জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পরেই করোনা আতঙ্কের মধ্যে জ্বলে উঠল গোটা আমেরিকা। ভাইরাস ভয় উড়িয়ে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ মানুষ সামিল হল প্রতিবাদে, বিক্ষোভে। নজিরবিহীন ভাবে হোয়াইট হাউসের বাঙ্কারে লুকোলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের দোরগোড়ায় পর্যন্ত পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। আগুন ধরানো হয় চার্চে। এখন জর্জের হত্যার বিহিত চাইছে গোটা আমেরিকা।
কিন্তু খুব সাম্প্রতিক অতীত খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, জর্জ শুধুই আরও একটা নাম কেবল। ২০১৩ থেকে ২০১৯- মাত্র এই ৬ বছরে আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যু হয়েছে ৭৬৬৬ জন কৃষ্ণাঙ্গের। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষজন মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। পুলিশি অত্যাচার অবশ্য তাঁদের উপরই বেশি। তবে, জর্জের হত্যার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সব বর্ণের মানুষ।
অবাক করার মতো তথ্য হল, এই ক’বছরে এমন একটা মাসও যায়নি, যখন আমেরিকার কোথাও না কোথাও পুলিশ কোনও কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেনি। গড়ে ২৭ দিনে ১ জন করে কৃষ্ণাঙ্গের হত্যা হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। ডিসেম্বর ২০১৯-এ প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন ১০১৪ জন নাগরিক। দেখা গিয়েছে পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৮৬ জন কৃষ্ণাঙ্গকে মারা হয়েছে। ফ্লোরিডায় ১৬৯ জন। টেক্সাসে সংখ্যাটা ১৫৭।
এছাড়াও, লুইসিয়ানা, ইলিনয়, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ ইয়র্ক ও জর্জিয়ার মতো অঞ্চলেও ব্যাপক হারে মরতে হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের। তবে, মন্টানা, নর্থ ও সাউথ ডাকোটা, ভেরমন্টের মতো এলাকাগুলিতে কৃষ্ণাঙ্গদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। যদিও জর্জের মৃত্যু নাড়া দিয়েছে গোটা আমেরিকাকে। এর ফলে প্রবল চাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আসন্ন ভোটে গদি টেকানো মুশকিল তাঁর পক্ষে। কিন্তু এই সব হিসেবের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে, কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অত্যাচার কি শেষ হবে আদৌ? উত্তর খুঁজছে আমেরিকা। খুঁজছে গোটা বিশ্বও।