পিএম কেয়ার ফান্ডের হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় কত খরচ হচ্ছে? উত্তর নেই। অথচ এদিকে দেশে করোনা পরীক্ষার হার যথেষ্ট নয়। পর্যাপ্ত পিপিই কিটের অভাব। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই সময়ে কেন প্রধানমন্ত্রীর নতুন ত্রাণ তহবিলের টাকা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ঢালা হচ্ছে না? প্রশ্ন বিরোধীদের। ওই ভাঁড়ারে গচ্ছিত টাকার আসল অঙ্কটাই বা কত? জানায়নি মোদী সরকার।
তবে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইট, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রেস রিলিজ ঘেঁটে একটা হিসেব দাঁড় করিয়েছে ‘ইন্ডিয়াস্পেন্ড ডট কম’। পাশাপাশি তারা এটাও জানিয়েছে, আসল অঙ্কটা অনেকটাই বেশি। সংস্থার দাবি, কোভিড মোকাবিলায় পিএম কেয়ার ফান্ডে এখনও পর্যন্ত ৯,৬৭৭.৯ কোটি টাকা ঢুকেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি সংস্থা চলতি অর্থবর্ষেই প্রায় ২,০৯৮.২ কোটি টাকা ওই তহবিলে ঢালার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকবিলায় ও রাজকোষ ঘাটতি সামলাতে সাংসদদের এমপিল্যাডস–র টাকাও বন্ধ করেছে কেন্দ্র। সাংসদদের বেতন ও ভাতা থেকেও ৩০শতাংশ করে কাটা হবে আগামী এক বছর। সব মিলিয়ে ইন্ডিয়াস্পেন্ডের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৭,৮৫৫ কোটি টাকা থেকেই যাচ্ছে কেন্দ্রের ভাঁড়ারে। যা কোভিড যুদ্ধে অনায়াসেই ব্যয় করতে পারে কেন্দ্র।
পিএম কেয়ার তহবিলে শুধু নগদ অর্থই আসেনি। করোনা মোকাবিলায় কোটি কোটি টাকার সুরক্ষা কিট যেমন মাস্ক, পিপিই, টেস্ট কিট, স্যানিটাইজার, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, শুকনো খাবারদাবার সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি, ফিসির মতো দেশীয় সংস্থা এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মতো বিদেশী সংস্থা। সিনেমা এবং খেলার জগৎ থেকে একটা বড় অঙ্কের নগদ অর্থ ঢুকেছে এই তহবিলে। এমন অনেক বেসরকারি সংস্থাও এই তহবিলে টাকা ঢেলেছে, যারা নিজেরাই প্রবল অর্থসঙ্কটে ভুগছে। এছাড়াও বহু সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষক কমিউনিটি, রেলকর্মীরা এই তহবিলে টাকা দিয়েছে। এই টাকা কোথায় খরচ করছে সরকার?
ইন্ডিয়াস্পেন্ডের দাবি, তহবিলের টাকা দিয়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের করোনা পরীক্ষা সম্ভব। সেখানে গত ১৯ মে–র হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ১৩০ কোটির দেশে এখনও পর্যন্ত ‘মাত্র’ ২৪ লক্ষ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানাচ্ছে, এই টাকা দিয়েই প্রায় ১৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের ট্রেন ভাড়া দিতে পারত কেন্দ্র।
প্রায় পঞ্চান্ন দিন, ফান্ডের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফান্ডের হিসেব-নিকেশ, আয়-ব্যয়ের ভার তুলে দিয়েছেন তিন শীর্ষ ক্যাবিনেট মন্ত্রীর ঘাড়ে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সামিল। ফান্ডে কত টাকা জমা পড়ল, জানবেন এই চারজন। কোথায় কত খরচ হল, সিদ্ধান্ত নেবেন এই চারজন। আরও প্রশ্ন ওঠে। নেহরু আমল থেকেই তো একটি ত্রাণ তহবিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের হাতে ছিল। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ)। গত বছরের হিসেব অনুযায়ী ওই ফান্ডে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা মতো মজুত ছিল। তারপরও কেন নতুন একটি ফান্ডের প্রয়োজন পড়ল? আর সেই টাকাই বা কোথায় কোথায় খরচ করা হচ্ছে? প্রশ্ন বিরোধীদের। এড়িয়ে গেছে মোদী সরকার। উত্তর আসবে, আশায় নেই বিরোধীরা।