রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কাজে ইতিমধ্যেই সন্তোষ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর বাংলার কো-অর্ডিনেটর ডাঃ প্রীতম রায়। করোনা রুখতে বাংলার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে যে কেন্দ্রও গর্বিত বোধ করছে সে কথাও কবুল করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান। তবে বিলেত ফেরত কলকাতার এক যুবকের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও তাঁর থেকে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, এ ব্যাপারে আরও সাবধানতা জরুরি। তাই এবার ভিন রাজ্য থেকে আসা বাঙালিদের উপর চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখতে অভূতপূর্ব ম্যান মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করল নবান্ন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাজ্য সরকার এই পদক্ষেপ করেছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ভিন রাজ্য থেকে আটটি দূরপাল্লার স্পেশাল ট্রেন ঢুকেছে বাংলায়। তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র-সহ ভিন রাজ্যে যে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ করেন মূলত তাঁদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে। কিন্তু তাঁদের ঘরে ফেরালেও প্রশাসন সতর্ক। প্রথমত, ওই ট্রেনগুলি বাংলায় প্রবেশের পর শিয়ালদহ ও হাওড়া-সহ রাজ্যের যে স্টেশনগুলিতে থেমেছে সেখানে সমস্ত যাত্রীকে যথাসম্ভব স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাশাসক ও স্থানীয় মহকুমা শাসকের তত্ত্বাবধানে তা চলছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্ক্যানিংয়ের বিষয়টি দেখছেন। কারও শরীরে কোনওরকম সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে স্টেশন থেকে কে কোন জেলায় যাচ্ছেন, তাঁর বাড়ির ঠিকানা সবই জেনে নিচ্ছে প্রশাসন। তার পর তাঁকে আপাতত ১৪ দিন গৃহবন্দী থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল, তাঁরা কি সত্যিই গৃহবন্দী থাকছে? নবান্ন সূত্রে খবর, যাঁরা ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন তাঁদের ওপর নজর রাখার জন্য ম্যান মার্কিংয়ের মতো অভূতপূর্ব ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি ব্যক্তি বা পরিবারের ওপর ৩ জন নজর রাখবেন—স্থানীয় একজন ভিলেজ রিসোর্স পার্সন তথা ভিআরপি, একজন আশা কর্মী এবং একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। যাঁরা ভিন রাজ্য থেকে এসেছেন তাঁদের শরীরে বা তাঁদের পরিবারের কারও শরীরে কোনও সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে প্রতিদিন তিন বেলা খোঁজ রাখবেন ভিলেজ রিসোর্স পার্সন ও আশা কর্মী। বাইরের রাজ্য থেকে এসে প্রকৃতই গৃহবন্দী রয়েছেন কিনা, নাকি বাইরে বেরোচ্ছেন সে ব্যাপারে নজর রাখবেন একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আমরা এখন সংক্রমণের তৃতীয় স্টেজে প্রবেশের মুখে। যখন সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে সংক্রমণ অতি দ্রুত হারে ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল। সে কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ মমতা সরকারের।