করোনা মোকাবিলায় দেশের অধিকাংশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকায় আগেই লকডাউনের কথা ঘোষণা হয়েছিল। তবে তার মধ্যেই মঙ্গলবার রাত ৮টায় ফের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে গোটা দেশজুড়েই টানা টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতোই মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে গোটা দেশে জারি লকডাউন। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে ৫ দিন। কিন্তু এখনও দিল্লীর আনন্দবিহার জনারণ্য। আটকে রয়েছেন লক্ষাধিক আশ্রয়হীন, অসহায়, অভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক। নেই কোনওরকম স্বাস্থ্যবিধি। নেই ঘরে ফেরার আশ্বাসও। বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থানের বাসিন্দা। অনেকে হেঁটে নিজের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। যার জেরে আগ্রার কাছে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুও হয়েছে এক ব্যক্তির। এতকিছুর পর অবশেষে রবিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিভিন্ন রাজ্যে ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের ১৪ দিন গৃহবন্দী করে রাখার নির্দেশ জারি করেছে। তৈরি করতে বলা হয়েছে ‘শেল্টার হোম’।
রবিবার সকাল ৯টা। দিল্লীর আনন্দবিহার বাস টার্মিনাল চত্বর তখনও জনারণ্য। কোলে দশ মাসের শিশুপুত্র। মা পূজা অবস্তির আঁচল ধরে আরও দুই শিশুকন্যা। অঝোরে কেঁদে চলেছেন। দানাপানি পড়েনি পেটে। পূজা উত্তরপ্রদেশের হাপুরের বাসিন্দা। স্বামী দিল্লীতে এইমসে চিকিৎসাধীন। তাঁর কাছে যেতে হবে। পথ আটকেছে পুলিশ। আবার সরকারের পাঠানো বাসে ওঠার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন বছর পঁয়ষট্টির লাল সিং। তিনিও পরিযায়ী শ্রমিক। বাড়ি বুন্দেলখণ্ডে। তিনদিন ধরে আটকে আনন্দবিহারে। এমনই নানা ছবি গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ‘ঘরে’ ফিরতে চান। দু’দিন আগেই শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে বাস পাঠিয়েছে হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ সরকার। তবে তা অত্যন্ত কম। বিজেপি-শাসিত দুই রাজ্যের এমন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিজেপি শীর্ষ নেতাদের অনেকে ঘনিষ্ঠ মহলে মনোহরলাল খট্টর ও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বাসে গাদাগাদি করে এভাবে শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন। সূত্রের খবর, দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভোট ব্যাঙ্ক’–এর রাজনীতির ফলে দেশজুড়ে লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের ধমকে শ্রমিকদের বাসে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। যদিও কোনও না কোনও সঙ্কুলানের ভরসায় পথে বসে রয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউন চলাকালীন দিল্লী-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে জড়ো হওয়া এই পরিযায়ীদের নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি। কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা চলেছে নানা মহলে।
যদিও অবশেষে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিপির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এক নির্দেশ জারি করে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে তাদের রাজ্য ও জেলার সীমান্ত জরুরি ভিত্তিতে ‘সিল’ করতে বলা হয়েছে। অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের সব সহযোগিতা করতেও নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বলা হয়েছে, নিজেদের এলাকায় ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের রাখতে হবে বাড়ির কাছে ‘শেল্টার হোম’–এ। যে শ্রমিকরা কর্মস্থলে রয়ে গেছেন, তাঁদের বাড়ির মালিকরা বাড়িভাড়া চাইতে পারবেন না। ভাড়ার জন্য জবরদস্তি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগকারীকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মজুরিতে কাটছাঁট করা চলবে না। পুরো মজুরি দিতে হবে।