একটানা ধরে চলা ভারী বৃষ্টির জেরে ক্রমশই হাতেই বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে উত্তর ভারতের বন্যা পরিস্থিতি। হাঁটু সমান জলে বিপর্যস্ত দিল্লী ও গুরগাঁওয়ের বহু জায়গা। ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরপ্রদেশের ৮৭৫টি গ্রাম। এই নিয়ে মোট ১৬টি জেলায় প্রভাব পড়েছে বন্যার। নিচু এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই জলের তলায়।
আবহাওয়া দফতর বলছে, স্বাভাবিকের চেয়ে ১১ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে দিল্লী-উত্তরপ্রদেশে। আর তার ফলে রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় শহর অঞ্চলগুলিতে তীব্র যানজটে বেহাল নগর জীবন। গাড়ির লাইন পড়ে গেছে সড়কগুলিতে। কোনও কোনও রাস্তা নদীর মতোই ভরে আছে জলে। গ্রামজীবনের অবস্থা আরও শোচনীয়। ঘরছাড়া কয়েক হাজার মানুষ।
১৬ জেলার ৮৭৫টি গ্রামের মধ্যে বহু গ্রামে এখনও পৌঁছনোই যায়নি বলে জানা গেছে সরকারি সূত্রে। রিলিফ কমিশনার সঞ্জয় গয়াল জানিয়েছেন, বহু জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাপ্তি, ঘাগরা, শারদা– তিন নদীর জলই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বহু মাটির বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। পরিবার, গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।
আইএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, আরব সাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমী হাওয়া এবং বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বের হাওয়ার জন্য অঞ্চলগুলিতে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ফলে বুধবার ভোররাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দিল্লী-সহ উত্তর ভারতে। সম্বল, গুলাওটি, সিয়ানা, বুলন্দশহর, খুরজা, কোসলি, বাওয়াল, নুহ, সোহনা, পালওয়াল, হোদাল, ফরিদাবাদ, গুরুগ্রাম, মানেসর, বল্লভগড়— এইসব এলাকা বিপন্ন।
উত্তর-পূর্ব ভারতের অবস্থাও খুব একটা সুবিধাজনক নয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত অন্তত তিনবার বন্যা হয়ে গেছে আসামে। অল্প-বিস্তর প্রায় সব জেলাতেই ঢুকেছে বন্যার জল। এখনও জলমগ্ন রয়েছে অনেক জেলা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র-সহ অসমের একাধিক নদী। মানুষের পাশাপাশি প্রাণ গিয়েছে অসংখ্য গবাদি পশুর। একই অবস্থা বন্যপ্রাণীদেরও।
কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক এবং টাইগার রিজার্ভ আর পবিতরায় বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে অসংখ্য গণ্ডার এবং বাঘ। বন্যার জলের তোড়ে নষ্ট হয়েছে একরের পর একর চাষের জমি। ভেঙে গিয়েছে নদীর পাড় এবং অসংখ্য রাস্তাঘাট। যানচলাচলের পাশাপাশি বিপর্যস্ত জনজীবন।
লাগাতার অতি ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত বিহারও। এখনও জলমগ্ন রয়েছে ১৬টি জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৭৭ লক্ষ মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৫০ পেরিয়েছে অনেকদিন আগেই। বিহারেও অধিকাংশ নদীতে জল বইছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। ভেঙেছে রাস্তাঘাট, নদীর পাড়। চাষের জমির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর ক্ষেত্রেও।