সিনেমায় এমনটা আকছার দেখা যায়। বাস্তবে খুব একটা নয়! কিন্তু মনিপুরের মহিলা পুলিশ অফিসার থোনাওজাম বৃন্দা অসম সাহস দেখালেন। হাইকোর্টে জানালেন, গ্রেফতার করা ড্রাগ মাফিয়াকে মুক্তি দিতে তাঁর উপর চাপ তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। মনিপুরের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হলেন বীরেন সিং। পুলিশ কর্তার এমন অভিযোগের হই চই পড়ে গিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজনীতিতে।
হাইকোর্টে একটি হলফনামা পেশ করেছেন বৃন্দা। বছর দুই আগে চান্দেল স্বশাসিত জেলা পরিষদের পূর্বতন চেয়ারম্যান লুহখোসেই ঝাওকে গ্রেফতার করেছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বড় সড় ড্রাগ চক্র চালানোর অভিযোগ ও প্রমাণ পেয়েছিলেন বৃন্দা। হলফনামায় বৃন্দা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১৯ জুন মাঝ রাতে ন্যাব বাহিনী (নার্কোটিক অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স অব বর্ডার) নিয়ে তিনি ঝাওয়ের ডেরায় হানা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সাড়ে চার কেজি হেরোইন, প্রায় তিন লক্ষ ‘ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস’ ট্যাবলেট, ৫৭ লক্ষ টাকা নগদ টাকা উদ্ধার হয়। সেদিনই সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
বৃন্দার দাবি, প্রাথমিক ধরপাকড় ও বিপুল পরিমাণ ড্রাগ আটকের পরই রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি মইরাংথেম আসনিকুমার তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করেন। তিনিই মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। বৃন্দার কথায়, ‘আমি তখনই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম যে আমরা স্বশাসিত পরিষদের সদস্যের বাড়িতে তল্লাশি করতে যাচ্ছি। কারণ, তাঁর ডেরাতে আরও ড্রাগ রাখা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে বলেন, ঠিক আছে সেখানে ড্রাগ পেলে যেন স্বশাসিত পরিষদের সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।’
হলফনামায় বৃন্দা আরও জানিয়েছেন, ‘তল্লাশি চলাকালীন ঝাও বারবার আপসের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি তা প্রত্যাখ্যান করি। তাঁর বাড়িতে ড্রাগের খোঁজ পাওয়ার পরই তিনি পুলিশের ডিজি ও মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি তাও করতে দিইনি। তার পরই আসনিকুমার আমার বাড়িতে আসেন।… তিনি খুব চড়া মেজাজ নিয়েই কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, গ্রেফতার হওয়া ওই স্বশাসিত পরিষদের সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ওলিসের ডান হাত। এ ঘটনায় ওলিস খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
বৃন্দা এর পর আরও যে দাবি জানিয়েছেন, তা আরও বিস্ফোরক। তিনি বলেন, বিজেপি সহ সভাপতি আমাকে বলেন, ঝাওয়ের বদলে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে হেফাজতে নেওয়া হোক। কিন্তু আমি আপত্তি করে বলি, তা কী করে সম্ভব। ড্রাগ ঝাওয়ের কাছে পাওয়া গিয়েছে। তাঁর স্ত্রীর কাছে নয়।
বৃন্দা হলফনামায় জানিয়েছেন, এর পর বিজেপি সহ সভাপতি ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী যারপরনাই ক্ষুব্ধ। ঝাওকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিই, ঝাওকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। গোটা তল্লাশি অভিযানে দেড়শর বেশি পুলিশ কর্মী জড়িত ছিলেন। তা ছাড়া অন্য সাক্ষীরাও রয়েছেন।
হলফনামায় বৃন্দা দাবি করেছেন, এর পরেও ব্যাপারটা থামেনি। ইম্ফলের পুলিশ সুপার ও পুলিশের ডিজি তাঁকে ডেকে মিটিং করেন। তাঁকে চার্জশিট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি চার্জশিট প্রত্যাহার করতে কেন দেরি হচ্ছে সে ব্যাপারে কৈফিয়ত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নিজ বাসভবনে ডেকে ধমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, এই কারণেই তাঁকে কি পুলিশ মেডেল দেওয়া হয়েছে?
মনিপুর পুলিশ সার্ভিসের এই অফিসারকে ২০১৮ সালে পুরস্কৃত করেছিল বণিকসভা ফিকি। উত্তর-পূর্বে ড্রাগ পাচার রুখে দেওয়ার জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ মেডেলও পেয়েছিলেন তিনি। এ বার সেই পুলিশ অফিসারের হলফনামার ধাক্কায় আপাতত আন্দোলিত উত্তর-পূর্বের রাজনীতি।