মেয়ে চিকিৎসক। এই মুহূ্র্তে দিল্লীর কস্তুরীবাগ হাসপাতালে কর্মরত। করোনা সংক্রমণ নিয়ে সংকটকালে জনসেবার ব্রতে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু বসিরহাটের দক্ষিণ মথুরাপুর গ্রামে সেই খবর পৌঁছল সম্পূর্ণ অন্যভাবে। পাড়া-প্রতিবেশীরা ভাবলেন, ডাক্তার মেয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত। তাই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ওই পরিবারকেই একঘরে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় জনসচেতনা বাড়াতে বারবার গুজবে কান না দেওয়ার বলা হলেও, লাভ যে বিশেষ হচ্ছে না, এটাই তার প্রমাণ।
গত জুন মাসে চীন থেকে ডাক্তারি পাশ করে দেশে ফিরেছেন খোলাপোতার মেয়ে ঋতুপর্ণা মণ্ডল। এমসিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখন দিল্লীর কস্তুরীবাগ হাসপাতালে তিনি কর্মরত। সম্পূর্ণ সুস্থ দেহে সেখানে ডাক্তারি করছেন। অথচ তাঁর গ্রাম খোলাপোতা ও লাগোয়া এলাকায় রটে গেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ঋতুপর্ণা। তাই তাঁদের খোলাপোতার বাড়িতে আসা বন্ধ করেছেন প্রতিবেশীদের অনেকেই। প্রতিনিয়তই তাঁদের পড়তে হচ্ছে নানান অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে। এমনকি তাদের বাড়ির পরিচারিকাকেও কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ঋতুপর্ণা যে দিল্লীর হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন, তা শুনেই প্রতিবেশীরা ভেবেছেন যে মেয়ে নিজেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তাই দিনরাত ফোন করে সবাই ঋতুপর্ণার খোঁজ নিচ্ছেন। কথা বলার সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তাঁর পরিবারের সংস্পর্শ যে এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিবেশীরা, তা বেশ টের পেয়েছেন মা, বাবা, বোন। বারবার তাঁদের সেই ভুল ধারণা ভাঙানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকী একথা শোনার পর ঋতুপ্রণা নিজে ভিডিও বার্তায় সকলের উদ্দেশে জানিয়েছেন, “গুজবে কান দেবেন না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, আমার কর্মস্থলে রয়েছি। যাঁরা এই ধরনের গুজব রটাচ্ছেন, তাঁরা সম্পূর্ণ না জেনেই করছেন।”
ঋতুপর্ণার বাবা তিলক মণ্ডল পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। মা রেণুকা মণ্ডল ধান্যকুড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুপারভাইজার। রেণুকাদেবী বলেন, “সারাক্ষণ ওর বাবার কাছে, আমার কাছে ফোন আসছে, সবাই জানতে চাইছেন আমাদের বড় মেয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না? পড়শিদের অনেকেরই বদলে যাওয়া ব্যবহার। রীতিমতো বিপন্ন লাগছে। যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক।”