ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধের চেষ্টা চালিয়ে এসেছে বিজেপি তথা মোদী সরকার। এর আগে একাধিক সংবাদ সংস্থাকেই কেন্দ্রের কোপে পড়তে হয়েছে। এবার যেমন তাদের রোষের শিকার দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন সংবাদ সংস্থা পিটিআই। পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে এবার দিল্লীর কার্যালয়ের জমির লিজ সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনল কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ জমি ও উন্নয়ন দফতর। ৭ জুলাই পাঠানো হয়েছে কড়া একটি নোটিস। তাতে পিটিআইয়ের ওপর চাপানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮৪ কোটি টাকার জরিমানা। ৩০ দিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। বিলম্ব করলে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সুদও গুনতে হবে। এমনকী ওই জায়গায় আর ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চীনের রাষ্ট্রদূত দূত সুন উয়েইডংয়ের সাক্ষাৎকার বের করায়, গত মাসেই সরকারি সম্প্রচার সংস্থা প্রসার ভারতী নিশানা করেছে পিটিআইকে। গালোয়ানের সীমান্ত সঙ্ঘর্ষের দায় ভারতের ওপর চাপিয়েছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত। প্রসার ভারতীর বক্তব্য ছিল, জাতীয়তাবিরোধী খবর করেছে পিটিআই। রীতিমতো শাসানো হয়, পিটিআইয়ের খবর নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা হবে। অর্থাৎ ভাতে মারার হুমকি। এবার সরকারের অন্য হাত টুঁটি চেপে ধরল সংবাদ সংস্থাটিকে। রাজধানীর সংবাদ-শিল্পমহলের খবর, সংবাদ সংস্থাটির ওপর প্রসন্ন নয় মোদী সরকার। সরকারি নিয়ন্ত্রণ পুরো কায়েম করতে না পারার জন্যই এই আক্রোশ। ২০১৬ সালে নাকি এর শুরু। সে সময় এম কে রাজদানের পর প্রধান সম্পাদক পদে কোনও রাজনৈতিক পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল পিটিআইয়ের ডিরেক্টরদের বোর্ড।
উল্লেখ্য, দিল্লীর পার্লামেন্ট স্ট্রিটে পিটিআইয়ের দফতর। আবাসন দফতরের এক আধিকারিক জানান, লিজ নেওয়া জমিতে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে কিছু বদল এনেছে পিটিআই। যেমন, বেসমেন্টটিকে অফিসে পরিণত করা হয়েছে।
অনুমোদনহীন নির্মাণের জন্য জরিমানা এবং গ্রাউন্ড রেন্টের বকেয়া মিলিয়েই ওই টাকা ধার্য করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই আধিকারিক। ৭ জুলাইয়ের নোটিসটিতে বলা হয়েছে, ৭ আগস্টের মধ্যে জরিমানা বাবদ ৮৪ কোটি ৪৮ লক্ষ ২৩ হাজার ২৮১ টাকা মেটাতে হবে। তাছাড়া, ১ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ১৪ জুলাই ২০২০-র মধ্যে জমির দরের অনেক হেরফের হয়েছে। তা হিসেব করে যদি দেখা যায় প্রদেয় অঙ্কের সঙ্গে ফারাক থাকছে, তাও মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে নন-জুডিশিয়ারি স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, এই সময়ে উপরমহলের নির্দেশেই কি বিশেষভাবেই নজর পড়েছে পিটিআই-এর দিকে? মিলছে না উত্তর।