গত বছরের ১৭ নভেম্বর দেশের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন রঞ্জন গগৈ। তবে তার চার মাস কাটতে না কাটতেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করেছেন রাষ্ট্রপতি। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, রাজ্যসভার এক সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের অনুমোদনে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভার সদস্য করা হচ্ছে। গগৈয়ের এই মনোনয়ন নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি।
বিরোধীরা যেমন একযোগে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তেমনি বিচারব্যবস্থার মধ্যে থেকেও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা হচ্ছে। বিচারপতি গগৈয়ের রাজ্যসভা মনোনয়নের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন তাঁরই একসময়ের সহকর্মী তথা প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুর। বিরোধীদের অভিযোগ, বিচারপতি থাকাকালীন সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন গগৈ। আর এখন তারই পুরষ্কার পাচ্ছেন। মদন লোকুর সরাসরি সেকথা না বললেও, তাঁর ইঙ্গিতও খানিকটা তেমনই। তাঁর প্রশ্ন, ‘শেষ দুর্গটাও কি ভেঙে পড়ল?’ এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকালে মুখ খুললেন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। এদিন গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গগৈ বলেন, ‘সম্ভবত আমি কাল দিল্লী যাব। আগে আমাকে শপথ নিতে দিন তারপর আমি সংবাদমাধ্যমের সামনে সব বলব যে, কেন আমি রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করলাম।’
প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অসংখ্য মামলার রায় দিয়েছেন গগৈ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিন তালাক প্রথা বন্ধ, অযোধ্যা মামলা এবং কেরলের শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে রিভিউ মামলার রায়। তিন তালাক প্রথা বন্ধ করায় সেই সময় দেশজুড়ে প্রশংসা হয়েছিল গগৈয়ের। অবসর নেওয়ার ঠিক আগেই ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় দেন রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। এর ফলে বহু বছর ধরে চলতে থাকা অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি হয়। এছাড়াও তাঁর নির্দেশেই অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ তথা এনআরসির কাজ শুরু হয়। সেই সময়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হলে গগৈ বলেছিলেন, এনআরসি শুধু নথী নয়, আগামীর ভিত্তি।
যদিও অবসরের পর বিচারপতিদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ নতুন কিছু নয়। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই আরেক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমকে কেরালার রাজ্যপাল বানিয়ে দিয়েছিল। বিস্তর শোরগোল হয়েছিল তখন। প্রাক্তন কোনও প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভায় পাঠানোর নজিরও রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কংগ্রেসের হয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন। তবে সেটাও অবসরের বছর সাতেক পরে। যেখানে অবসরের মাত্র ৪ মাস পরেই রাজ্যসভায় যাচ্ছেন গগৈ। এছাড়াও আরও অনেক বিতর্ক রয়েছে তাঁকে নিয়ে। প্রধান বিচারপতি থাকা কালে গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন তাঁরই দফতরের এক কর্মী। এই নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চও বসানো হয়। কিন্তু সেখানে জানানো হয়, গগৈয়ের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যে। আবার আরেক প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুও তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে অত্যন্ত কঠোর মন্তব্য করেছিলেন।