‘কৃষ্ণ’ শব্দের অর্থ ‘কালো’ বা ‘ঘন নীল’। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রে, অনেকেই ‘কৃষ্ণ’ শব্দটি ‘সর্বাকর্ষক অর্থে’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণের মূর্তিগুলিতে তাঁর গায়ের রং সাধারণত কালো এবং ছবিগুলিতে নীল দেখানো হয়ে থাকে। কৃষ্ণ নামের অর্থ-সংক্রান্ত একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ‘মহাভারতের উদ্যোগপর্বে’ (৫।৭১।৪) বলা হয়েছে ‘কৃষ্ণ’ শব্দটি ‘কৃষ’ এবং ‘ণ’ এই দুটি মূল থেকে উৎপন্ন। ‘কৃষ’ শব্দের অর্থ ‘টেনে আনা’ বা ‘কর্ষণ করা’; সেই সূত্রে শব্দটি ‘ভূ’ (অর্থাৎ, ‘অস্তিত্ব’ বা ‘পৃথিবী’) শব্দটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ‘ণ’ শব্দটিকে নিবৃত্তি শব্দের প্রতিভূ ধরা হয়। মহাভারতের উক্ত শ্লোকটি চৈতন্য চরিতামৃত ও শ্রীল প্রভুপাদের টীকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ‘ভূ’ শব্দটির নিহিত অর্থ আকর্ষণীয় অস্তিত্ব; অর্থাৎ কৃষ্ণ শব্দের অর্থ সকল দিক থেকে ‘আকর্ষণীয় ব্যক্তি’। ভাগবত পুরাণের আত্মারাম স্তবে ‘কৃষ্ণের গুণাবলি’ বর্ণিত হয়েছে। বল্লভ সম্প্রদায়ের ব্রহ্মসম্ভব মন্ত্রে কৃষ্ণ নামের মূল শব্দগুলিকে বস্তু, আত্মা ও দিব্য কারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ‘পাপের বিনাশশক্তি’র সঙ্গে সম্পর্কিত বলে উল্লিখিত হয়েছে। বিষ্ণু সহস্রনামের ৫৭তম নামটি হল ‘কৃষ্ণ’, যার অর্থ, আদি শঙ্করের মতে ‘আনন্দের অস্তিত্ব’। কৃষ্ণের একাধিক নাম ও অভিধা রয়েছে। কৃষ্ণের সর্বাধিক প্রচলিত নামদুটি হল ‘গোবিন্দ’ (‘গো-অন্বেষক’) ও ‘গোপাল’ (‘গো-রক্ষাকারী’)। এই নামদুটি ব্রজে কৃষ্ণের প্রথম জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কোনো কোনো নামের আঞ্চলিক গুরুত্বও রয়েছে। যেমন, ‘জগন্নাথ’ নামটি। উড়িষ্যায় এই নামে একটি বিশেষ মূর্তিতে পূজিত হন কৃষ্ণ।
ভাগবত পুরাণে কৃষ্ণকে প্রায়শই বংশী-বাদনরত এক কিশোরের রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার ‘ভগবদ্গীতা’য়, তিনি এক ‘পথপ্রদর্শক’ এবং ‘সহায়ক তরুণ রাজপুত্র’। সমগ্র মহাভারত কাব্যে, তিনি একজন ‘কূটনীতিজ্ঞ’ হিসাবে পাণ্ডবপক্ষে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথের সারথিরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। হিন্দু দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ত। তিনি একাধারে – ‘শিশুদেবতা’, ‘রঙ্গকৌতুকপ্রিয়’, ‘আদর্শ প্রেমিক’, ‘দিব্য নায়ক’ ও ‘সর্বোচ্চ ঈশ্বর’। কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে ‘মহাভারত’, ‘হরিবংশ’, ‘ভাগবত পুরাণ’ ও ‘বিষ্ণু পুরাণ’ গ্রন্থে। ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতে কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অবতাররূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থই প্রাচীনতম গ্রন্থ যেখানে ব্যক্তি কৃষ্ণ বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থের অনেক উপাখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেন কৃষ্ণ। এর ষষ্ঠ পর্বের (‘ভীষ্ম পর্ব’) আঠারোটি অধ্যায় ভগবদ্গীতা নামে পৃথক ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধা অর্জুনকে প্রদত্ত কৃষ্ণের উপদেশাবলির সংকলনই হল ‘ভগবদ্গীতা’। মহাভারতে কৃষ্ণকে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ রূপে দেখানো হলেও, কোথাও কোথাও তাঁর বাল্যলীলারও আভাস দেওয়া হয়েছে। মহাভারতের পরবর্তীকালীন পরিশিষ্ট ‘হরিবংশ’ গ্রন্থে কৃষ্ণের বাল্য ও কৈশোরের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

১৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রচিত ‘পতঞ্জলির মহাভাষ্য’ গ্রন্থে এক শ্লোকে বলা হয়েছে – ‘‘সঙ্কর্ষণের সহচর কৃষ্ণের শক্তি বৃদ্ধি হউক!’’ অন্য একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, ‘‘কৃষ্ণ স্বয়ং যেন চতুর্থ’’ (তিন সহচর সহযোগে কৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে, তিন সহচর সম্ভবতঃ ‘সঙ্কর্ষণ’, ‘প্রদ্যুম্ন’ ও ‘অনিরুদ্ধ’)। অপর এক শ্লোকে ‘রাম’ (‘বলরাম’) ও ‘কেশবের’ (‘কৃষ্ণ’) মন্দিরে যে সকল বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়ে থাকে সেগুলির উল্লেখ রয়েছে। পতঞ্জলির রচনা থেকে বাসুদেবের কংসবধ (‘কৃষ্ণ-কংসোপাচারম্’) উপাখ্যানের নাট্যাভিনয় ও মূকাভিনয়ের বিবরণ পাওয়া যায়।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে পাঁচজন বৃষ্ণি নায়কের পূজার প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন ‘বলরাম’, ‘কৃষ্ণ’, ‘প্রদ্যুম্ন’, ‘অনিরুদ্ধ’ ও ‘শাম্ব’। মথুরার নিকটবর্তী ‘মোরা’ থেকে পাওয়া একটি শিলালিপিতে মহান সত্রপ ‘রাজুভুলা’র পুত্রের উল্লেখ এবং এক ‘বৃষ্ণি’র চিত্র পাওয়া গেছে। ইনি সম্ভবত ‘বাসুদেব’ এবং ‘পঞ্চযোদ্ধা’র অন্যতম। ‘ব্রাহ্মী লিপি’তে লিখিত এই শিলালিপিটি বর্তমানে মথুরা সংগ্রহালয়ে রক্ষিত আছে।
একাধিক পুরাণে কৃষ্ণের জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে বা তাঁর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থদ্বয়ে কৃষ্ণের জীবনের সর্বাপেক্ষা বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এই দুই পুরাণে বর্ণিত ধর্মতত্ত্বই গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদগুলির মূল ভিত্তি। ভাগবত পুরাণ গ্রন্থের প্রায় এক চতুর্থাংশ জুড়ে রয়েছে কৃষ্ণ ও তাঁর ধর্মোপদেশের স্তুতিবাদ। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে লিখিত ‘যক্ষের নিরুক্ত’ নামক বুৎপত্তি-অভিধানে ‘অক্রুরের শ্যামন্তক মণি’র একটি উল্লেখ পাওয়া যায়, যার মূল সূত্র কৃষ্ণ-সংক্রান্ত একটি সুপরিচিত পৌরাণিক কাহিনি। ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’ ও ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থদ্বয়ে কৃষ্ণকে ‘বৃষ্ণিবংশজ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ ‘ঋগ্বেদে’ কৃষ্ণের কোনো উল্লেখ নেই। তবে ‘রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর’ ঋগ্বেদের একটি শ্লোকে (৮।৯৩।১৩) উল্লিখিত ‘দ্রপ্স…কৃষ্ণ’ (‘কালো বিন্দু’) কথাটিকে দেবতা কৃষ্ণের উল্লেখ বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ কয়েকজন প্রাগৈতিহাসিক দেবতার সঙ্গে কৃষ্ণের মিল খুঁজে পেয়েছেন। ১৯২৭-৩১ সাল নাগাদ ম্যাকে মহেঞ্জোদাড়োতে একটি চিত্রলিপি আবিষ্কার করেছিলেন। এই চিত্রে দুজন ব্যক্তি একটি গাছ ধরে আছে এবং বৃক্ষ দেবতা তাদের দিকে বাহু প্রসারিত করে রেখেছেন। আবিষ্কারক এই চিত্রটিকে কৃষ্ণের ‘যমলার্জুন-লীলা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী গবেষক ও ঐতিহাসিকরা যে তথ্য পেয়েছেন ও গণিতের জটিল হিসাব করে যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে মনে করা হয় যে, সম্ভবতঃ কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ই অথবা ২১শে আগস্ট বা এই সময়ের মধ্যবর্তী কোনও তারিখে। মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। তিনি ‘বসুদেব’ ও ‘দেবকী’র ‘অষ্টম পুত্র’। তাঁর পিতামাতা উভয়ের ‘যাদববংশীয়’। কৃষ্ণ মথুরার যাদববংশের ‘বৃষ্ণি’ গোত্রের মানুষ ছিলেন। দেবকীর দাদা ‘কংস’, তাঁদের পিতা ‘উগ্রসেন’কে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তাঁর মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাঁদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তাঁর সপ্তম গর্ভ ‘রোহিণী’কে প্রদান করলে, ‘বলরামের’ জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে বসুদেব তাঁকে গোকুলে তাঁর পালক মাতাপিতা ‘যশোদা’ ও ‘নন্দের’ কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন ‘বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং ‘সুভদ্রা’ (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)। একই ভাবে হিসাব করে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু সাল ও তারিখেরও মোটামুটি একটি আন্দাজ পাওয়া যায়, সম্ভবতঃ তাঁর মৃত্যুর দিন খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০২ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী।
কৃষ্ণের ১৬,১০৮ জন স্ত্রী ছিলেন । যাঁদের মধ্যে ‘বৈবাহিকসূত্রে প্রধান স্ত্রী’ ছিলেন আটজন এবং বাকি ১৬,১০০ জন ছিলেন ‘নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার হওয়া ধর্মাবতার কৃষ্ণে সমর্পিত ও তাঁর অধিকারপ্রাপ্ত নারী’। কিন্তু এদের প্রত্যেককে ‘দেবী লক্ষ্মীর অবতার’ হিসেবে মনে করা হয়।
‘প্রধান আট স্ত্রী’র গর্ভেই কৃষ্ণ দশটি পুত্র এবং একটি কন্যার জন্মদান করেছিলেন বলে বিভিন্ন পুরান ও প্রাচীন পুঁথিতে লিখিত আছে। কৃষ্ণের প্রধান আট মহিষীর গর্ভজাত সন্তানদের নাম নিম্নরূপ –
‘কৃষ্ণ’ এবং মহিষী ‘রুক্মিণী’র প্রথম পুত্র ছিলেন প্র‘দ্যুম্ন’। এছাড়া রুক্মিণীর গর্ভজাত কৃষ্ণের অন্যান্য সন্তানেরা হলেন ‘চারুদেষ্ণ’, ‘সুদেষ্ণ’, ‘চারুদেহ’, ‘সুচারু’, ‘চারুগুপ্ত’, ‘ভদ্রচারু’, ‘চারুচন্দ্র’, ‘বিচারু’ ও ‘চারু’। কৃষ্ণপুত্র ‘প্রদ্যুম্ন’ এবং ‘রুক্মিণীর ভ্রাতা’ ‘রুক্মীর কন্যা’ ‘রুক্মাবতী’র পুত্র হলেন পুরাণে উল্লিখিত বীর ‘অনিরুদ্ধ’।
কৃষ্ণের আরেক মহিষী ‘সত্যভামা’র গর্ভে কৃষ্ণ যে দশটি সন্তান লাভ করেছিলেন তাঁরা হলেন ‘ভানু’, ‘সুভানু’, ‘স্বরভানু’, ‘প্রভানু’, ‘ভানুমান’, ‘চন্দ্রভানু’, ‘বৃহদ্ভানু’, ‘অতিভানু’, ‘শ্রীভানু’ এবং ‘প্রতিভানু’।
জাম্ববানের কন্যা ‘জাম্ববতী’র গর্ভে কৃষ্ণ যে দশটি সন্তান লাভ করেছিলেন তাঁরা হলেন ‘শাম্ব’, ‘সুমিত্র’, ‘পুরুজিৎ’, ‘শতজিৎ’, ‘সহস্রজিৎ’, ‘বিজয়’, ‘চিত্রকেতু’, ‘বসুমান’, ‘দ্রাবিড়’ ও ‘ক্রতু’। এই পুত্রেরা কৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন।
‘কৃষ্ণ’ ও ‘নগ্নাজিতি’র মিলনে জন্ম হয় ‘বীর’, ‘চন্দ্র’, ‘অশ্বসেন’, ‘চিত্রাগু’, ‘বেগবান’, ‘বৃষ’, ‘অম’, ‘শঙ্কু’ এবং ‘কুন্তী’ (কৃষ্ণের পিসি ও পাণ্ডবদের মাতা কুন্তী নন), এই দশটি সন্তানের।
‘শ্রুত’, ‘কবি’, ‘বৃষ’, ‘বীর’, ‘সুবাহু’, ‘ভদ্র’, ‘শান্তি’, ‘দর্শ’, ‘পূর্ণাংশ’ এবং ‘সোমক’ ছিলেন ‘কৃষ্ণ’ ও ‘কালিন্দি’র সন্তান।
‘মদ্রা’ নামক মহিষীর গর্ভে কৃষ্ণের ঔরসজাত সন্তানেরা ছিলেন ‘প্রঘোষ’, ‘গাত্রবান’, ‘সিংহ’, ‘বল’, ‘প্রবল’, ‘উর্ধগ’, ‘মহাশক্তি’, ‘সাহা’, ‘ওজ’ এবং ‘অপরাজিত’।
‘মিত্রবিন্দা’ ও কৃষ্ণের মিলনে যে দশ সন্তানের জন্ম হয়, তাঁরা হলেন ‘বৃক’, ‘হর্ষ’, ‘অনিল’, ‘গৃধ্র’, ‘বর্ধন’, ‘উন্নাদ’, ‘মহাংশ’, ‘পবন’, ‘বহ্নি’ এবং ‘ক্ষুধী’।
‘ভদ্রা’র গর্ভজাত কৃষ্ণের সন্তানেরা হলেন ‘সংগ্রামজিৎ’, ‘বৃহৎসেন’, ‘সুর’, ‘প্রহরণ’, ‘অরিজিৎ’, ‘জয়’, ‘সুভদ্র’, ‘বাম’, ‘আয়ুর’ ও ‘সাত্যক’।
কৃষ্ণের আরেক মহিষী ‘রোহিণী’র গর্ভে কৃষ্ণ লাভ করেছিলেন ‘দীপ্তিমান’, ‘তাম্রতপ্ত’ ও অন্যান্য আটজন সন্তান।
‘কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব’ যদি ‘ভারত’ নামক একটি দেশের ধারণা তৈরি করে থাকেন, তবে ‘রাষ্ট্র’ নামক ভারতের আদি প্রতিষ্ঠাতা ‘কৃষ্ণ বাসুদেব’। ‘মহাভারতের মহারণ’ কেবল কৃষ্ণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, এমন মনে করা এক ধরনের সরলীকরণ। বরং বলা যেতে পারে, মহাভারত আসলে সেই ছাতা যেখানে স্বাধীন রাজ্যগুলো এসে জড়ো হচ্ছে একটি বৃহৎ শক্তির ছত্রছায়ায়। আপাতদৃষ্টিতে সেই বৃহৎ শক্তি ‘পাণ্ডব ভ্রাতৃগণ’, পারমার্থিক দৃষ্টিতে সেই মহান শক্তি ‘বসুদেবপুত্র শ্রীকৃষ্ণ’। তিনিই ‘রাষ্ট্র’, তিনিই ‘মহাভারত’। ‘ভীষ্মপর্বে’ কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন, রাজাতেই মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ, তাই রাজা হলেন শ্রীভগবানের বিভূতিস্বরূপ। আবার তিনিই বলছেন, নরগণের মধ্যে আমিই নরাধিপ – ‘‘নরাণাঞ্চ নরাধিপম্’’। নর বা মানুষ রাজা হলে তাঁর পূর্ণ বিকাশ ঘটে। সেই রাজাদের রাজা হলেন ‘বাসুদেব’। কী ভাবে?
কৃষ্ণের ‘প্রপিতামহী’ এবং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের ‘পিতামহী’ ছিলেন ‘বৈশ্যকন্যা’। কৃষ্ণের প্রপিতামহী ছিলেন ‘কার্তবীর্যার্জুনের স্ত্রী’, আর ‘ব্যাসদেবের পিতামহী’, অর্থাৎ ‘পরাশর মুনির মা’ ছিলেন ‘বশিষ্ঠর পুত্রবধূ’ ‘অদৃশ্যন্তী’। ‘শ্রীকৃষ্ণের প্রপিতামহ’ ছিলেন ‘যদুবংশীয় রাজা’ ‘দেবমীঢ়’, যিনি ‘শূরের পিতা’ ও ‘বসুদেবের পিতামহ’। (সূত্র: মহাভারত, ৭/১১৯/৬, ৭/১৪৪/৬০৩০)। দেবমীঢ়ের এক জন স্ত্রী ‘ক্ষত্রিয়কন্যা’ এবং অন্য স্ত্রী ছিলেন ‘বৈশ্যকন্যা’। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মান ‘শূরসেন’ এবং অন্য স্ত্রীর সন্তান হলেন ‘পর্জন্য’। ‘বশিষ্ঠপুত্র শক্ত্রি’র বিবাহ হয় ‘বৈশ্য চিত্রমুখের কন্যা’ ‘অদৃশ্যন্তী’র সঙ্গে। ‘ব্যাসপিতা পরাশর’ হলেন ‘শক্ত্রি-অদৃশ্যন্তীর পুত্র’। (মহাভারত, অনুশাসনপর্ব, ৫৩/১৭; পৃষ্ঠা ৬৯২, দ্য জার্নাল অব দ্য গঙ্গানাথ ঝা রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভলিউম ২৬, ১৯৭০)।
মহাভারতের আদিপর্বের স্বয়ম্বর পর্বাধ্যায়ে প্রথম কৃষ্ণের দর্শন পাওয়া যায়। ‘বারণাবতের জতুগৃহ’ থেকে পালিয়ে তপস্বীর বেশে কুন্তী-সহ পাণ্ডবরা ‘পাঞ্চাল’ ও ‘কীচক’ দেশের ভিতর দিয়ে ‘একচক্রা’ পৌঁছে সেখানকার অধিপতি ‘বক’ নামক ‘রাক্ষস’কে হত্যা করলেন। তার পর ‘সোমাশ্রয়ণে’ ‘গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ’কে পরাজিত করে পাণ্ডবরা গেলেন ‘দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে’। ‘পাঞ্চালী’কে (‘পাঞ্চাল’কেও) জয় করে যখন কুম্ভকারের কর্মশালায় ‘কুন্তী’র কাছে নিয়ে এলেন, তখন কৃষ্ণ ও বলরাম দুই ভাই সেখানে পৌঁছলেন। তাঁরা পিসি কুন্তীকে প্রণাম করে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলেন। যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা আমাদের চিনলে কী প্রকারে? কৃষ্ণ হেসে জবাব দিলেন, স্বয়ম্বর সভায় দেখেই চিনেছি; অগ্নি গুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পায়, পাণ্ডব ভিন্ন কার এত বিক্রম যে অত শক্তিশালী রাজাদের পরাজিত করে দ্রৌপদী নামক ধন আহরণ করে! পাণ্ডবরা অগ্নি, তাঁরা আপাতত গোপনে থাকুন, এতে সমৃদ্ধি হবে। এই কথা বলে কৃষ্ণ-বলরাম বিদায় নিলেন।
বেশ কিছুকাল গোপনে থাকার পরে পাণ্ডবরা কৃষ্ণ ও বিদুরের পরামর্শে হস্তিনাপুরে রাজত্বের দাবি নিয়ে এলে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্মকে সামনে রেখে পাণ্ডবদের অর্ধেক রাজত্ব দিতে চাইলেন এবং তাঁদের ‘খাণ্ডবপ্রস্থে’ বাস করতে বললেন। কিন্তু সে এলাকা তো সভ্য মানুষের বাসের অনুপযুক্ত। ‘পক্ষী’, ‘সর্প’, ‘দানব’রা থাকে সেখানে। ঘন জঙ্গল। বন ধ্বংস না করলে নগর হবে কী প্রকারে! কৃষ্ণ বললেন, চিন্তা কোরো না।
কয়েক দিন পর অগ্নি এক বহুভোজী ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে এসে কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বললেন, আমি ‘খাণ্ডববন’ দগ্ধ করতে বাসনা করি। ইন্দ্রের সখা ‘তক্ষক নাগ’ এখানে থাকে বলে পেরে উঠি না। তোমরা উত্তম ধনুর্ধর, যদি এই বন পুড়িয়ে দিতে পারো, বড় ভাল হয়। ‘শ্বেতকী রাজা’র নিরন্তর যজ্ঞে প্রচুর ঘৃতপান করে এমন অরুচি হয়েছে যে প্রাণীদের মেদ ভক্ষণ না করলে সুস্থ হব না। খেয়াল রেখো, কোনও প্রাণী যেন খাণ্ডববনের বাইরে যেতে না পারে। কৃষ্ণ ও অর্জুন সেই বন দগ্ধ করলেন, প্রাণীরা বেরিয়ে যেতে চাইলে তাদের ধরে পুনরায় জ্বলন্ত বনে ফেলে দেওয়া হল। জায়গা ফাঁকা হল, অধিবাসীদের পুনর্বাসনের ঝামেলাও থাকল না। ‘তক্ষক’ সে সময় বনে ছিলেন না। তাঁর পুত্র ‘অশ্বসেন’, ‘ময়দানব’, ‘চারটি শার্ঙ্গক পক্ষী’ – এই ছয় জন ছাড়া খাণ্ডবের আর কেউ জীবিত রইল না। অরণ্য ধ্বংস করে জনপদ গড়ে তোলার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। ইতিমধ্যে ‘মহাভারতের আদিপর্বে’ই অর্জুনের সঙ্গে ‘কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রা’র বিবাহ হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের ভাগিনেয় ‘অভিমন্যু’ জন্মেছেন, দ্রৌপদী ‘পঞ্চপুত্র’ লাভ করেছেন।
‘ময় দানব’ কৃতজ্ঞ চিত্তে কৃষ্ণের কথামতো মনুষ্য অনুকরণের অসাধ্য সভা বানাতে আরম্ভ করলেন। ‘মৈনাক পর্বত’ থেকে মণিরত্ন এল। কৃষ্ণ এই সময় পিতা বসুদেবের কাছে ‘দ্বারকা’য় গেলেন। কৃষ্ণের পরামর্শে দগ্ধ বনের উপর গড়ে উঠল ‘ইন্দ্রপ্রস্থ নগর’। ইতিমধ্যে নারদ এসে যুধিষ্ঠিরকে রাজধর্ম বিষয়ে নানা উপদেশ দিলেন এবং ‘রাজসূয় যজ্ঞ’ করতে বললেন। দ্রুতগামী রথে দূত পাঠিয়ে দ্বারকা থেকে কৃষ্ণকে আনানো হল ইন্দ্রপ্রস্থে। শুরু হল মন্ত্রপর্বাধ্যায়। কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, সব তো ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের মাথার উপরে রয়েছেন ‘জরাসন্ধ’ – তাঁর ভয়ে সবাই কাঁপে, তিনিই প্রকৃত সম্রাট। ‘করূষ’ দেশের ‘বক্র’, ‘করভ’, ‘মেঘবাহন’, ‘মুর’, ‘ভগদত্ত’ সকল রাজা তাঁর অনুগামী। পশ্চিম ও দক্ষিণ দেশের রাজা ‘পুরুজিৎ’ ছাড়া কেউ আমাদের পক্ষে নেই। ‘বঙ্গ-পুণ্ড্র-কিরাতের রাজা পৌণ্ড্রক’, ‘ভোজরাজা ভীষ্মক’ প্রমুখ জরাসন্ধকে শ্রেষ্ঠ বলে মানেন।
শ্রীকৃষ্ণের রাজনীতি বুঝতে এ বার মগধরাজ জরাসন্ধের পুরো পরিচয় জানা প্রযোজন। তাঁর দুই স্ত্রী ‘অস্তি’ ও ‘প্রাপ্তি’, এঁদের বাবা, মানে জরাসন্ধের শ্বশুর মথুরার রাজা ‘কংস’। তাঁকে কৃষ্ণ বহু আগেই পরাস্ত করেছেন। ‘মথুরাধিপতি’, শূরসেন সাম্রাজ্যের অধিপতি ‘কংস’ একই সঙ্গে ‘যাদব’, ‘অন্ধক’, ‘বৃষ্ণি’ ও ‘ভোজদের রাজা’, তাঁকে বধ করে তিনটি রাজ্যই কৃষ্ণের অধিকারে। জরাসন্ধের আর দুই অনুগত নৃপতি ‘হংস’ ও ‘ডিম্ভক’কে তত দিনে ইহজগৎ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণ – অপ্রত্যক্ষ ভাবে।
কিন্তু রাজনীতির খেলা তখনও বাকি। শ্রীকৃষ্ণ উসকে দিলেন যুধিষ্ঠিরকে, ‘‘এক সময় জরাসন্ধের ভয়ে রৈবতক পর্বতের এক দুর্গম জায়গায় বহু দিন লুকিয়ে ছিলাম। অন্ধক, বৃষ্ণিরা আমার সঙ্গে আছে, আর আছে আমার যাদব আঠারো হাজার ভাই, পুত্রগণ এবং আপনারা। জরাসন্ধকে না সরাতে পারলে রাজসূয় যজ্ঞ সম্ভব নয়। শিবের অনুগ্রহপ্রাপ্ত জরাসন্ধের অধীনে ছিয়াশি জন রাজা রয়েছেন। কেবল চোদ্দো জন রাজা তাঁর বশে নেই।’’
যুধিষ্ঠির ভয় পেয়ে রাজসূয় যজ্ঞের সংকল্প ত্যাগ করতে উদ্যত হলে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, চিন্তা করবেন না মহারাজ যুধিষ্ঠির! কংসের জামাই, মগধরাজ জরাসন্ধকে গুপ্ত উপায়ে বধ করব। জরাসন্ধ শুধু প্রজাহিতৈষী রাজা নন, তাঁর রাজ্যও সমৃদ্ধিশালী, সম্মুখ যুদ্ধে তাঁকে হারানো অসম্ভব। তিনি মহাদেবকে প্রত্যক্ষ করতে পারেন।
কৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন মগধরাজ জরাসন্ধকে গুপ্ত উপায়ে হত্যা করলেন এবং জরাসন্ধের পুত্রকে অধীনস্থ রাজা করলেন। জরাসন্ধের অধীন ছিয়াশি জন রাজা যুধিষ্ঠিরকে কর দিতে সম্মত হলেন। আর কোনও বড় বাধা রইল না।
মহাভারতের কাহিনি অনুসরণ করলে দেখা যায়, সেই সময় আর্যাবর্তে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল মূলত দু’টি অক্ষে বিভক্ত ছিল। এক দিকে ছিলেন প্রবল পরাক্রান্ত মগধরাজ জরাসন্ধ ও তাঁর মিত্রগোষ্ঠী। যাঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁর জামাতা কংস, চেদিরাজ শিশুপাল, সৌভপতি শাল্ব, মহাবীর রুক্মী, পুন্ড্রবর্ধনের অধিপতি পৌণ্ড্রক বাসুদেব, প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরকাসুর ইত্যাদি। অন্য পক্ষে ছিলেন যাদব কৃষ্ণ গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ কৃষ্ণ ও পাণ্ডবপক্ষ। জরাসন্ধ ছিলেন আর্যাবর্তের সর্বাধিক প্রভাবশালী রাজা। আর্যাবর্তের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবীন ও তরুণ কৃষ্ণ সেই সময় নিজের প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হতে শুরু করেন। পাণ্ডব ও কৌরবদের জ্ঞাতিবিরোধের মধ্যে প্রবেশ করে তিনি পাশে পেয়ে যান পাণ্ডবপক্ষকে, যাঁরা পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন কৃষ্ণের পরম বশংবদ। নিজ প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, কৌশল, সমরনীতি ও কূটনীতির সফল প্রয়োগে একে একে তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেন কৃষ্ণ। যে কোনও কালের প্রেক্ষাপটে, যে কোনও রাজনৈতিক নেতার পক্ষে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক। সেখানে তিনি কতটা ন্যায় আর কতটা অন্যায়ের আশ্রয় নিয়েছেন তা তর্কসাপেক্ষ। তবে এ বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকতে পারে না, কৃষ্ণ সে সময়ে হয়ে উঠেছিলেন ‘কিং মেকার’। আর যে হেতু পাণ্ডবপক্ষ কৃষ্ণের বশংবদ, তাই কৃষ্ণ প্রয়াসী ছিলেন যুধিষ্ঠিরকে আর্যাবর্তের একচ্ছত্র সম্রাটরূপে অধিষ্ঠিত করতে।
তবে কৃষ্ণ শুধুমাত্র তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিপাতিত করে ক্ষান্ত হননি, তিনি ভারতভূমি থেকে শক্তিশালী অনার্যদেরও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন – ব্রাহ্মণ্যশক্তি ও তার অনুগামী আর্য ক্ষত্রিয়দের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। ঘটোৎকচ বধের পর পাণ্ডবরা শোকাহত হয়ে পড়লেও কৃষ্ণ খুশি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “অর্জুন তোমাদের হিতের জন্য আমি মহাবীর জরাসন্ধ, শিশুপাল এবং ব্যাধজাতীয় একলব্যকে বধ করেছি বা করিয়েছি। হিড়িম্ব, কির্মির, বক, অলায়ুধ এবং ঘটোৎকচকেও নিপাতিত করিয়েছি— একৈকশো নিহতাঃ সর্ব এতে। জরাসন্ধ, শিশুপাল, একলব্যরা দুর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধ করলে আজ এত সহজে যুদ্ধ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হত না। আর কর্ণ যদি শক্তি দ্বারা ঘটোৎকচকে বধ না করতেন, তবে আমিই তাকে বধ করতাম। কিন্তু তোমাদের প্রীতির জন্য আমি পূর্বে ওকে বধ করিনি। কারণ এ রাক্ষসটাও ব্রাহ্মণদ্বেষী, যজ্ঞবিরোধী, ধর্মলোপী, পাপাত্মা ছিল।” অথচ মহাভারতে এমন কোনও ঘটনা আমরা দেখতে পাই না, যার ভিত্তিতে বলা যায় ঘটোৎকচ ব্রাহ্মণদ্বেষী, যজ্ঞবিরোধী, ধর্মলোপী, পাপাত্মা। কৃষ্ণের মূল উদ্দেশ্য ছিল শক্তিশালী অনার্যদের নিপাতিত করে নিজের প্রাধান্য নিষ্কণ্টক করা।
কৃষ্ণ পাণ্ডবদের দিগ্বিজয়ের পরামর্শ দিয়ে দ্বারকায় চলে গেলেন। পাণ্ডব ভাইরা বেরোলেন রাজ্য জয় করতে। শুধু যুধিষ্ঠির রইলেন ইন্দ্রপ্রস্থে। কৃষ্ণের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্জুন উত্তরে গিয়ে কুলিন্দ, আনর্ত, শাকলদ্বীপ জয় করে প্রাগজ্যোতিষপুরে গেলেন। সেখানকার রাজা ভগদত্ত তাঁর কিরাত চীন প্রভৃতি দেশের সৈন্য নিয়েও পরাজিত হলেন। পরে কৃষ্ণ কামরূপের রাজা নরক ও শোণিতপুরের রাজা বাণকে পরাজিত করেছিলেন। উত্তর-পূর্ব ভারত শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর আত্মীয়, সখা পাণ্ডবদের হস্তগত হল।
অতঃপর অর্জুন কাশ্মীর, লোহিতদেশ, ত্রিগর্ত, সিংহপুর, চোল, কম্বোজ, গন্ধর্ব, হরিবর্ষ ইত্যাদি রাজ্য জয় করলেন। বাসুদেবের ইচ্ছা অনুযায়ী ভীমসেন পাঞ্চাল, বিদেহ, চেদি, অযোধ্যা, পুণ্ড্র, তাম্রলিপ্ত, সুহ্ম প্রভৃতি জয় করলেন। সহদেব মৎস্য, অবন্তী, ভোজকট, কিষ্কিন্ধ্যা, মাহীষ্মতী, ত্রিপুরা, দ্রাবিড়, কেরল, অন্ধ্র, কলিঙ্গ, লঙ্কার রাজাদের পরাধীন করলেন। নকুল মালব, মদ্র, দ্বারকা প্রমুখ রাজ্যের অধিপতিদের কর আদায় করলেন। কৃষ্ণের উপদেশ মতো রাজসূয় যজ্ঞ শুরু হল।
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব ঋত্বিকদের আনলেন। উপস্থিত হলেন কৌরবগণ। সমস্ত পরাজিত রাজারা এসে পৌঁছলেন। ব্যাস হলেন ব্রহ্মা – প্রধান ঋত্বিক। ভীষ্ম-দ্রোণ সব কিছুর দেখাশোনা করতে লাগলেন। দুঃশাসন খাদ্য বিভাগ, অশ্বত্থামা অভ্যর্থনা, বিদুর ব্যয়ের দায়িত্বে। যুধিষ্ঠির হলেন সম্রাট। কিন্তু কে হবেন পুরুষোত্তম? সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ কে? ভীষ্ম জানেন, যুধিষ্ঠিরের সম্রাট হওয়ার পেছনে আসল মস্তিষ্ক হলেন বাসুদেব— তিনি রাজা বানানোর কারিগর। যুধিষ্ঠিরকে পিতামহ ভীষ্ম বললেন, তেজ, বল ও পরাক্রমে বৃষ্ণিকুলসম্ভব কৃষ্ণই শ্রেষ্ঠ, তাঁকেই অর্ঘ্য দাও। সহদেব তা দিলেন এবং কৃষ্ণ সেই অর্ঘ্য গ্রহণ করলেন।
চেদিরাজ শিশুপাল গর্জে উঠলেন। তিনি ভীষ্ম ও যুধিষ্ঠিরকে ভর্ৎসনা করে বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণীর পতি শ্রীকৃষ্ণের নিন্দা করতে লাগলেন। কৃষ্ণ কেন সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে পুরুষোত্তমের মর্যাদা পাবেন? তিনি তো রাজাই নন। বয়োবৃদ্ধ হিসাবে বসুদেব এই সম্মান পেতে পারেন, পাণ্ডবহিতৈষী হিসাবে দ্রুপদ এই উপাধির যোগ্য, আচার্য হিসাবে দ্রোণ, পুরোহিত ধরলে দ্বৈপায়ন, পুরুষশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম আছেন, সর্বশাস্ত্রবিদ অশ্বত্থামা রয়েছেন, রাজেন্দ্র দুর্যোধন উপস্থিত। কৃষ্ণের অর্চনা যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে রাজাদের ডাকলেন কেন!
চেদিরাজ আরও জানালেন, তাঁরা রাজা যুধিষ্ঠিরকে কর দিয়েছেন, কৃষ্ণকে নয়। আসলে এই সভা কৃষ্ণকে উপহাস করছে। নপুংসকের বিবাহ, অন্ধের রূপদর্শনের সঙ্গে তুলনীয় হল কৃষ্ণের রাজা না হয়েও রাজযোগ্য এই পূজা। শিশুপাল সভা ত্যাগ করতে উদ্যত হলেন। ভীষ্ম তখন বললেন,
‘‘অস্যাং হি সমিতৌ রাজ্ঞামেকমপ্যজিতং যুধি।
ন পশ্যামি মহীপালং সাত্বতীপুত্রতেজসা।।’’
এই সভায় এমন এক জন রাজাকেও দেখছি না যিনি কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হননি। ভীষ্ম এও বললেন, কৃষ্ণ স্বয়ং হৃষীকেশ, তাঁর পূজায় সকলের পূজা সম্পন্ন হয়, তিনি সনাতন পরমাত্মা। গঙ্গাপুত্র কৃষ্ণের দৈহিক শক্তির অনন্যসাধারণ বর্ণনা দিলেন। বহু রাজা শিশুপালকে সমর্থন করলে সেই সব নৃপতিদের ভীষ্ম শৃগাল বলে গালি দিলেন, শিশুপালকে সারমেয় বললেন। শিশুপাল কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। তিনি ভীষ্মকে বললেন, জ্ঞানবৃদ্ধ হয়ে গোপের স্তব করতে চাও? তুমি কুলাঙ্গার! শাস্ত্রে আছে, স্ত্রী-গো-ব্রাহ্মণ-অন্নদাতা-আশ্রয়দাতাকে হত্যা করতে নেই। কৃষ্ণ গোহত্যা, স্ত্রীহত্যা করেছে। হে ভীষ্ম, তুমি প্রাজ্ঞ? তুমি ক্লীব, তোমার আবার ধর্ম! এই কৃষ্ণ অন্যায়ভাবে ধার্মিক রাজা জরাসন্ধকে হত্যা করেছে, একে আমরা মানব না। কৃষ্ণ বুঝলেন, শিশুপালের নেতৃত্বে বিরাট রাজবাহিনী তাঁকে আক্রমণ করতে উদ্যত। তখন বাসুদেব সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের শিরশ্ছেদ করলেন। রাজারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও ভয়ে কিছু বলতে পারলেন না। রাজসূয় যজ্ঞ শেষ হল।
এর পর দ্যূতপর্ব্যাধ্যায়। জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে বনবাসে গিয়েছেন পাণ্ডবগণ। পাশা খেলায় এই লাঞ্ছনা হত না যদি কৃষ্ণ সেখানে থাকতেন। সেই সময় বাসুদেব শাল্বনগরের অধিপতি সৌভের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। সৌভকে হত্যা করার পর পাণ্ডবদের দুঃসংবাদ শুনে কাম্যকবনে গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে। পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাস শেষ হলে স্বয়ং কৃষ্ণ ভাগিনেয় অর্জুনপুত্র অভিমন্যুকে নিয়ে গিয়েছেন বিরাটরাজকন্যা উত্তরার সঙ্গে বিবাহ দিতে। বাসুদেবের নেতৃত্বে বিবাহোৎসবের পর দিন বিরাট রাজার সভায় বসলো মন্ত্রণা, কী উপায়ে হস্তিনাপুর দখল করা যায়। কৃষ্ণ প্রস্তাব দিলেন, হস্তিনায় দূত পাঠানো হোক অর্ধেক রাজত্বের দাবি নিয়ে। বলরাম আপত্তি করলেন। কিন্তু কৃষ্ণের কথা মতো দ্রুপদের পুরোহিত দূত হয়ে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গেলেন। বিরাট রাজ্য থেকে কৃষ্ণ-বলরাম বেরিয়ে পড়লেন দ্বারকার উদ্দেশে। বাসুদেব জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে। সম্মুখ সমর।
মহাভারতের মহারণে দুর্যোধন ও অর্জুন দুজনেই কৃষ্ণকে চান নিজ পক্ষে। কিন্তু অর্জুন পেলেন অযুধ্যমান বাসুদেবকে, দুর্যোধন লাভ করলেন অর্বুদসংখ্যক নারায়ণী সেনা। কৃষ্ণ অর্জুনের সারথি হলেন, যা ক্ষত্রিয়ের পক্ষে নিন্দনীয়। কৃষ্ণ যুদ্ধে অপরাজেয়। ইতিমধ্যে তিনি গান্ধার, ভোজ, পাণ্ড্য, কলিঙ্গ, বারাণসী, প্রাগজ্যোতিষ প্রভৃতি দেশের রাজাদের পরাজিত করেছেন। মহাযুদ্ধের আয়োজন চলছে, হস্তিনা দখলের লড়াই।
যুদ্ধায়োজনের এমনই এক দিনে কৃষ্ণ ও অর্জুন একসঙ্গে মদ্যপান করছেন। সেই সময় সেখানে এলেন সঞ্জয়। তিনি কৃষ্ণার্জুনের পদপ্রান্তে বসলেন। আসবপানে মত্ত কৃষ্ণ সঞ্জয়কে বললেন, ধৃতরাষ্ট্রকে ক’টা দিন প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ করে নিতে বলো, স্বয়ং আমি অর্জুনের সহায়। অর্জুনকে পরাজিত করবেন, এই আশা করা মানে ধৃতরাষ্ট্র কালগ্রাসে পতিত হয়েছেন। এর পরের দিন উপপ্লব্য নগর থেকে কৃষ্ণ হস্তিনার দিকে রওনা দিলেন। ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, পাণ্ডবদের রাজত্বের অংশ দিন। দুর্যোধন জানালেন, সূচ্যগ্র ভূমিও তিনি দেবেন না। পাঁচটি গ্রামও (কুশস্থল, মাকণ্ডী, অবিস্থল প্রভৃতি) পাণ্ডবদের দিতে সম্মত হলেন না কৌরবরা। কৃষ্ণ বৈবাহিক দুর্যোধনের আতিথেয়তা গ্রহণ না করে বিদুরের বাড়িতে উঠলেন।
উপপ্লব্য নগরে ফিরে বাসুদেব কৃষ্ণ পাণ্ডবদের বললেন – সাম, দান, ভেদ, দণ্ডনীতি সব প্রয়োগ করেছি কিন্তু যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব নয়। ভীষ্ম-দ্রোণ-অশ্বত্থামা-কর্ণ প্রভৃতি বীরসকল দুর্যোধনের পক্ষে আছেন। সংখ্যায় অল্প হলেও আমরা ক্লীব বা কাপুরুষ নই, সুতরাং মহারণ হবে, ক্ষত্রিয় বীরের পক্ষে সমর সমীচীন।
যুদ্ধের ঠিক আগের দিন কৌরবদের দূত হয়ে পাণ্ডব শিবিরে এলেন শকুনিপুত্র ঊলূক। তিনি এসে কৃষ্ণকে কংসের ভৃত্য, গোবধকারী ইত্যাদি ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলেন। দু’পক্ষ তেতে উঠল। শুরু হল বাচিক যুদ্ধ।
কুরুক্ষেত্রের অস্ত্রযুদ্ধের দিন বেজে উঠল বাসুদেবের পাঞ্চজন্য আর অর্জুনের দেবদত্ত শঙ্খ। অর্জুন তবুও সম্মত হলেন না আত্মীয়বন্ধুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুনের এই বিষাদ ক্লীবতা। তার পর সেই বিশ্বরূপদর্শন এবং ভীষ্মপর্বের কৃষ্ণার্জুনসংবাদ, যাকে ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ বলা হয়।
কুরুক্ষেত্রের মহারণে বৈশ্যরা কৃষ্ণের পক্ষে ছিলেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কৃষ্ণের প্রপিতামহী এবং কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের পিতামহী ছিলেন বৈশ্যকন্যা। মহারণে কৌরবপক্ষের সব রাজা এবং বীর অযুধ্যমান কৃষ্ণের কৌশলে পরাজিত হলেন। ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, শল্য একে একে পতিত হলেন। গদাযুদ্ধে কৃতী দুর্যোধনকে
বধ করা হল বাসুদেবের কূট কৌশলে। যুধিষ্ঠির একচ্ছত্র সম্রাট হলেন। দুর্যোধনজননী গান্ধারীর সব অভিশাপ গিয়ে পড়ল পুরুষোত্তম কৃষ্ণের উপর – পঁয়ত্রিশ বছর পর বাসুদেবের জ্ঞাতিরাও পরস্পর হানাহানি করে লুপ্ত হবেন, সব হারিয়ে কৃষ্ণ বনে বনে ঘুরে শোচনীয় ভাবে নিহত হবেন, কৌরব বিধবাদের মতো যাদব বিধবাদের আর্তনাদে আকাশ বিদীর্ণ হবে। গান্ধারীর অভিশাপ ফলবতী হয়েছিল। কিন্তু তার পূর্বেই ‘মহাভারত’ একটি ছাতার নীচে চলে এল, যে ছাতার নাম যুধিষ্ঠির, আর ছত্রপতি পুরুষোত্তম— বাসুদেব কৃষ্ণ। পাণ্ডবদের মহাপ্রস্থানের পর কৃষ্ণের ভাগিনেয়পুত্র পরীক্ষিৎ হস্তিনার সিংহাসনে বসলেন আর ইন্দ্রপ্রস্থে রাজা হলেন কৃষ্ণের পৌত্র বজ্র।
একলব্যের কথা না বললে শ্রীকৃষ্ণের রাষ্ট্র-ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বাদ পড়ে যাবে। একলব্য নামের নিষাদ দ্রোণকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কেটে গুরুদক্ষিণা দিয়েছিলেন। তর্জনী-মধ্যমা দিয়ে তির ছুড়তেন এই অসামান্য ধনুর্ধর। যুবরাজ দুর্যোধন তাঁকে মহাভারতের সমস্ত বনের রাজা ঘোষণা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের মহারণে একলব্য যোগ দিতে এসে ভীষ্মকে দেখে ঠিক করেন যে তিনি যুদ্ধ করবেন না। এই ‘রাষ্ট্র’-এর নির্দেশে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ হরণ করেছিলেন দ্রোণ। পরে কৃষ্ণ একটি ভারী পাথর দিয়ে একলব্যের মাথা গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগ, একলব্য নাকি দুর্যোধনের জামাই ও কৃষ্ণের পুত্র শাম্বকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের মহারণের পর সারা ভারত কৃষ্ণের পদতলে এসেছিল – পল্লব, বিদেহ, মিথিলা, মৎস্য, চক্র, অবন্তী, আভির, অটবী, বহুধান্য, ত্রিপুরা, উত্তরজ্যোতিষ সমস্ত রাজ্য বাসুদেবকে ‘রাজার রাজা’ বলে স্বীকার করে নেয়। রাজা হলেন ভগবানের বিভূতিস্বরূপ আর ‘রাজার রাজা’ হলেন স্বয়ং ভগবান।
কিন্তু তা স্থায়ী হয় মাত্র ৩৫ বছর। তার পর ‘জরা’ নামের এক অরণ্যচারী ব্যাধের বাণে ঘটে শ্রীকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ।
মহাভারতকার সর্ব ক্ষেত্রেই সমতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন বোধ হয়। তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের উত্তরকালে কৃষ্ণ অবিসংবাদিত রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পরও অন্তর্কলহে জর্জরিত যাদবকুল ৩৫ বছর পরই ধ্বংস হয়। আর কৃষ্ণও মৃত্যুবরণ করেন এক অনার্য সাধারণ ব্যাধের শরনিক্ষেপে। এ হয়তো এক রূপক। কারণ, ইতিহাসও তো আমাদের এই শিক্ষাই দেয় – যত বড় একনায়কই থাকুন না কেন, তাঁর পতন অনিবার্য। আর সেই পতনের মূল কান্ডারি হয়ে থাকে সাধারণ মানুষ।
(তথ্যসূত্র:
১- Decoding the Metaphor Mahabharata, Diwaker Ikshit Srivastava, Leadstart Publishing Pvt Ltd (২০১৭)।
২- Mahabharata: The Greatest Spiritual Epic of All Time, Krishna Dharma, Torchlight Publishing, U.S. (১৯৯৯)।
৩- Ramayana Versus Mahabharata: My Playful Comparison, Devdutt Pattanaik, Rupa Publications India (২০১৮)।
৪- The Mahabharata Secret, Christopher C. Doyle, Om Books International (২০১৩)।
৫- Historicity of the Mahabharata: Evidence of Literature, Art and Archaeology, B. B. Lal, Aryan Books International (২০১৩)।
৬- শ্রীকৃষ্ণ পুরুষোত্তম, ডঃ দীপক চন্দ্র, দে’জ পাবলিশিং।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত