কথা দিচ্ছি, নব বর্ষে আর তোমায় অবহেলা করবো না। আর স্রেফ এক আধদিন তোমায় উদযাপন করে বাকি দিনগুলো আলমারির মাথায় বা চিলেকোঠার ঘরে অযত্নে রেখে দেবো না। কথা দিচ্ছি।
কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমি অনলাইনে ওষুধ, ডিজিটাল মুদিখানা ছেড়ে নতুন কাপড়-জামা পরে পাড়ার শংকর কাকুর দোকানেই ফিরবো। দোকানের দরজার মাথায় কচি আম পাতার শুভ প্রতীক। শংকর কাকুর দেওয়া মিইয়ে যাওয়া কচুরি আর খুব মিষ্টি সন্দেশই তৃপ্তি করে খাবো। প্রমিস করছি সেভেন আপ আর হালখাতাতেই ফিরবো৷ অনেক হলো ডিজিটাল সবকিছু। এবার ফের হালখাতায় পুরনো মোহরের ছাপ তুলে লক্ষ্মী-গণেশের নবকলেবর প্রতিষ্ঠা করবো।
কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে, আমরা ফের শৈশবে ফিরে যাবো। পয়লা বৈশাখের সকালে লুচি আর সাদা আলুর তরকারি,নাড়ু,খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, গজা, জিলিপি খেয়ে, সব ভাই বোনেরা মিলে কানামাছি, দাড়িয়াবান্দা, ডুডু, চু-কিৎকিৎ-ছুট খেলবো।
কথা দিচ্ছি বেঁচে ফিরলে গোলাপ, লিলি, ক্রিসেন্থেমাম না বরং ভাঁটফুল, কাঠগোলাপের বন আর বেতসলতার ঝোপে ফিরবো৷ কাঁটা ফল ছুঁড়ে মারবো বন্ধুর জামায়, বান্ধবীর চুলে গেঁথে দেবো কাঁটা ফলের গুচ্ছ। ও রাগত চোখে তাকিয়ে হেসে ফেলবে। তারপর এক এক করে ওর চুল থেকে কাঁটা বেছে ফেলবো। কথা দিচ্ছি এবার স্লথ গতিতে ভালোবাসবো। চুমু গুলো দীর্ঘ হবে।
কথা দিচ্ছি জ্বরের শেষে সূর্য ধোয়া ঘর আজকের দিনে গোবরের ছিটে দিয়ে পবিত্র করবো দিদা যেভাবে করতো, মায়ের মতো আলপনা দেবো অনেকক্ষণ ধরে। গোছা গোছা নিমপাতা ঝোলাবো দরজায়, গলা ছেড়ে গান গাইবো। প্রমিস করছি এসব শেষ হলে গ্রামের মাটির গন্ধ বুক ভরে নেবো কালবৈশাখী বিকেলে। নাগরদোলা, জাদু, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, মোরগের লড়াই বসাবো কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রমিস করছি সন্ধে নামার আগে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো। পৃথিবীর অসুখ সেরে যাক। আমাদের দূরত্ব মিটুক।
কথা দিচ্ছি আর নাট সেঁটকাবো না সপ্তপদের গিমাশাক, সর্ষেশাক, হলুদপাতা, পাটশাক, কলমিশাক, থানকুনিপাতা, নিমপাতা পাতে পরেছে দেখে।
কথা দিচ্ছি নতুন আইফোন না কিনতে পারার মনখারাপ আর হবে না। বরং মেলা থেকে টিনের জাহাজটা দশটাকা বেশী দিয়ে কিনেছি বলে আপশোশ হবে। ওই দশটাকা দিয়ে দুটো বুড়ির চুল কেনা যেত। প্লাস্টিকের বিভিন্ন বাঁশি কিনতে পারতাম। চাপ দিলে ফুত ফুত আওয়াজ হতো। আমার শৈশব শুনতে পেতো ওই ধ্বনি।
বেয়াদব নেওটা বেড়ালছানার মতো স্মৃতি বারবার এসে গায়ে গা ঘষে দিচ্ছে। রুদ্ধ জীবনের এসব বৈশাখ তীব্র দাবদাহ শেষে ঝড় বৃষ্টির মতো। এসব সময় জানালা হুট করে খুলে যায়। উঁকি মেরে ফের ফেলা আসা সবটা দেখতে ইচ্ছে করে। অনেক তো দৌড় ঝাপ হলো। কোরোনা তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। অর্থ, ক্ষমতা, সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা ক্ষনিকের। দুম করে একদিন চলে যেতে হবে। কথা দিচ্ছি পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আর অবহেলা করবো না আমাদের আশেপাশের মানুষকে। মানুষের ঘরবাড়িকে, বন্ধুকে, ছোট ছোট বাঁচার মুহুর্ত আর কারণগুলোকে। কথা দিচ্ছি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত