মুম্বাইয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়ালো। ১৫০০ জন আক্রান্ত। ধুর! এতো সহজে ভেঙে পরবে মুম্বাই? সেই শহর যার ধর্মই হলো জীবনকে উদযাপন করা? যে সিরিয়াল ব্লাস্ট এর পরের দিন ফের গমগম করে, অফিস দোকান আর পাঁচটা দিনের মতোই খুলে যায় সন্ত্রাস হামলার পরে, বন্যা হলে যেখানে বিশাল বিশাল অফিসগুলো খুলে দেওয়া হয় আর দোকানদার নিজের দোকানে স্টক করা বিস্কুট আর জলের বোতলগুলো অকাতরে বিলিয়ে দেয় অফিস যাত্রীদের, গাড়ি ঘোড়া না পেয়ে আটকে গেলে যাতে তারা জল আর বিস্কুট খেয়ে নিতে পারে।
যখনই মুম্বাইকে প্রতিকূলতার মুখে দাঁড় করানো হয়, মুম্বাই তার সুপারহিরোদের ডেনে আনে। সাধারণ দেখতে সব মানুষরা Avengers এর মতো দাঁড়িয়ে পরে শত্রুর সামনে। জ্যায়সে ফিলমো মে হোতা হে! প্রেমিকাকে আগলে নায়কের মতো দাঁড়িয়ে পরে মুম্বাইকাররা।
সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা ২০ ঘন্টা কাজ করছে বলে তাজ হোটেল রোজ তাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে শিবাজী পার্ক এলাকার শ্মশানে যারা রোজ কোরনায় মৃত মানুষদের চুল্লিতে পোড়াচ্ছেন তাদের জন্য খাবার যাচ্ছে আশেপাশের তথাকথিত সম্ভ্রান্ত সব বাড়ি থেকে। পুলিশ রোজ ভাবছে সে কাল ছুটি পাবে, বাড়ি ফিরে সন্তানের মুখ দেখবে কিন্তু রোজ আরো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়তে জান লড়িয়ে দিচ্ছে। এ যেন ২৬/১১ র থেকে ও ভয়াবহ এক পরিস্থিতি।
মুম্বাইয়ে প্রতি দুমিনিটে একটা করে লোকাল ট্রেন চলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ও জটিল রেল নেটওয়ার্ক। প্রতিটা কামরার প্রতিটি হ্যান্ডেল, সিট পরিস্কার করে গেছে এক ডজন ছেলে৷ তারপর নিজেরা অসুস্থ হয়ে পরেছে। এখন ট্রেন চলছে না কিন্তু রেলের আধিকারিকরা রোজ অফিসে বসে হাজার হাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের দিস্তে দিস্তে রিজার্ভড কামরার লাখ লাখ যাত্রীর খোঁজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা সবাই সংক্রমণের শিকার হতে পারে। এদের মাঝেই একাধিক পজিটিভ রোগী যাত্রা করেছে।
এশিয়ার সবচেয়ে বড় জনবসতি ধারাভি ও আক্রান্ত। এক একটা দেশলাই বাক্সের মতো ঘরে বিশ তিরিশজন শুতে আসে স্রেফ৷ প্রতি দু পা হাঁটলে পঞ্চাশটা মানুষের ধাক্কা লাগে। ট্রাম্প বা পুতিন ও হয়তো পাগল হয়ে যেত এর পরিনতি ভেবে। কিন্তু বালাসাহেব ঠাকরের ছেলে, উদ্ধব ঠাকরে ভয় পায়নি। যা হবে দেখা যাবে বলে গোটা প্রশাসনকে নিয়ে নেমে পরেছে মাঠে। সন্ত্রাস হামলার পরে যেভাবে মুম্বাই প্রশাসন লড়াই করে সেভাবে ঝাপিয়ে পরেছে। টেস্ট টেস্ট টেস্ট। পাগলের মতো সন্দিগ্ধ মানুষ খুঁজে টেস্ট চলছে। টাকা কম পরলে ফোন যাচ্ছে জাঁদরেল লোকেদের বাংলোতে। টাকা ছাড়ুন।
মুম্বাই একটি স্বপ্নের নাম। এখানে রোজ একটা করে সাফল্যের গল্প লেখা হয়৷ এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ২০% থাকে। বিশাল বিশাল ইমারত, চোখধাঁধানো তারকা গলি। আবার এখানেই স্রেফ পদপৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা যায়। রাস্তার খোলা ম্যানহোলে ভেসে যায় লোক। গুলি খায় বিয়ারে চুমুক খেতে খেতে কোন পাবে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এবার ও মুম্বাই বেঁচে যাবে। ফের এক দন্ড দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না। ফের গমগম করবে দিন আর রাত। কেন জানেন?
কারণ মুম্বাইয়ে সব্বাই শহরটাকে নিজের প্রেমিকা মনে করে। রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ভালোবাসা জাহির করতে। এক সপ্তাহ হলো যে ছেলেটা সদ্য ট্রেন থেকে নেমেছে সে, বিহার থেকে ট্যাক্সি চালাতে এসেছে সে, তালি বাজিয়ে সিগনালে সিগনালে টাকা তোলে সে, বাদশা বলে ডাকা হয় যাকে সে, মুম্বাইয়ের রাজা বলা হয় যাকে সে, ডোংরির ডন ছিল যে সে। এরা না না রাজ্যের থেকে এসে, না না ভাষাভাষী হয়ে ও প্রেমিকাকে নিয়ে বলার সময় স্রেফ একটাই লাইন বলে – মুম্বাই মাঝি জান আহে। হিন্দি করলে, মুম্বাই মেরি জান।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত