বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রমশঃ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঠান্ডা যুদ্ধের কিনারার দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমেরিকা। এদিন এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। করোনা সংক্রমণ, হংকং ইস্যু-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের পারদ ক্রমশই চড়তে শুরু করেছে। সে দিকে নজর রেখেই শনিবার এহেন মন্তব্য চীনা বিদেশমন্ত্রীর।
গোটা দুনিয়ায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বেজিংয়ের প্রতি লাগাতার উষ্মাপ্রকাশ করেই চলেছে ওয়াশিংটন। তা স্মরণে রেখেই ওই দিন চীনের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নজরে এসেছে যে, আমেরিকায় কিছু রাজনৈতিক শক্তি চীন ও মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ককে সামনে খাড়া রেখে দু’টি দেশকে ঠান্ডা যুদ্ধের কিনারার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ তবে আমেরিকার ‘রাজনৈতিক শক্তি’ বলতে ওয়াং কোন শক্তির কথা বোঝাচ্ছেন, তা তিনি এদিন স্পষ্ট করেননি।
করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রায় রোজই চীনকে কড়া ভাষায় বিঁধছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনই করোনার সৃষ্টিকর্তা বলে অভিযোগ পর্যন্ত করেছেন তিনি। বেজিংয়ের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর বিরুদ্ধেও। সেই ঘটনাক্রমের দিকে দৃষ্টি রেখেই পাল্টা আঘাত করল বেজিং। হুঁশিয়ারির সুরেই ওয়াংয়ের মন্তব্য, ‘নোভেল করোনা ভাইরাসের ধ্বংসলীলা ছাড়াও আমেরিকা থেকে একটি রাজনৈতিক ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়ছে।’ তাঁর মতে, ‘ওই রাজনৈতিক ভাইরাসটি চীনকে আক্রমণ করা ও সমালোচনা করার প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা চীনকে নিশানা করেই সত্যকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন ও মিথ্যাকে সাজাচ্ছেন। তাঁরা ষড়যন্ত্রও করছেন।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে বিরাট বাণিজ্য চুক্তি সই করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় মুক্তকণ্ঠে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশংসাও করেন তিনি। কিন্তু চীনের ইউহান থেকে বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই চীনের সম্পর্কে তিনি মত বদলাতে থাকেন। প্রায় রোজই নিয়ম করে চীনের সমালোচনা শুরু করেন ট্রাম্প। এমনকি, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। আর তার ফলে গত কয়েক মাসে বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
ট্রাম্পের সেই উষ্মার ধার বাড়িয়েছে হংকং ইস্যু। হংকংয়ে নিজেদের লাগাম টেনে ধরতে পার্লামেন্টে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে চীন। চীন-বিরোধী বিক্ষোভে গত বছর উত্তাল হয়ে ওঠে হংকং। সার্বভৌমত্ব ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সে সময় পথে নেমেছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাই অনেকেরই অভিযোগ, ওই আইন পাশ করিয়ে আসলে হংকংয়ের বাসিন্দাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চাইছে বেজিং।