শালবনের মাঝে মেঠো পথ ধরে যেতে যেতে গান গাইছেন টেনিদা — ‘তোলপাড়-দুদ্দাড়-ঝোপঝাড়-তোলপাড়’! সঙ্গী প্যালারাম, ক্যাবলা আর হাবুল।
কাঁকড়াঝোরের বন বাংলোয় উঠেছিলেন ‘চারমূর্তি’। ১৯৭৮ সালের বাংলা সিনেমা ‘চারমূর্তি’ তৈরি হয়েছিল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার কাহিনি অবলম্বনে। বন বাংলোয় বসেই মান্না দে-র গাওয়া ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো’ গানে লিপ দিয়েছিলেন টেনিদার ভূমিকায় অভিনয় করা চিন্ময় রায়। সেই টেনিদা আর নেই। কাঁকড়াঝোরের বনবাংলোও এখন ধ্বংসস্তূপ।
উমানাথ ভট্টাচার্য পরিচালিত ওই ছবিতে বার কয়েক দেখা গিয়েছিল সাদা বন বাংলোটিকে। সিনেমার ছোট একটি দৃশ্যে গাড়োয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কাঁকড়াঝোরের গোপীনাথ মাহাতো। ষাটের দশকের শেষে কলকাতায় গিয়েছিলেন গোপীনাথ। তাঁর গোঁফ জোড়া পছন্দ হয় স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের। পরে একবার কাঁকড়াঝোরে এসেছিলেন সত্যজিৎ। থেকেছিলেন বন বাংলোতে। সেই সূত্রেই পরে উমানাথ জেনেছিলেন কাঁকড়াঝোরের কথা।
সেই মতো ঝন্টিপাহাড়ির সেই বন বংলো হিসেবে কাঁকড়াঝোরের লোকেশন পছন্দ হয় প্রযোজকের। আর চিন্ময় রায়? তিনি কাঁকড়াঝোরের জঙ্গল-পাহাড়ের প্রকৃতি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে মাঝে মধ্যেই শ্যুটিং থামিয়ে তাকিয়ে থাকতেন লাকাইসিনির পাহাড়ের দিকে। জানা যায়, ১৯৭৬-৭৭ সাল নাগাদ শ্যুটিং হয়েছিল। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে চিন্ময় রায়রা গ্রামে ঘুরতেন। তাঁদের জন্য রান্না হত দিশি মুরগির ঝোল। পরে আর কাঁকড়াঝোরে আসেননি চিন্ময়। ২০০৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর রাতে মাইন বিস্ফোরণে বন বাংলোটি ধ্বংস করে দিয়েছিল মাওবাদীরা। চিন্ময় আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘কাঁকড়াঝোরের অমন সুন্দর বাংলোটা আর নেই!’’ ২০০৫ সালে গোপীনাথ কলকাতায় গেলে তাঁকে চিন্ময় বলেছিলেন, ‘‘নতুন করে বাংলোটা হলে বলিস, এক বার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’’ সেই ইচ্ছে আর পূরণ হয় নি তাঁর। কাঁকড়াঝোরে নতুন করে বন বাংলো তৈরির পরিস্থিতি নেই বলে মনে করেছিল বন দফতর।
সেই ‘চারমূর্তি’ ছবিতে হাঁড়ি আঁকড়ে বসে তাঁর রসগোল্লা খাওয়ার দৃশ্যটা আজও আইকনিক! ব্যক্তিজীবনেও চিন্ময় রায় খাদ্যরসিক ছিলেন। এক বার সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন চিন্ময়। উদ্যোক্তারা অতিথিদের মিষ্টি খাওয়ানোর পরে সন্ধ্যা রায়ের জন্য আলাদা করে এক হাঁড়ি মিষ্টি গাড়িতে তুলে দেন। সন্ধ্যা বাড়ি ফিরে দেখলেন, হাঁড়ি উধাও! ঘটনার দিন চারেক পরে অভিনেত্রীর বাড়িতে ফোন আসে। ‘‘মিষ্টি খেলাম অনেক। ছানার জিলিপি… আরও কত কী! হাঁড়িতে অবশ্য নাম লেখা ছিল ‘সন্ধ্যা রায়’। কিন্তু আমি খেয়ে নিলাম। ভাবলাম সন্ধ্যা তো খায় না। আমি ভালবাসি, আমিই খাই। খেয়ে নিয়ে ফোন করব!’’ বক্তা চিন্ময় রায়। অভিনেতার স্মৃতিচারণায় কথাগুলো সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন শ্রীমতী সন্ধ্যা রায়। হাঁড়িটি আসলে ভুল করে চিন্ময়ের গাড়িতে রাখা হয়েছিল!
এক বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন চিন্ময় রায়। রেখে গিয়েছেন তাঁকে নিয়ে অনেক গল্পকথা আর কিছু ভাল ছবি। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘চারমূর্তি’, ‘ননীগোপালের বিয়ে’ …
চিন্ময়বাবুর জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লায়। ১৯৪০ সালের ১৬ জানুয়ারি। রুপোলি পর্দায় কমেডিয়ান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও অভিনয় জগতে চিন্ময়বাবুর শুরুটা হয়েছিল থিয়েটারের মঞ্চে। নান্দীকারের মতো গ্রুপ থিয়েটারের দলে। তবে এক সময় সে দলও ছেড়ে দেন তিনি। চিন্ময়বাবু পরে বলেছিলেন, “সেটাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।”
এর পর অভিনয় শুরু রুপোলি পর্দায়। প্রথম ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’। তপন সিংহের পরিচালনায় প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন। এর পর আর থেমে থাকেননি। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘চারমূর্তি’,‘মৌচাক ’,‘হাটে বাজারে’, ‘ঠগিণী’,‘ফুলেশ্বরী’, ‘সূবর্ণ গোলক’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’— একের পর ছবিতে তিনি মাতিয়েছেন বাঙালি দর্শককে।
তথাকথিত সাদামাটা চেহারা সত্ত্বেও নিজের অভিনয় প্রতিভায় রুপোলি পর্দায় নায়কদের পাশে রীতিমতো নজর কেড়েছেন। নবদ্বীপ হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের পর বাংলা ছবিতে কমেডিয়ানের ভূমিকায় রবি ঘোষ বা অনুপকুমারের সঙ্গে পাল্লাও দিয়েছেন সমানে সমানে।
বরানগরে ছোটবেলা কেটেছিল তাঁর। আদতে অবশ্য তিনি পূর্ববঙ্গের মানুষ। হইচই করে আড্ডা দিতে ভালবাসতেন। যে কারণে শুটিংয়ের কলটাইমের আগেই হাজির হয়ে যেতেন সেটে। ‘‘চিন্ময় ভীষণ টিমম্যান ছিলেন। দশটায় কলটাইম হলে চলে আসতেন ন’টার সময়। মেকআপ রুমে সকলের সঙ্গে বসে আড্ডা দেবেন বলে। এই কালচার আর আছে কি না আমার জানা নেই,’’ বলছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। যাঁর ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’তে অভিনয় করেন চিন্ময়।
জহর রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষের পরে কৌতুক চরিত্রে দক্ষ অভিনেতা হিসেবে চিন্ময়ের নাম উচ্চারিত হয়। কমিক চরিত্রে বেশি অভিনয় করলেও সব ধরনের কাজেই সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। গ্রুপ থিয়েটারও করতেন নিয়মিত। তবে আক্ষেপ ছিল, সিনেমার ক্ষেত্রে শুধু কমিক চরিত্রেই তাঁকে ভাবা হতো বলে। ‘‘অন্য ধরনের তেমন কোনও চরিত্র না পাওয়ার দুঃখ ছিল ওঁর,’’ পরে জানিয়েছিলেন শ্রীমতী সন্ধ্যা রায়।
চিন্ময় বিয়ে করেছিলেন জুঁই বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ‘বালিকা বধূ’তে প্রথম দেখেছিলেন তাঁকে। সরাসরি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘প্রেমে পড়লে বেশি দিন ফেলে রাখতে নেই। লজ্জা না করে প্রোপোজ় করতে হয়।’’ ব্যক্তিজীবনেও মানুষটা এতটাই আমুদে ছিলেন।
খাদ্যরসিক মানুষটি নিজে রাঁধতেও ভালবাসতেন। ছুটির দিন মানেই খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা! ইন্ডাস্ট্রির চিন্ময় রায় কিন্তু বাড়িতে একেবারে বাবারা যেমন হন, ঠিক তেমন ছিলেন। শঙ্খ রায় আর পরমা মুখোপাধ্যায় তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। ছেলের কথায়, ‘‘কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমরা কী করছি, সে সব দিকে নজর রাখতেন। ছোটবেলায় আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলেও জেগে থাকতাম, বাবা এলে গল্প করব বলে।’’ দুষ্টুমি করার জন্য অবশ্য বাবার কাছে বকুনিও খেয়েছেন।
থিয়েটার, সিনেমার পাশাপাশি গান নিয়েও অসম্ভব প্যাশনেট ছিলেন অভিনেতা। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, কিশোরকুমার ছিলেন তাঁর পছন্দের শিল্পী। ছেলে শঙ্খ সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘বাবা পুরনো দিনের ওয়েস্টার্ন মুভি দেখতে ভালবাসতেন। এখনকার বাংলা সিনেমা দেখতেন না সে ভাবে। টেলিভিশনে ক্রিকেট-ফুটবল, নিউজ় দেখার আগ্রহ ছিল।’’
‘যে জীবন ফড়িংয়ের’ এ নামেই আত্মজীবনী লিখেছিলেন চিন্ময় রায়। তাতে তিনি লিখেছিলেন,
“উত্তমদা প্রথম দিনই তুই বলে আপন করে নিলেন। বললেন, অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে মাঝে মাঝে হাতে তালি দিবি, ছোটদের মতো। বোবাদের একটা শিশুসুলভ সরলতা থাকে, জানিস তো। পাশ থেকে মানিকদা গম্ভীর গলায় বললেন, ঠিকই বলেছে উত্তম।”
সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের ভূমিকায় উত্তমকুমার। চাকর পানুর ভূমিকায় চিন্ময় রায়। সিনেমা আর নাটকের হাজারো স্মৃতি নিয়ে নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন চিন্ময়, ওরফে ফড়িং। বাংলার কমেডিয়ানের পুরোদস্তুর আত্মজীবনী। বাংলার কিংবদন্তি সব কমেডিয়ান নবদ্বীপচন্দ্র হালদার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ কিংবা অনুপকুমার আত্মজীবনী লেখেননি এঁদের কেউই। সেই ঘটনাটা ঘটিয়েছিলেন চিন্ময় রায়। চুপিচুপি আত্মজীবনী লিখে পরম বিনয়ের সঙ্গে তার নাম দিয়েছিলেন ‘যে জীবন ফড়িংয়ের’ (সপ্তর্ষি প্রকাশন)।
আপাত দৃষ্টিতে চলচ্চিত্রের ব্যক্তি হলেও, শুরুটা কিন্তু তাঁর মঞ্চে। রীতিমতো গ্রুপ থিয়েটার থেকে বেড়ে ওঠা অভিনেতা। ‘নান্দীকার’য়ের প্রথম ভাঙনের সাক্ষী তিনি।
আত্মজীবনীতে লিখছেন, “আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। এখন বুঝি সেটা বড় ভুল ছিল। আমরা ন’জন একদিনের একটা মিটিং ডেকে ‘নান্দীকার’ ছাড়লাম। অনেকগুলো কারণ আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে ফাটল আনছিল।”
কী সেই কারণ? চিন্ময় জানিয়েছেন, মায়া ঘোষের সঙ্গে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাদা রিহার্সাল, ওঁর একনায়কতন্ত্র এ সব মিলিয়ে তাঁদের তখন ‘রক্ত গরম’। ফলে দল ছাড়েন তাঁরা।
তিনি লিখেছেন, “কারণ দেখালাম অজিতেশদার সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক পার্থক্য। নাহ্! অনবদ্য সংলাপস্রষ্টা অজিতেশদা সেদিন কোনও কথা বলেননি। শুধু নীরবে বিদায় দিলেন। নান্দীকারে প্রথম ভাঙন। আমরা ১৯ জন অর্থাৎ বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, অজয় গাঙ্গুলি, আমি আর বাকিরা মিলে গড়ে তুললাম থিয়েটার ওয়ার্কশপ।”
পরে কিন্তু অনুতাপ হয়েছে। চিন্ময় লিখেছেন কী ভাবে সব সময় পুরনো দল আর অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মিস’ করতেন। “মনে হত, নাহ্! এ ভাবে দলটা ছাড়া একদম ঠিক হয়নি। কারণ ব্যক্তিগত ঝামেলা ইগো, এই সব গণ্ডি ভেঙে যদি দলটার কথা ভেবে অজিতেশদার পাশে থাকতাম, তা হলে ‘নান্দীকার’ আজ ভারতের শ্রেষ্ঠ দল হত।”
প্রথম ছবি। ‘গল্প হলেও সত্যি’। আত্মজীবনীতে লিখেছেন তাঁর গল্পও, “রুপোলি পরদা, স্বপ্নের জগৎ, ম্যাট্রিকে থার্ড ডিভিশনে পাশ করা সেই আমি কখনও ভাবিনি যে সিনেমায় কাজ করব। হাজারো লোক আমায় দেখবে, ছুঁতে চাইবে। সেই বাপে খেদানো-মায়ে তাড়ানো আমিই নাকি গেলাম সিনেমায় কাজ করতে। বাংলা চলচ্চিত্রে আমায় হাত ধরে এনেছিলেন তপনদা। তপন সিংহ।”
অভিনয় আর শুটিংয়ের মজার অনেক গল্পও ছড়িয়ে আছে ফড়িংয়ের ঝুলিতে। বৈজয়ন্তীমালাকে নিয়ে গল্পটি যেমন। তিনি লিখছেন, “হাটে বাজারে। বড় চরিত্র। কিন্তু সেখানেও হাফপ্যান্ট পরা হাসপাতালের বেয়ারা। … আমার জন্য একটা গান ছিল। … আগে আগে ননদি চলে পিছে ননদৈয়া … গানের সঙ্গে বৈজয়ন্তীমালার নাচের রিহার্সালও শুরু হল। ওহ্ কী আসাধারণ ফুটস্টেপিং। আমি হাঁ করে তাকিয়ে দেখতাম।”
রিহার্সালে বৈজয়ন্তীমালা নাকি একদিন তাঁকে বলেছিলেন, “হরবখত কেয়া দেখতে হো তুম?” চিন্ময়ের উত্তর ছিল, “আপনার নাচ। যে নাচে সঙ্গম-এ রাজ কপূরকে হারিয়েছিলেন।” এর পরেও সেই ‘হাঁ করা ভাবটা’ যায় না। তাই দেখে বৈজয়ন্তী বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, তুমি আরও কিছু বলবে।” চিন্ময় লিখছেন, “আমি আমতা আমতা করে বলে ফেলি, আপনার কোমরটা একটু টাচ করব? আপনাকে দেখলে মনে হয় অজন্তার মূর্তিগুলো প্রাণ পেয়েছে। হা হা করে হেসে বললেন, তোমাকে টাচ করতে হবে না, আমিই টাচ করিয়ে দেব।”
দৃশ্য গ্রহণের দিন। বৈজয়ন্তীমালা নাচতে লাগলেন। সঙ্গে চিন্ময়ের গলায় সেই গান। হঠাৎ ‘মেরি পিছে সাঁইয়া’য় এসে বৈজয়ন্তী চিন্ময়ের কোমরে বিশাল এক ধাক্কা মারলেন তাঁর কোমর দিয়ে। আবার নাচতে লাগলেন। “আমি হাঁ, কী সাংঘাতিক ব্যালান্স। … এর পরে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালেই লোকে জিগ্যেস করত, কী হল? আমি বলতাম, বৈজয়ন্তীমালা কোমরে ধাক্কা দিয়েছেন। সেই স্মৃতিটাকে ধরে রাখছি।” লিখেছেন চিন্ময়।
স্মৃতি শুধু এমন মজার নয়। বেদনারও। থাকছে বিতর্কের সম্ভাবনা। কোনও রাখঢাক না রেখে পরিষ্কার জবাব দিয়েছেন তাঁকে ঘিরে অনেক বেসামাল সওয়ালেরও।
এক সময় সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে চিন্ময় রায়ের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কানাঘুষো উঠত সিনেমা পাড়ায়। তিনি খোলামেলা সেই প্রসঙ্গেও। লিখেছেন, “আমার হাত ধরেই ওর এ জগতে আসা। স্বামীভাগ্য বড় খারাপ ছিল ওর। মারধর, অপমান লাঞ্ছনা ছাড়া স্বামীর থেকে আর কিছু পায়নি মেয়েটি। … আমিই ওকে দীনেন গুপ্ত আর তপনদার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।” এর পর দীনেন গুপ্তর সঙ্গে সুমিত্রার সম্পর্ক ঘিরেও মুখ খুলেছেন তিনি। লিখেছেন, “প্রায় সব ছবিতে সুমিত্রা পর পর হিরোইন হয়েছে। … দীনেনদা সুমিত্রাকে ব্যবহার করতেন লালসা মেটাতে এমন অনেক গল্প চালু ছিল মিডিয়ায় যাই হোক সে তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমায় ঘিরে গুঞ্জন বাড়তেই থাকল।”
আর জুঁইদেবী? না, তাঁর সম্পর্কে বড় রক্ষণশীল ফড়িং। আত্মজীবনীতে শুধু লিখেছেন, “বালিকা বধূ ছবিতে প্রথম দেখেছিলাম জুঁইকে। ননীগোপালের বিয়ে ছবিতে কাজ করার সময় প্রেম নিবেদন করি। আমার মতো চেহারার এক মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছিল। আমরা বিয়ে করলাম। সব কেমন হারিয়ে গেল সুখে চলতে চলতে। পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এর বেশি আর বলতে পারব না। জুঁই চলে যাওয়ার পর যে অবসাদ আমায় ঘিরে রেখেছে তা থেকে আমি বেরোতে চাই।”
নিজের অভিনয় জীবনের শুরু নিয়ে নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন,
‘‘এ সেই ষাটের দশকের কলকাতার কথা। তার চলচ্চিত্র-জগতে এক দিকে যেমন ক্ষণজন্মা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভিড়, তেমনি টালিগঞ্জ আলো করে রয়েছেন কিংবদন্তি সব পরিচালক। এঁদের একটা চমৎকার অভ্যাস ছিল। খুব নাটক দেখতেন। কোথাও কোনও ছেলে বা মেয়ের অভিনয় ভাল লাগলেই তাকে ডেকে নিজেদের ফিল্মে সুযোগ দিতেন। এখনকার পরিচালকদের মধ্য থেকে এই স্বভাবটা একেবারে উবে গিয়েছে। এখন আর সে ভাবে মুক্তো খোঁজে না এরা। যাকগে। সেই সময়ে আমি নান্দীকার-এর হয়ে দুটো নাটকে অভিনয় করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছি। ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র’ আর ‘মঞ্জরী আমার মঞ্জরী’। নির্মলকুমারের কথায় এই পরের নাটকটা দেখতে এসেছিলেন তপন সিংহ। একটু খুচরো ধরনের চেহারা ছিল আমার, তাই সেই নাটকে চাকর সাজতাম। নাটক দেখে, সিংহমশাই তাঁর সহকারী পলাশকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আচ্ছা ওই যে রোগা মতো ছেলেটা, তুমি ওকে চেনো? সুন্দর অভিনয় করল তো!’ পলাশ আমারই বন্ধু, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। সে দৌড়তে দৌড়তে এসে খবর দিল, আমাকে তপন সিংহ ডেকেছেন। আমি তো লাফিয়ে উঠলাম।
সত্যি বলতে কী, সত্যজিৎ রায় অন্য দুনিয়ার মানুষ। কিন্তু সিনেমা-জগতে তাঁর ঠিক পরেই যাঁদের স্থান, তাঁদের মধ্যে তপন সিংহ সামনের সারিতেই থাকবেন। মানিকদার আগে থাকতেই তিনি বিখ্যাত। সত্যজিৎ-জমানার পরেও সে খ্যাতি টোল খায়নি। এমন মানুষ আমাকে ডেকেছেন শুনে আনন্দ যে কোথায় রাখব তাই ভেবে কূল পাই না।
তার পর তো গেলাম। পরিচালক আমাকে বললেন, ‘খুব ছোট চরিত্র আছে একটা। করবেন?’ চিত্রনাট্য শোনালেন যত্ন করে। সিনেমার নাম ‘গল্প হলেও সত্যি’। একান্নবর্তী পরিবারের কাহিনি। বড়, মেজ, সেজ, ছোট ভাই, তাঁদের গিন্নি। মেলা চরিত্র। অভিনয়ে কেউকেটার দল। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ছায়া দেবী, ভারতী দেবী। আমি এক জন চাকরের চরিত্রে। বাড়ির সব কর্তা-গিন্নিরা মিলে সেই চাকরের ইন্টারভিউ নেবেন। চরিত্রটা আমার বেশ মনে ধরল।
আমি অনেক চাকরকেই খুঁটিয়ে লক্ষ করেছি। আমার রিহার্সাল দেখেই ভারী খুশি হলেন তপনদা। বললেন, এ ভাবেই কোরো।
এ বার ক্যামেরার সামনে। চাকরের ইন্টারভিউ বোর্ডে তো নক্ষত্ররা সার সার দাঁড়িয়ে। নার্ভাস হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল যথেষ্ট। কিন্তু তত দিনে আমি নাটক করেছি, ওয়ার্কশপও করেছি প্রচুর। তাই ঘাবড়াইনি। এই প্রশ্নোত্তরের পর্ব এমন সুন্দর ডায়লগ দিয়ে মোড়া যে আপনাআপনিই ভাল অভিনয় বেরিয়ে আসে। চাকরটা তো চ্যাংড়া। আমি তাই ডায়লগ ডেলিভারি করলাম চালু শ্যামবাজারি ঢঙে। একটু ‘স’ ‘স’ করে। আমাকে তো বলেই যাচ্ছে, ‘তোমাকে সায়া-সেমিজ কাচতে হবে, বড়কর্তার ধুতিও। বাটনা বাটতে হবে, বাসন মাজতে হবে।’ আর আমি বলছি, ‘লব্বই টাকায় এতগুলো কাজ! ও দিকে আমায় দুসো টাকার চাকরি নিয়ে সাধাসাধি করছে।’ একান্নবর্তী পরিবার। বউরা সব নিজের কাজ অন্যের ঘাড়ে ফেলতে ব্যস্ত। তাদের লিস্টি শুনে আমি একটু ব্যঙ্গ মিশিয়ে তেরছা ভাবে বলছি, ‘আপনাদের বাড়িতে কি কেউ কাজকম্ম করে না?’
দৃশ্য শেষ হতেই প্রত্যেকে এসে আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেলেন। আমি ছায়া দেবীর বিশাল ভক্ত ছিলাম। তিনি এসে আমাকে বললেন, বাবা, আপনি অভিনয়টা ছাড়বেন না। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় যেই না শুনলেন আমিও ও-পার বাংলার, হইচই বাঁধিয়ে দিলেন। বাঙাল বলে তাঁর ভারী গর্ব ছিল বরাবর। আমাকে বললেন, ‘ঢাকার পোলা ট্যালেন্টেড হইবই। নাম করবই। চলে আয় বাসায়।’ ফ্লোরে প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিম ঘোষ, ভারতী দেবীর সঙ্গেও আলাপ হল। আর ছিলেন রবি ঘোষ। তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, ‘চলে আসিস। তোর সঙ্গে কথা আছে।’
উৎপল দত্তর একটা নাটকে রবিদা দুরন্ত অভিনয় করেছিলেন। তখন আমি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের খুব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। ফ্লোরে রবিদার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম নাটকের অফার আছে। কিন্তু তখন আমি সেটা করতে পারিনি। পরে অবশ্য কলকাতা জুড়ে প্রচুর বাণিজ্যিক নাটক করেছি, যাত্রাও করেছি এক বছর। রবিদার পরিচালনায় ‘বিবর’ নাটকেও অভিনয় করেছি। খুব জনপ্রিয় ছিল সেই নাটক। তত দিনে আমিও ‘চিন্ময় রায়’ হয়ে গিয়েছি। মঞ্চে এলেই দর্শকদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যেত।
প্রথম রিলিজের সময় ‘গল্প হলেও সত্যি’ এতটা হিট করেনি। তবে আবার রিলিজ হতেই একেবারে ইতিহাসে ঢুকে গেল সিনেমাটা। রবিদা খুব নাম করলেন। আমিও টুকরো নাম করলাম। ওই সূত্রে তপনদার পরের ছবিতেও অভিনয়ের সুযোগ এল। ‘হাটে-বাজারে’। তার পর ‘আপনজন’, ‘সাগিনা মাহাতো’, ‘এখনই’। দর্শকের মন জয় করে ফেললাম। নাটক ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে সিনেমায় মন দিলাম। হাতে টাকাও আসতে লাগল। প্রথমে নিজের খরচাটুকু, তার পর সংসারও চালাতে পারলাম ভাল ভাবে।
তখন আমি থাকতাম সিঁথিতে। সকাল দশটায় কলটাইম থাকলে, দু’ঘণ্টা আগে, সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেরোতাম। শ্যামবাজার থেকে রাসবিহারী আসতাম ডবল ডেকার বাসে। তার পর সেখান থেকে ট্যাক্সি করে পৌঁছতাম এনটি ওয়ান স্টুডিয়োয়। তপনদা বেশির ভাগ শুট ওখানেই করতেন। ‘গল্প হলেও সত্যি’তে আমার তেমন একটা মেক-আপ লাগত না। একটা হাফ-প্যান্ট পরে অভিনয়ে নেমে পড়তাম।
এই বাস-ট্যাক্সি চড়া নিয়ে একটা সত্যি গল্প আছে। ‘হাটে-বাজারে’ মুক্তি পাওয়ার পর দেখলাম লোকে আমাকে চিনতে পারছে। এক বার শ্যামবাজার থেকে নয় নম্বরের ডবল ডেকার বাসে চড়ে যাচ্ছি, কয়েক জন আমারই মতো রোগা লোক সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল। দেখে খুব একটা শিক্ষিত মনে হল না। সটান আমাকে জিগ্যেস করল, আপনি কি হাটে-বাজারে’তে পার্ট করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ ভাই, করেছি। ওরা বলল, আপনার চেহারা তো ভাল নয়, তবে সিনেমায় রোল পেলেন কী করে? আপনি কি তপন সিংহের বাড়ির বাজার করে দেন? সে দিন আমি পণ করেছিলাম, আর জীবনে কোনও দিন ট্যাক্সি ছাড়া বাসে চড়ব না।”
চিন্ময়ের চলে যাওয়া মানে একটা যুগের অবসান। অভিনেতা শ্রী দীপঙ্কর দে, ‘সমাধান’, ‘অন্তর বাহির’-সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে চিন্ময় রায়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘উনি শুধু আমার সহকর্মী ছিলেন না, বন্ধুও ছিলেন। ওঁর অভিনীত চরিত্রগুলোর মতোই মজার মানুষ ছিলেন। অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম, অসুস্থ। আমাদের সময়ের এক-এক জন করে চলে যাচ্ছেন। মন খারাপ হয়ে যায়।’’
অভিনয়ই কেরিয়ার হয়ে উঠবে, এ কখনও ভাবেননি চিন্ময় রায়। সাদামাটা চেহারা নিয়েও যে অভিনেতা হওয়া যায়, যাঁরা এ সত্য প্রমাণ করেছেন চিন্ময় তাঁদের মধ্যে অন্যতম। চিন্ময়ের প্রয়াণের পরে তাঁর সাথে কাজের স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছিলেন পরিচালক শ্রী তরুণ মজুমদার। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ঠগিনী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘অমরগীতি’, ‘আগমন’-এর মতো ছবিতে তরুণের পরিচালনায় অভিনয় করেছিলেন চিন্ময়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘চিন্ময়ের সম্পর্কে প্রথমেই যে কথাটা বলব, ডিসিপ্লিন। খুব ডিসিপ্লিনড অভিনেতা। আসলে মঞ্চ থেকে শুরু করেছিল তো। তাই তৈরি ছিল সে সবে। আবার যখন যেমন প্রয়োজন তেমন ভাবে সিনেমায় অভিনয়ের ধারা বদলে নিয়েছিল। ও যেখানেই থাকত খুশি রাখত সকলকে। চারপাশটা আলো করে রাখত।’’
’৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘বসন্ত বিলাপ’। শুটিং হয়েছিল মেদিনীপুরে। একটি দৃশ্যে ক্যামেরায় ধরা হয়েছিল পাড়ের পাঁচিলে উঠে পুকুরে ঝাঁপ মারছেন চিন্ময় রায়। পুকুরে ঝাঁপ মারার আগেই চিন্ময়-শিবানীর প্রেমের দৃশ্যটা। “ওই পুকুরপাড়ে বসে শিবানীকে আমি বলব: ‘আমাকে একবার বলো উত্তমকুমার।’ শিবানী তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলবে: ‘উত্তমকুমার’। শ্যুটিংয়ে শুরু হল, আমি আমার ডায়ালগ ঠিক বলছি, কিন্তু শিবানী শুধু ‘উত্তমকুমার’ কথাটা কিছুতেই বলতে পারছে না, আর শট এন-জি হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে ক্রমশই ভিড় বাড়ছে, শ্যুটিংয়ে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। বললাম ‘বি সিরিয়াস শিবানী, আমাদের সিকোয়েন্সটাই কিন্তু বাদ পড়ে যাবে।’ এবারে শিবানী ঠিকমতো বলল। পরে শিবানীকে প্রশ্ন করে বুঝলাম আমাকে ‘উত্তমকুমার’ কল্পনা করে কথাটা বলতে হচ্ছে তো, তাই হোঁচট খাচ্ছিল!” পরে নিজের স্মৃতিচারণে জানিয়েছিলেন চিন্ময় রায়। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, “হঠাৎ খেয়াল হল আমাদের জুটিটার কোনও রোমান্স-সিন নেই। খোকাদা আমায় বললেন — তুই কিছু একটা ভেবে ফেল, ডায়ালগও লিখে ফেলতে পারিস তেমন মনে হলে, তারপর আমি সিকোয়েন্সটা সাজিয়ে নেব নিজের মতো করে।” তিনি লিখেছেন, “অত বছর আগের কথা, ঠিকঠাক মনে নেই আর, তবে আউটডোরের কথা জানতে চাইছেন তো, প্রবল ভিড়ে শ্যুটিংয়ে প্রায় না-হওয়ার জোগাড়। সৌমিত্র-অপর্ণা তো বটেই, আমাদের সকলের জন্যেও বললে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না, অসম্ভব ভিড় হয়েছিল। কোনও কাজই করা যাচ্ছিল না।”
‘বসন্ত বিলাপ’ – চিন্ময়বাবুর ‘খোকাদা’ ওরফে দীনেন গুপ্ত পরিচালিত এ-ছবিতে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-অপর্ণা সেন, রবি ঘোষ-কাজল গুপ্ত, অনুপ কুমার-সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়-শিবানী বসু। আর ছিলেন তরুণকুমার, হরিধন মুখোপাধ্যায়, কণিকা মজুমদার, আরও অনেকে। “খোকাদার খুব বেশি আউটডোর করার ইচ্ছে থাকলেও ভিড়ের চাপে করা যায়নি। আউটডোর লোকেশন-এর আদত জায়গাগুলোর সেট তৈরি করা হয়েছিল কলকাতার ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে।” নিজের স্মৃতিকথায় জানিয়েছিলেন চিন্ময় রায়।
‘বসন্ত বিলাপ’ ছবিতে প্রেমিকার উদ্দেশে চিন্ময়ের সেই সংলাপ, ‘এক বার বলো উত্তমকুমার …’ তাঁর উত্তমকুমার হওয়ার দরকার পড়েনি। দর্শকের মনে তিনি চিন্ময় রায় হয়েই থেকে যাবেন।
(তথ্যসূত্র:
১- যে জীবন ফড়িঙের, চিন্ময় রায়, সপ্তর্ষি প্রকাশন (২০১৪)।
২- চৌরঙ্গী পত্রিকা, চিন্ময় রায় সংখ্যা, আষাঢ় ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
৩- আনন্দবাজার পত্রিকা: ১৮ই মার্চ ও ১৯শে মার্চ ২০১৯ সাল।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত