বর্তমান সময়ে নিজস্ব গাড়ি, ওলা উবেরে যুগে সাইকেলের ব্যবহার আর প্রায় নেই বললেই চলে। তবে করোনার এই সময়ে এবং এই আনলক ফেজ ১-এর এই পর্বে আবার যেন নতুন করে ফিরে এল সাইকেলের ব্যবহার। কারণ অফিস খুলে গেলেও নেই যথাযথ পরিবহন, বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। অগত্যা সাইকেলই সহায়।
ইতিমধ্যেই মেয়ের পুরনো সাইকেল সারিয়ে এনেছেন বাগুইআটির অনিন্দ্যসুন্দর দত্ত। উদ্দেশ্য, থিয়েটার রোডের অফিসে রোজ যাতায়াত। এই ‘আনলক’ পর্বে অফিস আর গাড়ি দেবে না, বুঝতে পেরে ছেলের সাইকেল রীতিমতো নিজে কব্জা করে নিয়েছেন যাদবপুরের বাসিন্দা সত্যেন সর্দার।
লকডাউনের শুরু থেকেই যে সাইকেলের বিক্রি বেড়েছে তা মানলেন দমদম গোরাবাজারের সাইকেল ব্যবসায়ী ভরত সাহা। বললেন, ‘সাইকেল সারাই করাতেই বেশি ভিড় জমছে দোকানে। অনেকে ব্যাটারিচালিত সাইকেলের খোঁজও করছেন।’
বহু আগে থেকে কলকাতার অধিকাংশ বড় রাস্তায় সাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ নামে এক সংগঠন। প্রাথমিক ও নিরাপদ পরিবহণ হিসেবে সাইকেলকে তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘বিওয়াইসিএস’ মনোনীত কলকাতা ও হাওড়ার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত ও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। তাতে তাঁরা শহরের বড় রাস্তাগুলিতে অস্থায়ী সাইকেল লেন তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন। যেমন রয়েছে ভোপাল ও রাঁচিতে। সাইকেল শেয়ারিং, সাইকেল স্ট্যান্ড ও সারাইয়ের ব্যবস্থার দাবিও জানানো হয়েছে। তাঁরা চান, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ ও ‘সবুজসাথী’ প্রকল্পের আওতায় এনে সাইকেল চালানোকে উৎসাহ দিক সরকার।
বোঝাই যাচ্ছে, করোনাকে সঙ্গে নিয়ে চলার যাবতীয় প্রস্তুতির মধ্যে সাইকেলের ব্যবহারকেও রেখেছেন অনেকে। কারণ, সাইকেল বজায় রাখে সামাজিক দূরত্ব। এটি সাশ্রয়কারী এবং দূষণবিহীন। সাইকেল চালালে সেরোটিনিন ও এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। তাতে শরীর–মন তরতাজা হয়ে ওঠে। বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যা এ সময়ে একান্ত কাম্য। সচেতন নাগরিকদের উপলব্ধি, সামাজিক দূরত্ব ভুলে অটোয়–বাসে চেপে অতিরিক্ত ঝুঁকির যাত্রা থেকে অনেক কম ঝুঁকির বাহন সাইকেল।