লকডাউনের নিয়ম মেনেও দিন আনি, দিন খাই মানুষের জন্য যতটা সম্ভব উপার্জনের পথ খুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুধ-চাষিদের পরে এ বার ফুলচাষি, ফুল বিক্রেতা এবং বিড়ি শ্রমিকদের কিছুটা সুরাহা করার চেষ্টা করলেন তিনি। তবে রোজকার মতো মঙ্গলবারও তিনি পই পই করে বলে দিয়েছেন, লকডাউনের সমস্ত নিয়ম মেনে পরস্পরের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই ফুলচাষি, বিড়ি শ্রমিক, দুধ-ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের বেচাকেনা করতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘এখনও আমরা স্টেজ টু-তে আছি। তাতেই এই অবস্থা। লাখো লাখো মানুষ যাতে সংক্রামিত না-হয়, তা আপনাদেরও সুনিশ্চিত করতে হবে।’
দরিদ্রদের পাশে রাজ্য সরকার কী ভাবে দাঁড়িয়েছে, সে খতিয়ান তুলে ধরে আজ, বুধবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠকে বিশেষ আর্থিক সহায়তার দাবি তুলবে তৃণমূল। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক দিক থেকে রাজ্যের প্রচুর অসুবিধে হচ্ছে৷ করোনা বিপর্যয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচুর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে৷ এটা খুব বড় সমস্যা৷ এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাব৷’
দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে বলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মিষ্টির দোকান খোলার ছাড়পত্র দিয়ে দুগ্ধব্যবসায়ীদের কিছুটা সুরাহা কে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার ফুলচাষি এবং বিড়ি শ্রমিকদের উপার্জনের রাস্তা খুলতে চাইলেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, যে সব দরিদ্র মানুষের কোনও স্থায়ী উপার্জন নেই, তাঁরা দীর্ঘ লকডাউন পর্বে একেবারেই রোজগার করতে না-পারলে সামাজিক সমস্যা আরও বাড়বে। সরকার রেশনের মাধ্যমে যতটা সম্ভব পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু দরিদ্রদের হাতে নগদ ফুরিয়ে এলে বাজার সচল রাখা যাবে না। তাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে দরিদ্রদের চাল-গম দিচ্ছে সরকার। কিন্তু নবান্ন মনে করছে, হাতে কিছু নগদ না-থাকলে অনেকে ধারদেনা করতে বাধ্য হবেন। তাই পেশা ধরে ধরে দিন আনি, দিন খাই মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রিত রোজগারের রাস্তা খোলার চেষ্টা হচ্ছে।
নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন, লকডাউনের নিয়ম মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিড়ি শ্রমিকরা বিড়ি বাঁধতে পারবেন। সেটা অনেকেই করছিলেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল তা সংগ্রহ করা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এজেন্টরা এক বা দু’জন লোক পাঠিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের বাড়ি থেকে বিড়ি সংগ্রহ করতে পারবেন। দল বেঁধে কাজ করা যাবে না। মমতার কড়া নির্দেশ, বিড়ি শ্রমিকরা যেন এক জায়গায় সাত জনের বেশি জড়ো হয়ে গাদাগাদি করে বসে বিড়ি তৈরি না করেন। পরস্পরের সঙ্গে ন্যূনতম দু’মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে বিড়ি বাঁধা যাবে।