রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু প্রায় দেড়শো কিমি হেঁটেও ঘরে ফেরা হল না বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের। মালগাড়ির ধাক্কায় থমকে গেল জীবন। বস্তা বন্দি হয়ে খন্ড-বিখন্ড দেহ পৌঁছল পুরুলিয়ায় দীর্ঘদিনের ভিটেয়। চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না পরিবারের সদস্যদের।
পেটের টানে বাবা, মা, স্ত্রী ও এগারো মাসের পুত্র সন্তানকে ঘরে ফেলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার হাদল গ্রামে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার অক্ষয় মাহাতো। এলাকারই একাধিক যুবকের সঙ্গে সেতু তৈরির কাজ করছিলেন বছর ২৭-এর ওই যুবক। আচমকাই করোনা সংক্রমণ এড়াতে দেশজুড়ে জারি হয় লকডাউন। ফলে কর্মস্থলেই আটকে পড়েন অক্ষয়। প্রায় মাসখানেক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কোনওভাবে দিন কাটে তাঁদের। কিন্তু সেখানে সেভাবে মিলছিল না খাবার। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে আসছিল জমানো টাকা। তাই যে কোনও মূল্যে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় অক্ষয়। পিংলা থেকে রাস্তা, জঙ্গল পার হয়ে খড়গপুর ডিভিশনের জগপুর এলাকায় রেললাইনের ট্র্যাকে ওঠেন। হাঁটাপথে রাস্তা ভুলে যাবেন বলেই বোধহয় রেললাইন ধরে আসার সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটাই কাল হল! জগপুর থেকে ভাদুতলা আসতেই শুক্রবার ভোররাতে তাঁকে পেছন থেকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়ে যায় একটি পণ্যবাহী ট্রেন। পরে সকাল দিকে ঘটনার খবর পেয়ে চন্দ্রকোনা জিআরপির মৃতদেহ উদ্ধার করে বাঁকুড়া ময়নাতদন্তে পাঠায়। তারপর ওই দিন রাতে কোনাপাড়ার গ্রামে বস্তাবন্দি হয়ে আসে মৃতদেহ।