সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ তৈরি করতে গিয়ে প্রথম থেকেই আদিবাসী বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল মোদী সরকারকে। মূর্তি তৈরির প্রকল্প আদিবাসীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেছে, উদ্বোধনের আগে আগে এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার আদিবাসী। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মূর্তি প্রকল্প ও তার আশপাশে সর্দার সরোবর প্রকল্পের জন্য সরকার গ্রামবাসীদের থেকে জমি নেয়। তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও বিকল্প জমি বা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। এবার ফের খবরে চলে এলো গুজরাতের কেবড়িয়া গ্রামে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ও তৎসংলগ্ন এলাকা, যেখানে পর্যটনের বিস্তার ঘটাতে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর প্রতিবাদ স্বরূপ অধিকৃত জমির ওপরেই চাষের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। এই কৃষিকাজ রুখতে এলাকায় পাহারা বাড়িয়েছে সরকার।
মোট ছ’টি গ্রামে অধিকৃত জমির ওপর নজর রাখতে গত ১৭ জুন পাঁচটি দল গঠন করে নর্মদা জেলা প্রশাসন। এই জমি ঘিরে সম্প্রতি বেড়া বসিয়ে দিয়েছে সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেড (এসএসএনএনএল)। তার পর থেকে গোরা, নবগাম, এবং লিমড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে রুজু হয়েছে মোট চারটি অনধিকার প্রবেশের মামলা। মে এবং জুন মাসে যখন জমিতে বেড়া দিতে শুরু করে এসএসএনএনএল, সেসময় গুজরাত হাইকোর্টে তাদের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় বাঘাড়িয়া, কেবড়িয়া, এবং কোঠি গ্রাম-সহ অন্যান্য কিছু গ্রামও। উল্লেখ্য, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল যে ট্রাস্ট, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেই ট্রাস্টেরই অংশ ছিল এসএসএনএনএল-ও, এবং আজও মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এই সংস্থা।
প্রসঙ্গত, গত বছর ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ গঠনের উদ্দেশ্যে একটি বিল পাশ করে গুজরাত সরকার, যার লক্ষ্য ছিল মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় প্রকল্প রূপায়ণের গতি বৃদ্ধি করা। জমিতে বেড়া দেওয়ার কাজ যদিও প্রায় শেষ করে এনেছে এসএসএনএনএল, আন্দাজ ২৫০ জমির মালিক এবং তাঁদের বংশধররা এখনও এসএসএনএনএল-এর দেওয়া ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি। হাইকোর্টের কাছে তাদের জবাবে এসএসএনএনএল জানায়, পাঁচটি গ্রাম মিলিয়ে ১,৮১৪.৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার, যার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে এই জমি ব্যবহৃত না হওয়ায় কৃষিকাজে ফিরে আসেন গ্রামবাসীরা, এবং জমির আদি মালিকরাও একে একে মারা যান।
এসএসএনএনএল আরও জানায়, ১৯৭৯ সালের নর্মদা ওয়াটার্স ডিসপিউট ট্রাইব্যুনাল অ্যাওয়ার্ড অনুযায়ী, ছ’টি গ্রাম মিলিয়ে জমির মালিকের সংখ্যা ২৩৮, যাঁদের মধ্যে ১০৫ জন আদি মালিক এখনও ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্তে আসেননি। একইভাবে, উত্তরাধিকারীদের তালিকায় রয়েছেন ২৪১ জন পুরুষ, যাঁরা আদি মালিকদের পুত্র, যাঁদের মধ্যে ১২০ জন এখনও ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করেননি। এদিকে নর্মদা কন্ট্রোল অথরিটির নির্দেশিকা অনুযায়ী, জমির মালিকের পুরুষ উত্তরাধিকারী, যাঁদের বয়ঃক্রম ১ নভেম্বর, ১৯৮৯ সালে ছিল অন্তত ১৮ বছর, এবং যাঁরা এই প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হবে দুই হেক্টর জমি অথবা মূল জমির আয়তনের সমান জমি – কোনটির আয়তন বেশি, সেই ভিত্তিতে – সঙ্গে পশুপালনের জন্য ২৫০ বর্গফুটের আলাদা জমি।
তবে আর্থিক ক্ষতিপূরণও বেছে নিতে পারেন গ্রামবাসীরা। সেক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর (২.৪ একর) জমি পিছু দেওয়া হবে ৭.৫ লক্ষ টাকা। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, বর্তমান বাজারে এক একর জমির দামই প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া নর্মদা জেলার নান্দোড় তালুকে কেবড়িয়া কলোনি একটি শিডিউল ৫ এলাকা, যেখানে লাগু রয়েছে পঞ্চায়েত (এক্সটেনশন টু দ্য শিডিউলড এরিয়াজ) অ্যাক্ট, ১৯৯৬। শিডিউল ৫ এবং এই আইন, উভয়েরই এই বিধান যে, জমি অধিগ্রহণ অথবা উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণ করবে আদিবাসী পঞ্চায়েত। আদিবাসী জমি কোনও বহিরাগতের হাতে আইনত যেতে পারে না। তবে এলাকার গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কেবড়িয়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আগে তাঁদের কাছ থেকে কোনও রকম মতামত অথবা সম্মতি নেওয়া হয়নি। যার ফলে এখন বেঁকে বসেছেন তাঁরা। এবং প্রতিবাদ স্বরূপ অধিকৃত জমির ওপরেই কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।