জন্মের পর ও তার দেড় মাস, আড়াই বা তিন মাস, ছ’মাস, ন’মাস এবং ১৫ মাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকা দিতে হয় শিশুদের। যা ওই সংক্রামক রোগগুলি নির্মূল করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে টিকাকরণ কর্মসূচী দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ। এর ফলে কি করোনার পর এবার একের পর এক মহামারি ফিরে আসছে ভারত-সহ প্রায় গোটা বিশ্বেই? ফিরে আসতে চলেছে পোলিও, হাম, রুবেলা, কলেরা, ডিপথেরিয়া ও ডায়ারিয়ার মতো ভয়ঙ্কর সংক্রামক ব্যাধিগুলি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’), রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ ‘ইউনিসেফ’ এবং গরিব দেশগুলিতে টিকাকরণ কর্মসূচির তদারক সংস্থা ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)’-এর সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষা এই অশনি সংকেত দিয়েছে।
সমীক্ষা জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে টিকাকরণ কর্মসূচী দারুণ ভাবে ব্যাহত হওয়ার ফলে যে সব রোগ হারিয়ে গিয়েছিল, তাদের ফের জোরালো ভাবে ফিরে আসার উপক্রম হয়েছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৮ কোটি শিশুর জীবন। এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও আফ্রিকায় উগান্ডা, নাইজিরিয়া, চাদ, ইথিওপিয়া, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন-সহ বিশ্বের ১২৯টি দরিদ্র ও অল্প আয়ের দেশে। এই শিশুদের বয়স ১ বছরেরও কম। উল্লেখ্য, হাম, রুবেলা, মাম্পসে টিকাকরণে যথেষ্টই ব্যাঘাত ঘটেছে ভারতে। লকডাউনের জন্য দেশে দেশে টিকাকরণ কর্মসূচী পুরোপুরি থমকে যাওয়ায় অন্তত ৮ কোটি শিশুর পোলিও, হাম, রুবেলা, কলেরা, ডিপথেরিয়া, ডায়ারিয়া-সহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল পিডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএ)’-এর কার্যনির্বাহী অধিকর্তা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নবীন ঠাকার বলছেন, ‘ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তথ্যই জানাচ্ছে, ২০১৯-এর মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে হাম, রুবেলা, মাম্পসের টিকাকরণের কাজ ৬৯ শতাংশ কম হয়েছে।’ হু এবং ইউনিসেফ-এর যৌথ সমীক্ষার বক্তব্য, ১২৯টি গরিব ও অল্পবিত্তের দেশের মধ্যে কম করে ৬৮টি দেশে চিকিৎসক বা টিকাকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে টিকা দেওয়ার কাজে যথেষ্টই ব্যাঘাত ঘটেছে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে। যেমন এক বছরের কমবয়সিদের হামের টিকা দেওয়ার কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২৭টি দেশে। যাদের মধ্যে অন্যতম আফ্রিকার দু’টি দেশ- চাদ ও ইথিওপিয়া। আর সদ্যোজাতদের পোলিও খাওয়ানোর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৩৮টি দেশে। যাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলি।
প্রসঙ্গত, করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার আগে টিকাকরণ কর্মসূচী ব্যাপক ভাবে কার্যকর হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পোলিও, হাম-সহ বহু রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে অনেক দূর পর্যন্ত এগনো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু অতিমারি আর তা রুখতে বিশ্ব জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর সার্বিক ভাবে টিকা দেওয়ার কাজ দারুণ ভাবে ব্যাহত হয়ে চলেছে। তাই পোলিও ও হামের মতো বহু রোগের আবার ফিরে আসার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানী ও টিকা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে, আগামী দিনে হাম, রুবেলা, কলেরা, ডায়ারিয়া ও ডিপথেরিয়ার মতো বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কোভিড-১৯ ভাইরাসের দৌলতে আক্রান্তের সংখ্যাকেও হার মানাবে। তাই লকডাউনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে থাকা এই টিকাকরণ কর্মসূচীকে ফের ধাপে ধাপে কার্যকর করার লক্ষ্যে এখনই এগনো উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।