এবার বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালানো দুই সশস্ত্র তালিবান জঙ্গীকে খতম করে এবং আরও কয়েক জনকে গুলিতে ধরাশায়ী করে, বাবা-মায়ের মৃত্যুর চরম প্রতিশোধ নিল এক আফগান কিশোরী। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই হুলস্থূল পড়ে গেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আফগান কন্যার এই সাহস অনেকেই পাকিস্তানি কন্যা মালালা ইউসুফজাইকে মনে করাচ্ছে। সোয়াট উপত্যকার মেয়ে মালালা তালিবান জঙ্গীদের বিরুদ্ধে চোখ তুলে কথা বলার সাহস দেখিয়েছিলেন। তালিবানি অনুশাসন উপেক্ষার চরম মূল্য তাকে দিতে হয়েছিল। মাথায় গুলি খেয়েও বেঁচে ফিরেছেন মালালা।
আর আফগান কিশোরী কন্যা কামার গুল সেই তালিবানদের বিরুদ্ধেই যা করেছে, তার জন্য অনেক অনেক সাহস দরকার। কামার গুলের বাড়ি মধ্য আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশের এক গ্রামে। সেখানে আরও অনেক ঘর পড়শি রয়েছে। কিন্তু, কামারের বাবা যেহেতু আফগান সরকারের সমর্থক, তাই তালিবানদের রোষে পড়ে পরিবারটি। গত সপ্তাহে দল বেঁধে সে বাড়িতে হানা দিয়েছিল তালিবানরা। কামারের বাবাকে খতম করাই উদ্দেশ্য ছিল। তবে বাধা দিতে গিয়ে মা-ও মরে ওই জঙ্গীদের হাতে। কিন্তু এর পরেই গুলির জবাব গুলিতে দিয়ে, চরম প্রতিশোধ নেয় গুল।
ঘোরের ওই গ্রামের প্রধান, স্থানীয় পুলিশের মাথায় বসে থাকা হাবিবুর রহমান মালেকজাদা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, তালিবানরা কামার গুলের বাবাকে খুঁজতে বাড়ি গিয়েছিল। তিনিই জানান, ওই কিশোরীর বাবা সরকারের সমর্থক হওয়ার কারণেই তালিবানরা খেপেছিল। ঘটনার দিন ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে। সেসময় বাধা দিতে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁকে রেয়াত করেনি তালিবানরা। দুজনকে একই সঙ্গে তারা হত্যা করে। কামার গুল তখন ঘরের ভিতরেই ছিল। পরিবারের নিরাপত্তায় বাড়িতে রাখা একে-৪৭ এক ঝটকায় হাতে তুলে নেয়। যে দুই তালিবান তার মা-বাবাকে মেরেছে, আগে তাদের খতম করে সে। তার পর ঘায়েল করে তাদের সঙ্গী বাকি জঙ্গীদের।
এমন একটা ঘটনার পর তালিবানরা ছেড়ে দেবে, এটা ভাবাই ভুল। ঘটনার পরপরই তারা এসেছিল শোধ নিতে। কিন্তু, কয়েক জন গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে। আবারও যে আসবে না, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। তাই কামার গুল ও তার ছোট্ট ভাইকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী। এমনটাই জানালেন প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র মহম্মদ আরেফ আবের। আফগান কন্যার এই বীরত্বের খবর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে চাপা থাকেনি। মাথায় ফেট্টি বাঁধা, মেশিনগান হাতে কামার গুলের ছবি দিয়ে নেটিজেনরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন।