ভারতবর্ষের উত্তরে পাহাড়ের কোলে কয়েকটি ছোট্ট গ্রাম। এখানকার অধিবাসীরা সুবিচারের আশায় আদালতে নয়, ঈশ্বরের দ্বারস্থ হন। উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি এলাকার কয়েকটি গ্রামে দীর্ঘকাল ধরেই এমনই রীতি চলে আসছে। সেখানে গেলে মাত্র ১০ টাকাতেই পরিবারের কোনও সমস্যা হোক বা জমি বিবাদ – সবকিছুরই বিচার মেলে। সেখানকার জৌনসর বাওয়ার রিজিয়নে প্রায় ৩৬০ টি গ্রামের মানুষ এই বিচারেই ভরসা রেখে চলেছেন।
স্থানীয়দের মতে, এখানকার মানুষেরা মহাভারতের পাণ্ডব ভাইয়েদের বংশের বলে পরিচিত। কোনও সমস্যায় পড়লেই তাঁরা আদালতের পরিবর্তে দেবতার কাছে যান বিচার চাইতে। আবেদনকারী ১০ টাকা জমা করেন। এরপর নির্বাচিত এক ব্যক্তি দিন ১৫-র মধ্যেই শেষ করে ফেলেন বিচারপ্রক্রিয়া। যিনি রায়দান করেন তাঁকে বলা হয় ‘সেয়ানা’। তিনি আবার রায়দানের আগে ৮-১০টি গ্রামের সদস্যদের নিয়ে তৈরি পঞ্চায়েতের সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। একবার রায়দান হয়ে গেলে, স্থানীয় বিগ্রহ মহাসু দেবতার সামনে দাঁড়িয়ে সেই সিদ্ধান্ত মানার অঙ্গীকার করে বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষই।
প্রায় ৩৬৭টি গ্রামে এই ব্যবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এই ভাবে বিচারপ্রক্রিয়াকে স্থানীয়রা খুমদি বলে অভিহিত করে থাকেন। এই গ্রামগুলি রেভেনিউ পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার ধ্বজাধারী এই রেভিনিউ পুলিশি ব্যবস্থা এখনও একমাত্র উত্তরাখণ্ডেই বর্তমান রয়েছে। যেখানে রাজস্ব আধিকারিক বা পটওয়ারিরাই পাহাড়ি গ্রামগুলির পুলিশকর্মী হিসেবেও কাজ করে থাকেন। পারিবারিক বিবাদ, জমি বিবাদ সব কিছুরই জট খোলে এই খুমদি বিচার ব্যবস্থায়। এলাকার এক বিশিষ্ট পুরোহিত চন্দ্রম রাজগুরু বলেছেন, এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য মাসে একবার বা দু বার খাত পঞ্চায়েতের বৈঠক বসে। প্রত্যেক বৈঠকে ১০ টা পর্যন্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।