২০১৯ সাল থেকেই মন্দার গ্রাসে দেশের অটোমোবাইল সেক্টর। তবে মনে করা হয়েছিল, গাড়ি বিক্রির চাকা একেবারে বসে গেলেও ২০২০ সালে নিশ্চয় হাল ফিরবে এই শিল্পে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর তার জেরে দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে এখনও রাহুমুক্তি ঘটল না দেশের গাড়ি বাজারের। বরং আরও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে গাড়ি শিল্পে। বিক্রি নেই, উৎপাদন বন্ধ। ফলে চলছে বিপুল হারে কর্মী ছাঁটাই। শুধুমাত্র হরিয়ানার গুরুগ্রামের অটোমোবাইল হাবেই ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ চাকরি খোয়াতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে শিল্প মহল। আরও অন্তত ছ’মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তো নেই-ই, বরং সঙ্কট আরও গভীর হতে চলেছে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ছে অস্থায়ী কর্মীদের উপর। কারণ, তাঁদের ছাঁটাই করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধ্যকতা নেই সংস্থাগুলির। উপরন্তু স্থায়ী কর্মীদেরও কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে অনেক সংস্থা। সব মিলিয়ে সঙ্কট ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। কর্মী ইউনিয়নগুলি এই সব শ্রমিকের পাশে দাঁড়ালেও তারাও কার্যত পরিস্থিতির কাছে অসহায়। গুরুগ্রাম-মানেসর-বাওয়ালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের অটোমোবাইল হাব। মারুতি, হিরো, হন্ডা থেকে শুরু করে অধিকাংশ গাড়ি শিল্পের প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র এই সব এলাকাতেই রয়েছে। এ ছাড়া এই অটোমোবাইল শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রচুর সহযোগী সংস্থা। এই হাবে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের। আর সারা দেশে সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ।
হরিয়ানার বণিকসভা সিআইআই-এর ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’-এর চেয়ারম্যান হরভজন সিংহের মতে, লকডাউনের ক্ষত এই অটোমোবাইল হাবে আগ্রাসী রূপ নিয়ে ধেয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ‘অটোমোবাইল শিল্প অন্তত ৫০ শতাংশ সংকুচিত হতে চলেছে। তার প্রভাব অবশ্যই কর্মসংস্থানে পড়বে। সব ‘অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স’ (ওইএম)-এর বিক্রি তলানিতে নেমে গিয়েছে। বিক্রি কমলে উৎপাদনও কমবে। আর উৎপাদন না হলে কর্মীদের উপর কোপ পড়বেই। কারণ কর্মীদের বসিয়ে মাইনে দেওয়া সম্ভব নয়। কর্মী ছাঁটাই হতে পারে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।’ তাঁর আশঙ্কা, ‘চার জন করে এক একটি পরিবার ধরলে সারা দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হবেন।’
লকডাউনের জন্য কর্মী ছাঁটাই করেছে এমন বহু সংস্থার মধ্যে রয়েছে বেলসোনিকা অটো কমপোনেন্ট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। মারুতির অন্যতম ‘ভেন্ডর’ এই সংস্থার ১৩০০ কর্মীর মধ্যে ৩০০ অস্থায়ী কর্মীকে ইতিমধ্যেই ছেঁটে ফেলেছে। রিকো অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আবার ১১৯ জন স্থায়ী কর্মীকেও ছেঁটে ফেলেছে। এই সঙ্কট যে অদূর ভবিষ্যতে কাটার নয়, তা এখনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, করোনা ভাইরাসের জন্য নতুন নিয়মে (সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুরো কর্মীকে এক শিফটে কাজ করানো যাবে না) মালিকপক্ষ চাইলেও উৎপাদন ১০০ শতাংশ করতে পারবেন না। পুরোদমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদন শুরু হতে সংস্থা ভেদে আরও অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে।