২০১৩ সালে ডেপসাং উপত্যকায় চীনের সেনা ভারতের এলাকায় ঢুকে তাঁবু খাটিয়ে বসেছিল। তার পরে দু’দেশের সেনাই পিছু হটে। সে সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সেনার পিছু হটা নিয়ে এই টুইট করেছিলেন যে, ‘চীন সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি, ভারতের সেনাবাহিনী কেন ভারতের এলাকাতেই পিছু হটছে? আমরা কেন পিছু হটছি?’ এবার মোদী জমানায় গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাত এড়াতে যখন ভারত ও চীন, দু’দেশের সেনাই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছে কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, চীন ভারতের ধারণা অনুযায়ী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি পেরিয়ে ভারতের এলাকায় ঢুকে এসেছিল বলে অভিযোগ। চীন সেখান থেকে কিছুটা পিছু হটেছে। কিন্তু ভারতের সেনা পিছিয়ে আসছে কেন, কংগ্রেস মোদীর এই পুরনো প্রশ্নই খুঁজে বার করেছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের কটাক্ষ, ‘আমি এ বিষয়ে মোদীজির পাশে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।’ কংগ্রেসের আর এক নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি নিজের কথা মনে রয়েছে? এখন বলবেন কি, আমাদের সেনা আমাদের জমিতেই কেন পিছু হটছে?’
গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-র সংঘর্ষস্থল, হট স্প্রিং ও গোগরা এই তিনটি এলাকা থেকেই চীনের সেনা দেড় থেকে দু’কিলোমিটার পিছু হটেছে। দু’দেশের সমাধান সূত্র অনুযায়ী, যতটা চীন সেনা পিছিয়েছে ততটাই পিছিয়ে যাবে ভারত। দু’দেশের মাঝের ওই তিন থেকে চার কিলোমিটার ‘বাফার জোন’ বলে গণ্য হবে। সেখানে কোনও পক্ষই আপাতত যাবে না। গালওয়ানে এই ‘বাফার জোন’ পড়ছে এলএসি-র ভারতের দিকে। এর অর্থ, আগামী এক মাস ভারতের সেনা পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-তেও যাবে না।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানির মতে, এই ‘বাফার জোন’-এ রাজি হয়ে ভারতের পেট্রোলিং বা টহলদারি গালওয়ান ও শাইয়োক নদীর সংযোগস্থলের পূর্ব দিকেই আটকে থাকবে। গালওয়ানে ভারত আপাতত ঢুকবে না। ফলে চীন গোটা গালওয়ানকেই নিজের বলে যে দাবি জানাচ্ছে, তাতেই সিলমোহর পড়ছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাড়াহুড়ো করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সামরিক ঝুঁকি তৈরি হল। সেনা সূত্রের অবশ্য পাল্টা যুক্তি, এই ‘বাফার জোন’-এর ব্যবস্থা অস্থায়ী। চীন পুরোপুরি পিছু হটেছে তা নিশ্চিত করার পরে ফের আগের মতো টহলদারি শুরু হবে।
এরই মধ্যে চীনের সরকারি টিভি চ্যানেল সিসিটিভি-৪-এর একটি অনুষ্ঠানে কিছু স্যাটেলাইট ছবি দেখানো হয়। চ্যানেলের দাবি, ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টের কাছে ভারতীয় সেনার একটি হেলিপ্যাড এবং অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে দিচ্ছে চীনের বাহিনী। ভারতীয় সেনার তাঁবু এবং হেলিপ্যাডের ছবি দেখানো হলেও সেখানে চীনা সেনার কার্যকলাপের ছবি নেই। চীনের সরকারি চ্যানেলের দাবিমতো চীনা বাহিনী যদি ভারতীয় তাঁবু ও হেলিপ্যাড তুলে দিয়ে থাকে, তা হলে এটা স্পষ্ট হয় যে, বেজিং আগ্রাসন চালিয়েছে ও ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করেছে।
অন্যদিকে, গালওয়ানে পিছু হটলেও প্যাংগং লেকের উত্তরে চীনের সেনা ফিঙ্গার চার থেকে ফিঙ্গার আট পর্যন্ত দখল করে ঘাঁটি বানিয়ে বসে রয়েছে। ভারতের দাবি গোটাটাই ভারতের এলাকা। কিছু দিন আগে পর্যন্ত ফিঙ্গার আটে টহল দিয়ে এসেছে ভারতীয় সেনা। সেনা সূত্রের খবর, ওই এলাকায় চীনের সেনা, তাঁবু ছাড়াও প্রায় শ’খানেক সাঁজোয়া গাড়ি এখনও উপস্থিত। এ ছাড়া দৌলত বেগ ওল্ডি সড়ক ও সেই সড়কের উপরে থাকা বিমান ঘাঁটি নজরে রাখতে ডেপসাংয়ে চীন সেনা যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে বসে ছিল, এখনও তারা সেখানেই রয়েছে গিয়েছে।