না ফিরতে পারা যাচ্ছে বাড়ি, আর না-ই সঙ্গে রয়েছে দিন কুড়ি বাইরে কাটানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ। দেশজোড়া লকডাউনের জেরে এমনই উভয় সংকটে পড়েছেন ভিনরাজ্যে ছুটি কাটাতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলার বহু পর্যটক। কেউ আটকে হিমাচলপ্রদেশে আবার কেউ আটকে ফেরার পথে অন্য কোথাও। এখন তাঁরা আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন। খাবার পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
যেমন হিমালচলপ্রদেশে বেড়াতে গিয়ে কালকায় আটকে পড়েছেন হুগলির পোলবার সুগন্ধা ও চন্দননগরের আঠেরো জন পর্যটক। এর মধ্যে দুই শিশু-সহ পাঁচজন নাবালক ও পাঁচজন মহিলা রয়েছেন। কালকা থেকে ফোনে সেই দলের সদস্য গোপাল দাস বলেন, ‘লকডাউনের কথা জানার পরেই আমরা সেই মতো আগের টিকিট বাতিল করে নতুন করে টিকিট কাটি। এই অবস্থায় মঙ্গলবার নতুন করে তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করার ফলে এখন আমরা আটকে পড়েছি। আমরা রয়েছি কালকার একটি হোটেলে।’
তাঁদের কথায়, ১৩ মার্চ যখন হিমাচলে তাঁরা পৌঁছন তখন বুঝতেই পারেননি পরিস্থিতি এমন হতে পারে। ২০ মার্চ যখন এই পরিস্থিতির কথা জানতে পারেন তখন তাঁরা কল্পাতে। সেখান থেকে নামতে দুদিন সময় লেগে যায়। রবিবার জনতা কার্ফু থাকায় সেদিন তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। অবশেষে তাঁরা কালকার দিকে রওনা হন। রাত কাটান মাণ্ডিতে। শনিবার থেকেই তাঁরা কালকার একটি হোটেলেই রয়েছেন। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ‘দিদিকে বলো’তে কল করে জানিয়েছেনও তাঁরা। আবার হিমাচলপ্রদেশের মাণ্ডিতে কোন্নগরের আরও ১০ জন এবং হাওড়ার সাতজন পর্যটক আটকে পড়েছেন। খাবার ও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে তাঁরা রয়েছেন।
অন্যদিকে, লকডাউনের জেরে সংকটে পড়ে গিয়েছে এদেশ থেকে ভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়া পড়ুয়ারাও। আন্তর্জাতিক বিমান ও বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট করে ফেরানো হচ্ছে না বিদেশে থাকা কোনও ভারতীয়কে। তাই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আটকে পড়া শতাধিক বাংলার পড়ুয়া চিঠি লিখছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাতে তাঁরা নিজের নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেন।
জানা গিয়েছে, করোনার প্রকোপে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেনাপোল চেকপোস্টে আটকে রয়েছেন এই রাজ্যের শতাধিক পড়ুয়া। এদের সিংহভাগই সংখ্যালঘু সমাজের। এদের সকলের কাছেই রয়েছে বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা। কিন্তু বাংলাদেশেও যেমন করোনা ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি ইতিমধ্যেই সেখান ৪জন মারাও গিয়েছেন এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ঠিক সেই কারণেই এখন ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে এদেশে কাউকে আসতে দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে অকূলপাথারে পড়েছে এই পড়ুয়ারা।
শেষে তাঁরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন, যাতে তিনি কোনও ব্যবস্থা করে দেন তাঁদের বাড়ি ফেরার জন্য। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের আধিকারিক আহসান হাবিব জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বেনাপোল স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে কয়েকশো ভারতীয় নাগরিকরা অপেক্ষায় রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে আবার শতাধিক পড়ুয়া যারা পশ্চিমবঙ্গেরর বাসিন্দা।