লন্ডন থেকে ফেরার পর চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করেছিলেন রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্ত তরুণ এবং তাঁর আমলা মা তথা গোটা পরিবার। রবিবার এয়ারপোর্টে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পর তাঁকে বেলেঘাটা আইডিতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও বিমানবন্দর থেকে সোজা বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর সোমবার সকালে আবাসনের সবার সঙ্গে যেমনি কথা বলেন তিনি, তেমনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দেন। এমনকি তারপর মায়ের সঙ্গে নবান্ন থেকে শুরু করে শপিং মলেও যান। যে কারণে ইতিমধ্যেই তাঁকে দুষছেন গোটা রাজ্যবাসী। এবার জানা গেল, ঠিক একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন শহর তথা রাজ্যের দ্বিতীয় করোনা আক্রান্ত তরুণও।
শুক্রবার সকালেই শহর কলকাতার এক তরুণের শরীরে মেলে নোভেল করোনা ভাইরাসের হদিশ। আর তারপরই তড়িঘড়ি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয় তাঁকে। জানা গিয়েছে, গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে যখন শহরে ফেরেন তিনি, তখনই বিমানবন্দরে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন বাড়িতে পর্যবেক্ষণে থাকেন। পরবর্তী ১৪ দিন বাড়ি থেকে না বেরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অথচ নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই কলকাতায় আসা ইস্তক বেপরোয়া ভাবে ঘুরে বেরিয়েছেন লেক রোডের ২২ বছর বয়সী ওই তরুণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লেক রোডের কলকাতার অন্যতম অভিজাত একটি আবাসনের বাসিন্দা তিনি। বাবার বাথরুম ফিটিংসের বিশাল ব্যবসা। একাধিক দোকানের মধ্যে দু’টি রয়েছে কালীঘাট এলাকার এসপি মুখার্জি রোড এবং ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। কালীঘাট এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিনে ওই যুবককে বেশ কয়েক বার দেখা গিয়েছে এসপি মুখার্জি রোডের ওই দোকানে। অন্য দিকে আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আবাসনের সর্বত্রই তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাইরের শপিং মল, রেস্তোরাঁতেও গিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ তারিখ ফেরার পর থেকে গতকাল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন এই যুবক।
কালীঘাট একালার এক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই দেখি ওই যুবক দোকানে বসে রয়েছেন। তার পর জানতে পারি, সম্প্রতি ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছেন তিনি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, কেন তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি তিনি বা তাঁর বাবা।’ আবার যে আবাসনে তিনি থাকেন, সেই আবাসনেই ফ্ল্যাট রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার এক দাপুটে মেয়র পারিষদেরও। তিনি বলেন, ‘আমার এই আবাসনে বাসিন্দা রয়েছেন কম করে আড়াইশো জন। তা ছাড়াও গাড়ির চালক, পরিচারক-পরিচারিকা মিলিয়ে সংখ্যাটা আরও বেশি। তাঁদের সবাইকেই আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে তাঁর বেপরোয়া আচরণ।’
সূত্রের খবর, গত ২-৩ দিন ধরেই সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তাঁর শরীরে। কিন্তু তার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাননি তিনি। গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা কালীঘাট থানার পুলিশের নজরে বিষয়টি আনলে, পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দফতরকে। এর পর স্বাস্থ্য দফতর যোগাযোগ করে পরিবারের সঙ্গে। তার পরই উপসর্গ দেখে তাঁকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কালীঘাটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের ওই দুটো দোকানেই রয়েছেন ৫-৬ জন করে কর্মী। তাছাড়াও তাঁর উপস্থিতিতেই বিভিন্ন ক্রেতারাও এসেছেন। অর্থাৎ এঁরা সবাই ওই যুবকের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন। ঠিক তেমনই ওই আবাসনেরও বহু বাসিন্দাও তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন।
মেয়র পারিষদের কথায়, ‘কয়েকশো মানুষের জীবন বিপন্ন করলেন ওই তরুণ। যদিও তার পরও কোনও হেলদোল নেই যুবকের বাবার।’ স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘ওই যুবক কলকাতায় আসার আগে কোথায় কোথায় ঘুরেছেন এবং আসার পর কোথায় কোথায় গিয়েছেন, আমরা এখনও তার স্পষ্ট তথ্য পাইনি। এই ক’দিনে কার কার সংস্পর্শে তাঁরা এসেছেন, তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বয়সের কারণে তাঁর ঠাকুরদা এবং ঠাকুরমাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।’