে মুশকিল। এর মধ্যে জিএসটি চালুর জন্য ক্ষতি ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা কোভিডের কারণে। রাজ্যের সামনে বিকল্প দু’টি। তারা ৯৭ হাজার কোটি টাকা ধার করতে পারে। অথবা পুরো ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকাই ধার করতে পারে।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে শুধু নয়, রাজ্যের সঙ্গে তাঁর দর কষাকষির ধরনেও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা ক্ষুব্ধ। অমিত মিত্রের প্রশ্ন, ‘পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠকে সকলের কথা শোনার পরে শেষ বেলায় অর্থমন্ত্রী কেন এই প্রস্তাব রাখলেন? ক্ষতিপূরণ মেটানোর দায় এড়াতে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত কেন লিখিত ভাবে আগে থেকেই রাজ্যকে জানানো হল না? রাজ্যও তাতে আইনি মতামত নিতে পারত।’ তাঁর যুক্তি, রাজ্য যে বিকল্পই বাছুক, রাজ্যের ঋণের বোঝা বাড়বে। অর্থমন্ত্রী অতিমারিকে দৈবদুর্বিপাক বলছেন। সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ মেটানো বাধ্যতামূলক। সিসৌদিয়ার অভিযোগ, রাজ্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে কেন্দ্র।
অর্থনীতিবিদ এম গোবিন্দ রাওয়ের মতে, রাজ্যের মুশকিল হল, এখন আর জিএসটি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কেন্দ্রের বদলে রাজ্যগুলি ধার নিলেও দেশের জিডিপির তুলনায় কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে সরকারি ঋণ বাড়বেই। গত অর্থ বছরে জিডিপির তুলনায় মোট সরকারি ঋণের হার ছিল ৭২.২ শতাংশ। চলতি বছরে এমনিতেই তা ৮৭.৬ শতাংশে পৌঁছনোর কথা। অথচ কেন্দ্র ২০২৪-২৫-এর মধ্যে তা ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার মতে, রাস্তা তিনটি। এক, টাকা ছাপানো। দুই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে রাজ্যগুলিকে আরও বেশি অগ্রিম ঋণ দেওয়া। তিন, ডাকঘরের বিশেষ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প চালু করে রাজ্যের আয়ের পথ করে দেওয়া। গোবিন্দ রাওয়ের মতে, রাজ্য বাড়তি ঋণ করলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে টাকা ছাপিয়েই ঋণের জোগান দিতে হবে।