উম্পুন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গতকালই দক্ষিণ ২৪ পরগণা সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই কেন্দ্রীয় দলকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসককে নির্দেশ দিলেন তিনি। একইসঙ্গে গতকাল শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে উম্পুনের ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অগ্রিম বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় দল ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে আসবেন। ওই সময় প্রতিটি ক্ষয়ক্ষতির হিসেব তাঁদের সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। সেই কারণে সব দফতরকে একযোগে যৌথ ভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব-নিকেশ তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই হিসেবে কোনও ফাঁক না থাকে সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১০ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কাঁচা বাড়ি কোনও ভাবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পাকা বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের আগে প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে আসার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা ঠেকানো গিয়েছে।’
এ দিনের বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তার প্রশংসা করার পরে তিনি বলেন, ‘চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে লড়াই করতে হবে। করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক ও দুর্যোগ- এই চারটি প্রতিকূলতার সঙ্গেই আমাদের লড়াই করতে হবে। তা ছাড়া এখন সরকারের কোনও আয় নেই। মাসিক ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় দু’মাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। করোনায় কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান এখনও হাতে আসেনি। তা সত্ত্বেও উম্পুন দূর্যোগে রাজ্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে। প্রতিটি টাকা হিসেব অনুযায়ী খরচ করতে হবে। জেলা পরিষদ ও প্রশাসন এখন কোনও বড় প্রকল্পের কাজে হাতে দেবে না। উন্নয়ন তহবিলের সমস্ত টাকা উম্পুনের ক্ষতিপূরণে খরচ করতে হবে। পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
দ্রুত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করার জন্যও কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনকে কাজে লাগাতে হবে। গাছ কাটা থেকে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার কাজে স্থানীয় মানুষদের শামিল করতে হবে। কারণ, লকডাউন ও করোনা সঙ্কটে প্রতিটি দফতরে মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মী রয়েছে। কর্মীর অভাবে মেরামতির কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। সেই কারণে ক্ষতিপূরণের সর্বক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষদের শামিল করতে হবে।’
একইসঙ্গে রেশন বিলি নিয়েও বৈঠকে কড়া ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকালের বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পানীয় জল পাউচ প্যাকের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। তা ছাড়া, সবার কাছে রেশন পৌঁছে দিতে হবে। রেশন বিলি নিয়ে আমি কোনও রকম অভিযোগ বরদাস্ত করব না। কোনও রেশন দোকান যদি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, ওই দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। সেখান থেকে রেশন সরবরাহ করতে হবে। কোনও মানুষ যাতে রেশন থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই বিষয়ে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।’