গোটা বাংলা তছনছ হয়ে গেছে উম্পুনের অত্যাচারে। যেমন ছারখার হয়েছে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল তেমনই হাল শহর কিংবা গ্রামের। বুধবার উম্পুন উপকূল ছুয়ে তেজ দেখায় বন্দরেও।যার জেরে বিপর্যস্ত হলদিয়া। উম্পুনের দাপটে ভেসে গেল মন্দারমণির হোটেলও।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দীঘা-শঙ্করপুরে আশঙ্কার তুলনায় ক্ষতির বহর কম। অথচ, সব হিসেব ওলটপালট করে ‘উম্পুন’ তছনছ করেছে হলদিয়াকে। এই ঝড় প্রাণ কেড়েছে ছ’জন জেলাবাসীর। এঁদের মধ্যে রয়েছেন হলদিয়া শহরেরই তিনজন। মৃতরা হলেন হলদিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের রঞ্জিত সিংহ, প্রসেনজিৎ সিংহ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অলোক মাইতি, দেউলপোতের তপন দাস, রামনগর-২ ব্লকের শীতলা গ্রামের অন্নপূর্ণা প্রামাণিক এবং ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ছবি শীট। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। ঝড় তছনছ করেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, উপড়ে ফেলেছে কয়েক হাজার গাছ এবং বিদ্যুতের ক্ষতি। কৃষি জমিতে জল দাঁড়িয়ে ক্ষতি হয়েছে চাষবাসের। বুধবার বিকেল ৩টে পর থেকে জেলায় ঝড়ের দাপট ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাতে জেলার নন্দীগ্রাম, দীঘা, রামনগর, কাঁথি, হলদিয়া ব্লকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উম্পুনের অত্যাচারে তমলুক জেলা হাসপাতাল চত্বরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি গাছ ভেঙেছে। নার্সিং হস্টেল একাংশ এবং জেলা গ্রন্থাগারের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নন্দকুমারের বহিচবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মাইতি বলেন, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়ের সময় গাছ ভেঙে বাড়ির উপরে পড়েছে। কোনও রকমে ছুটে বেরিয়ে আসায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। এখন প্রতিবেশীর বাড়িতে রয়েছি।
অন্যদিকে এগরা মহকুমায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এগরা পুরসভা ও পটাশপুর-২ ব্লকে। এগরা মহকুমায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৪৯টি। সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে এক হাজার ৪২৫টি মাটির বাড়ি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আট হাজার ৬৯৮টি। ঝড়ের কারণে মহকুমার ৬ লক্ষ চার হাজার ২৯০ জন মানুষ ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে। মহকুমার ১৫২টি ত্রাণ শিবিরে মোট ৬,৯৪৪ জনকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ঝড়ে এগরা পুরসভার পটাশপুর পূর্ব খাড়ে দু’জন আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উম্পুনের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মন্দারমণিও। সেখানকার বহু রাস্তা গাছ পড়ে অবরুদ্ধ। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। জলের তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু হোটেলও। সব মিলিয়ে গোটা বাংলা জুড়েই এখন এই ধ্বংসের চিত্র।