আবার দুঃসংবাদ বিনোদন জগতে! ঘুমের মধ্যেই ইহজগতের মায়া ত্যাগ করলেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ খ্যাত শিল্পী রঞ্জন ঘোষাল। যিনি কিনা নিঃসন্দেহে বাংলা সংগীতের দিন বদলের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। বাংলা ব্যান্ড ঘরানার একজন পথিকৃৎ বললেও ভুল হবে না বইকী! বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বেঙ্গালুরুতে নিজের বাসভবনেই ঘুমের মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী রঞ্জন ঘোষাল। শোকের ছায়া বাংলা সংগীত জগতে।
১৯৭৫ সালে ভারতের প্রথম বাংলা স্বাধীন রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ যখন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, রঞ্জন তখন উপস্থাপক হিসেবে যোগ দেন। মহীনের প্রথম অ্যালবাম ‘সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা বিষয়ক’-এর ‘ভেসে আসে কলকাতা’, ‘সংবিগ্ন পাখিকুল’, ‘মেরুন সন্ধ্যালোক’-এর মতো গানগুলি রঞ্জন ঘোষালেরই লেখা।
পরবর্তী দশকগুলিতে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে রঞ্জন ঘোষালের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখ্য। বেঙ্গালুরুতে ফার্স্ট রক কনসার্ট- ‘রিমেম্বারিং মহীনের ঘোড়াগুলি’ এবং কলকাতায় ‘আবার বছর ত্রিশ পরে’ শিরোনামে একটি কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি নিজে। প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুতে দীর্ঘদিন তিনি থিয়েটারও করেছেন। স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষালের সঙ্গে যৌথ ভাবে গিরিশ কর্নাডের ‘হায়ভাদান’, অরুণ মুখোপাধ্যায়ের ‘মারিচ দ্যা লেজেন্ড’-এর মতো নাটকও মঞ্চস্থ করেছেন।
বর্ধমান জেলার মেমারিতে রঞ্জন ঘোষালের জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে মুম্বইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ‘শিল্প ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে পিএইচডিও করেছেন। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ব্যান্ড ‘সপ্তর্ষি’রও অন্যতম সদস্য ছিলেন রঞ্জন।
বাংলা রক সংগীতজগতে অবদানের পাশাপাশি তাঁর বেপরোয়া জীবনযাপন, বর্ণময় চরিত্রও যে রঞ্জনকে বিপুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল, সেকথা বলাই বাহুল্য। সেই শিল্পীই আজ ভোরে নীরবেই ঘুমের দেশে চলে গেলেন চিরতরে।